সোনার বিকল্প হিসেবে রুপোর উত্থান
২০২৫ সালে রুপোর দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। কোটাক মিউচুয়াল ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার সতীশ দোন্ডাপতি জানিয়েছেন, সোনার বিকল্প হিসেবে রুপোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। সিলভার ইটিএফ এবং ফান্ড অফ ফান্ডস (FOF) রুপোর সহজ অ্যাক্সেস দেয়, যা ভৌত মালিকানার ঝামেলা ছাড়াই বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক। ক্রমবর্ধমান শিল্প চাহিদা, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে হেজ হিসেবে রুপোর ভূমিকা এই উত্থানকে সমর্থন করছে।
শিল্পে রুপোর অপরিহার্যতা
রুপোর দাম ১৩ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এর প্রধান কারণ শক্তিশালী শিল্প চাহিদা এবং সরবরাহ সীমাবদ্ধতা। রুপো বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সৌর প্যানেল, তার, সেন্সর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা ক্যান্টারের মতো প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী চাহিদার অর্ধেকের বেশি এখন শিল্পের থেকে আসে। পরিবেশবান্ধব শক্তি ও প্রযুক্তির প্রসার এই চাহিদাকে আরও বৃদ্ধি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।
সরবরাহ চ্যালেঞ্জ ও বাজারের প্রভাব
রুপোর সরবরাহগত সীমাবদ্ধতা এর দৃষ্টিভঙ্গি আরও উজ্জ্বল করছে। টানা পঞ্চম বছর বাজার সরবরাহ ঘাটতির মুখোমুখি। চাহিদা প্রায় ১৪৯ মিলিয়ন আউন্সের বেশি, যা সরবরাহকে ছাড়িয়ে গেছে। ব্যয়, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে পুনর্ব্যবহারের প্রচেষ্টা স্থবির, এবং আকরিক মান হ্রাস ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা রুপোর সরবরাহ শৃঙ্খলকে চাপে ফেলেছে। বিশেষ করে মেক্সিকো ও চীনের মতো প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলোতে এই চ্যালেঞ্জ বেশি।
সোনা-রুপোর অনুপাত ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
রুপোর বিনিয়োগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো সোনা-রুপোর অনুপাত। এটি ১০০-এর বেশি থেকে কমে প্রায় ৮৯-এ দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এই অনুপাত গড়ে ৬০-এর কাছাকাছি থাকে, যা নির্দেশ করে যে রুপোর এখনও অবমূল্যায়ন রয়েছে। যদি অনুপাত সংকুচিত হয়, প্রতি আউন্সের দাম ৪২ ডলার থেকে ৪৮ ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা ২০১১ সালের সর্বোচ্চ ৫০ ডলারের নিচে।
বিনিয়োগকারীর জন্য সতর্কতা
রুপো উত্তেজনাপূর্ণ সুযোগ দেয়, কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এর অস্থিরতা, সুদের হারের সংবেদনশীলতা এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈচিত্র্যময় ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পদ্ধতি এই ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় সহায়ক।
রুপোর দ্বৈত পরিচয়
রুপো শুধু মূল্যবান ধাতু নয়, শিল্পের অপরিহার্য উপাদান। এর চলমান সরবরাহ চ্যালেঞ্জ, শিল্প চাহিদা ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এটিকে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের দৃশ্যপটে বিশেষ স্থান দিয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারীর মতে, এটি পরবর্তী সোনার সমতুল্য হতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতি ও রুপোর প্রভাব
গ্লোবাল বাজারে রুপোর অবস্থান অর্থনীতির বিভিন্ন প্রভাবের সঙ্গে সংযুক্ত। মুদ্রাস্ফীতি, আন্তর্জাতিক উত্তেজনা এবং প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে এটি সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রুপোর চাহিদা শুধু শিল্পের কারণে নয়, বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে এর জনপ্রিয়তার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংক্ষেপে বিশ্লেষণ
মূল্যবান এবং শিল্প ধাতু হিসেবে রুপোর দ্বৈত পরিচয়, সরবরাহ চ্যালেঞ্জ ও ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এটিকে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সতীশ দোন্ডাপতি বলেন, রুপো ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের দৃশ্যপটে সোনার শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে।