শোভন-রত্না বিবাহবিচ্ছেদের কাহিনি আদালতের রায়ে অনিশ্চয়তা বজায়

শোভন-রত্না বিবাহবিচ্ছেদের কাহিনি আদালতের রায়ে অনিশ্চয়তা বজায়

আট বছরের লড়াই শেষে খারিজ হলো মামলা

কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছিলেন। আট বছরের দীর্ঘ লড়াই শেষে, শুক্রবার আদালত শোভনের আবেদন খারিজ করে দেন। রত্না তাঁর পক্ষ থেকে একত্রবাসের আর্জি করেছিলেন, যা আদালত মঞ্জুর করেননি। ফলে শোভন বিবাহবিচ্ছিন্ন হননি, আর রত্নাও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একত্রবাস করতে পারলেন না।

শোভনের ব্যক্তিগত জীবন ও বৈশাখীর অবস্থান

রায়ের পর শোভনের জীবনে স্থিতাবস্থা বজায় থাকে। তিনি নিজের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেমন থাকেন, তেমনই থাকতে পারবেন। যদিও রত্নার নাম আইনত শোভনের স্ত্রী হিসাবেই থাকবে। অর্থাৎ আদালতের রায় কোনো দিক থেকেই শোভনের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে পুরোপুরি স্পর্শ করেনি।

রত্নার জয়, নারীর ক্ষমতার প্রতীক

রায় ঘোষণার পর রত্না কোর্টচত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আট বছর ধরে যে লড়াই করেছি, তার জয় হল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলারা প্রায়ই ক্ষমতার কাছে হেরে যান। আমি সব নারীর হয়ে এই জয় অর্জন করেছি।’’ রত্না এই ব্যক্তিগত জয়কে সামাজিক বৃত্তেও প্রতিফলিত করেছেন, যাতে প্রতিটি নারী অনুপ্রাণিত হয়।

ঋষির আবেগময় বার্তা

শুভ খবর পেয়ে শোভন-রত্নার পুত্র ঋষি চট্টোপাধ্যায়ও খুশি হয়েছেন। তিনি এই জয়কে শুধু পরিবারের নয়, গোটা দেশের ‘নিপীড়িত’ মহিলাদের জয় হিসাবেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। বাবার উদ্দেশে ঋষি বলেন, ‘‘প্লিজ পাপা, কামব্যাক পাপা। নাথিং ইজ টু লেট। উই উইল ফিক্স ইট।’’ ট্যাটু ভরা দু’হাত তুলে তিনি বাবাকে ফেরার আবেদন জানান।

আদালতের পথে উত্থান-পতন ও শোভনের অভিযোগ

শোভন-রত্নার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা এক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। হাই কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছানো এই মামলাটি পরে নিম্ন আদালতে ফেরত যায়। শোভনের পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়, রত্না বেহালার পরিচিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিলে হুমকি দিয়েছেন। পাল্টা রত্না জানান, ‘‘এমন কথা পাগল হলেও বিশ্বাস করবে না কেউ।

আদালতের রায়ে আইনগত স্থিতি বজায়

শেষ পর্যন্ত শোভন বিবাহবিচ্ছিন্ন হতে পারলেন না। আদালতের রায়ের মাধ্যমে বিবাহবন্ধন থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। শোভনের স্থিতি, রত্নার আইনগত স্বীকৃতি—সবই একইভাবে বজায় থাকে। এই রায় অনেককেই বিস্মিত করেছে, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে চলা মামলার প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন।

বিচারকের সিদ্ধান্ত ও সামাজিক প্রভাব

আদালতের রায় শুধু ব্যক্তিগত জীবনের নয়, সামাজিক প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলেছে। রত্নার জয় নারীর ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ধরা হচ্ছে। এটি দেখায়, দীর্ঘ লড়াই এবং ধৈর্যের মাধ্যমে নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারেন।

বিচ্ছেদের মামলা নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব

শোভনের পক্ষে শেষ পর্বে সওয়াল করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক চাপে থাকা এই মামলা হাই কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে রায়ের প্রভাব শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং রাজনৈতিক মহলে তৃতীয় পক্ষের নজরেও এসেছে।

রায় ঘোষণার পর পরিবারের প্রতিক্রিয়া

রত্না রায় ঘোষণার পরে পর্ণশ্রীর বাড়িতে ফিরে যান। শোভনের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি। তবে পুত্র ঋষির আবেগময় বার্তা বাবার প্রতি প্রত্যাশা এবং পরিবারের ঐক্যের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। রায়ের মাধ্যমে পরিবারে সামান্য হলেও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।

দীর্ঘ পথের সমাপ্তি ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন

অষ্ট বছরের মামলা শেষে আদালতের রায় দিচ্ছে সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত নতুন দিক। যদিও শোভন ও রত্নার ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা একই রকম আছে, পরিবারের সদস্যদের জন্য এটি নতুন সূচনা। ভবিষ্যতে শোভন কি পুত্রের ডাকে সাড়া দেবেন, তা এখনও অনিশ্চিত।

সংক্ষিপ্তভাবে রায়ের প্রভাব

শোভন-রত্নার মামলার রায় ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক তিন ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে। নারীর ক্ষমতা, পরিবারিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক প্রতিফলনের দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ লড়াই শেষে আদালতের রায় একটি স্থিতিশীল অবস্থা প্রদান করেছে, যা ভবিষ্যতে পরিবারের সম্পর্ক ও সামাজিক বার্তা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment