মধ্যপ্রদেশের সিঙ্গারোলি জেলা থেকে একটি বড় সাইবার প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ৩৪ জন বেকার যুবককে কোল ইন্ডিয়ার সহযোগী কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৫২ লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রতারকরা নিজেদেরকে এনসিএল (নর্দার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড)-এর সঙ্গে যুক্ত বলে পরিচয় দিয়ে যুবকদের বিশ্বাস অর্জন করে এবং ওবি (ওভারবার্ডেন) অপসারণকারী ঠিকাদার কোম্পানিতে ভালো বেতনের স্থায়ী চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়।
চাকরির আশায় থাকা যুবকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতারকরা নকল নিয়োগপত্র, ট্রেনিং লেটার এবং অন্যান্য জাল নথিও দিয়েছিল যাতে পুরো ব্যাপারটি বাস্তব মনে হয়। কিন্তু যখন নির্ধারিত সময়ে চাকরি মেলেনি, এমনকি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি, তখন যুবকরা বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হয়েছে।
গ্রামের যুবকই প্রতারণার জাল পেতেছিল
এই পুরো ঘটনায় সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রতারণাটি কোনো বহিরাগত করেনি, বরং সিঙ্গারোলি জেলার নওয়ানগর থানা এলাকার ভারুহা গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ সিং করেছে। অভিযুক্ত সন্দীপ তার নিজের গ্রাম এবং আশেপাশের ৩৩ জন যুবককে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বেশিরভাগই সন্দীপকে আগে থেকে চিনত, যার কারণে তারা বেশি সন্দেহ না করে তার উপর বিশ্বাস করে ফেলেছিল।
সন্দীপ যুবকদের আশ্বাস দিয়েছিল যে সে কলিঙ্গা নামের একটি কোম্পানিতে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাইয়ে দেবে, যা এনসিএলের জন্য ঠিকাদারি কাজ করে। শিক্ষিত যুবকদের অপারেটর বা ক্লার্ক এবং কম শিক্ষিতদের হেল্পার পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। যুবকদের কিছু নথিও দেখানো হয়েছিল, যাতে তাদের বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত সতীশ সিং-এর মতে, সন্দীপ এর আগেও অনেকবার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল এবং গ্রামের লোক হওয়ার কারণে সবাই তাকে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যখন চাকরি মেলেনি, কোনো আপডেটও পাওয়া যায়নি, এবং সন্দীপ টালবাহানা করতে থাকে, তখন সবার প্রতারিত হওয়ার সন্দেহ হয়। এরপর সব ক্ষতিগ্রস্ত প্রথমে নওয়ানগর থানায় যায়, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা সিঙ্গারোলি এসপি অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
বেকারত্বের সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকরা
সিঙ্গারোলি জেলায় কোল কোম্পানিগুলোতে চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতা কারও কাছে অজানা নয়। এখানকার যুবকরা ভালো বেতন এবং স্থায়িত্বের আশায় এই কোম্পানিগুলোতে কাজ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রাখে। এই আকাঙ্ক্ষার সুযোগ নিয়ে জাল চাকরি দেওয়ার চক্র জেলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই চক্রগুলোতে শুধু বাইরের লোকেরাই নয়, কিছু স্থানীয় লোকও জড়িত, যারা বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করা যুবকদের প্রতারণা করার কাজ করছে।
এই চক্রগুলোর নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে তারা জাল নথির মাধ্যমে যুবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়ার পর তারা উধাও হয়ে যায়, যার ফলে যুবকদের শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয় না, তাদের আত্মবিশ্বাসও ভেঙে যায়।
পুলিশের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য, থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরেও কোনো ठोस পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। অনেক যুবক এই বিষয়ে আগেও রিপোর্ট করেছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারের অফিসের দ্বারস্থ হয়েছেন।
প্রতারণা থেকে বাঁচতে সতর্কতা জরুরি
বেকারত্বের এই সময়ে যুবকদের প্রতিটি প্রস্তাব ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। কোনো ধরনের চাকরির বিনিময়ে যদি টাকা চাওয়া হয়, তাহলে সতর্ক হওয়া জরুরি। সরকারি বা স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চাকরি দেয়, কোনো এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে নয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে প্রতারণার সন্দেহ হলে, তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট থানা, সাইবার সেল বা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আপাতত, সিঙ্গারোলি পুলিশ বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্তের সন্ধানে দল গঠন করা হয়েছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে যুবকদের ন্যায়বিচার দেওয়া হবে।