এলআইসি-র বিমা সখী যোজনা: মহিলাদের আত্মনির্ভরতার নতুন দিশা

এলআইসি-র বিমা সখী যোজনা: মহিলাদের আত্মনির্ভরতার নতুন দিশা

দেশজুড়ে মহিলাদের আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে এলআইসি-র 'বিমা সখী যোজনা' একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষ বিষয় হল, এই যোজনায় দশম শ্রেণী উত্তীর্ণ মহিলারাও যোগ দিতে পারেন এবং তাঁরা শুধুমাত্র আয়ের উৎস পাচ্ছেন তাই নয়, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি স্থায়ী কর্মজীবনের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছেন।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এই যোজনায় এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৫ হাজার ৮৯৬ জন মহিলা যুক্ত হয়েছেন। এই মহিলাদের তাঁদের বাড়ি বা আশেপাশে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা তাঁদের পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি রোজগারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

প্রতি মাসে ভালো আয় হচ্ছে

বিমা সখী যোজনার সাথে যুক্ত মহিলারা প্রতি মাসে প্রায় ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এই টাকা তাঁরা প্রশিক্ষণকালে পাওয়া ভাতা এবং পলিসি বিক্রির উপর কমিশন হিসাবে পেয়ে থাকেন। যোজনা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই এলআইসি মহিলাদের মোট ৬২ কোটি টাকার বেশি অর্থ প্রদান করেছে।

বাজেটও ভারী, প্রস্তুতিও মজবুত

অর্থবর্ষ ২০২৫-২৬ এর জন্য এই যোজনার বাজেট ৫২০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় ১১৫ কোটি টাকা বিতরণও করা হয়েছে। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে এলআইসি এবং সরকার এই যোজনা নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এটি দেশজুড়ে প্রসারিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মহিলারা কীভাবে যোজনার সাথে যুক্ত হতে পারেন

এই যোজনায় অংশগ্রহণের জন্য মহিলার বয়স ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হতে হবে। দশম শ্রেণী উত্তীর্ণ মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নির্বাচিত মহিলাদের তিন বছরের একটি বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেখানে বিমা পণ্য, গ্রাহক পরিষেবা, আর্থিক সচেতনতার মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির উপর তথ্য দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণকালে প্রথম বছর ৭ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বছর ৬ হাজার টাকা এবং তৃতীয় বছর ৫ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়াও, পলিসি বিক্রির উপর আলাদা কমিশনও পাওয়া যায়, যা আয়কে আরও বাড়িয়ে তোলে।

বিমা এজেন্ট থেকে শুরু করে স্থায়ী চাকরি পর্যন্ত

বিমা সখী যোজনা শুধুমাত্র একটি স্বল্পমেয়াদী আয়ের উৎস নয়। প্রশিক্ষণের পর মহিলারা এলআইসি-তে অ্যাপ্রেন্টিস ডেভেলপমেন্ট অফিসার অর্থাৎ ADO হওয়ার দিকেও এগোতে পারেন। এর জন্য তাঁদের গ্র্যাজুয়েট হওয়া জরুরি। পাঁচ বছর পর্যন্ত কাজ করার পর ভালো পারফর্ম করা মহিলারা এই পদের জন্য আবেদন করার সুযোগও পান।

এক ঘর থেকে একাধিক মহিলারাও যুক্ত হচ্ছেন

এই যোজনার প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে অনেক জায়গায় একই পরিবারের দুই বা তিনজন মহিলাও এতে অংশ নিয়েছেন। মা-মেয়ে, শাশুড়ি-বউমা বা বোনেরা একসাথে তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় বিমা সখী হিসেবে কাজ করছেন। এতে পরিবারের মোট আয়ও বাড়ছে এবং সকলে কাজের ভারসাম্যও পাচ্ছেন।

গ্রামের মহিলারাও সুযোগ পাচ্ছেন

গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের এই যোজনার সাথে যুক্ত করার জন্য এলআইসি গ্রামীণ বিকাশ मंत्रालয়ের সাথে साझेदारी করেছে। গোয়ায় অনুষ্ঠিত 'অনুভূতি' নামক একটি জাতীয় সম্মেলনের সময় দুটি সংস্থা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর অধীনে বিমা সখী যোজনাকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

সমাজে তৈরি করছেন পরিচিতি

বিমা সখী হওয়ার পর মহিলারা তাঁদের সমাজে একটি আলাদা পরিচিতি পাচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের এলাকায় বিমার তথ্য প্রদানকারী, মানুষকে সুরক্ষিতকারী এবং উপার্জনকারী দায়িত্বশীল মহিলা হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। এটি তাঁদের শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাস দেয় না, তাঁদের সামাজিক অবস্থানেও পরিবর্তন আনে।

প্রযুক্তি থেকেও মিলছে সাহায্য

এলআইসি বিমা সখীদের কাজকে সহজ ও স্বচ্ছ করার জন্য একটি বিশেষ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মহিলারা এখন মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিমা পরিষেবা দিতে পারেন, পলিসির স্থিতি ট্র্যাক করতে পারেন এবং তাঁদের পারফর্মেন্স দেখতে পারেন। 

Leave a comment