মধ্যপ্রদেশে স্মার্ট মিটার বিতর্ক: গ্রাহকদের বিরোধিতার মুখে বন্দুকধারী মোতায়েন

মধ্যপ্রদেশে স্মার্ট মিটার বিতর্ক: গ্রাহকদের বিরোধিতার মুখে বন্দুকধারী মোতায়েন

মধ্যপ্রদেশের সিহোর শহরে বিদ্যুৎ গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে স্মার্ট মিটার নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। গ্রাহকেরা যেখানে স্মার্ট মিটার বসানোর বিরোধিতা করছেন, সেখানে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিবেচনা করে মধ্য ক্ষেত্র বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি এখন মিটার বসানোর দলের সাথে বন্দুকধারী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভাগের বক্তব্য হল, এই পদক্ষেপ নিরাপত্তা বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে, যাতে মিটার বসানোর সময় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

সিহোরের মহাব্যবস্থাপক সুধীর শর্মার মতে, আরডিএসএস প্রকল্পের অধীনে জেলায় মোট ৬৭,০৫১টি স্মার্ট মিটার বসানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১৩,৬৮০টি মিটার ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে। যদিও, গ্রাহকদের অভিযোগ যে স্মার্ট মিটার লাগানোর পর বিদ্যুতের বিল হঠাৎ করে বাড়ছে, যা অসন্তোষের কারণ হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কোম্পানিকে এখন পুলিশ নিরাপত্তা এবং সশস্ত্র গার্ডের সাহায্য নিতে হচ্ছে।

নিপানিয়াতে বসানো হয়েছে ৩৩১টি স্মার্ট মিটার

বিদ্যুৎ বিভাগ আরও স্পষ্ট করেছে যে মিটারগুলির কার্যকারিতা নিরীক্ষণের জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য মোট স্মার্ট মিটারের মধ্যে ৫ শতাংশ মিটারে চেক মিটার লাগানো হচ্ছে, যাতে গ্রাহকদের অভিযোগের সঠিক মূল্যায়ন করা যায়।

সিহোরের গ্রাম নিপানিয়াতে এখন পর্যন্ত ৩৩১টি বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে, যার মধ্যে ৩১টি চেক মিটার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে যে স্মার্ট মিটার এবং চেক মিটার উভয়টিতেই বিদ্যুতের ব্যবহার একই রকম ছিল, যা মিটারের কার্যকারিতার উপর আস্থা যোগাচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে আগে গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ভিত্তিতে আনুমানিক বিল জারি করা হতো, তবে এখন তারা প্রকৃত ব্যবহারের ভিত্তিতে বিল পাচ্ছেন, যা আরও সঠিক এবং স্বচ্ছ।

স্মার্ট মিটার থেকে ছাড় এবং ভর্তুকির সুবিধা

বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, স্মার্ট মিটার থেকে গ্রাহকদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান যে গ্রাহকদের বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী প্রতি ইউনিটে ২৫ পয়সা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও নিরাপত্তা তহবিলে ত্রাণ, প্রতি বিল পরিশোধের উপর ০.৫ শতাংশ ছাড়, এবং গার্হস্থ্য গ্রাহকদের জন্য ছাড়ের কোনও সর্বোচ্চ সীমা রাখা হয়নি। সেই সঙ্গে স্মার্ট মিটার থেকে প্রতি ১৫ মিনিটে বিদ্যুতের ব্যবহারের তথ্য গ্রাহকদের মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে, যা তাদের ব্যবহারের সঠিক ধারণা দিচ্ছে।

তা সত্ত্বেও, অসন্তোষ থামছে না। তিন দিন আগে, কয়েকশ গ্রাহক কালেক্টরকে স্মারকলিপি দিয়ে স্মার্ট মিটার সরানোর দাবি জানিয়েছিলেন। এছাড়াও, দশেরা ওয়ালা বাগ এলাকায় ক্ষুব্ধ লোকেরা স্মার্ট মিটার ভেঙে প্রতিবাদ জানায়।

প্রযুক্তিগত স্বচ্ছতা এবং গ্রাহক বিশ্বাস

বিদ্যুৎ কোম্পানির সামনে এখন দ্বৈত চ্যালেঞ্জ— একদিকে, তাদের প্রযুক্তিগত স্বচ্ছতা বজায় রেখে স্মার্ট মিটারের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে, অন্যদিকে গ্রাহকদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা অসন্তোষের অনুভূতিও দূর করতে হবে। বিভাগের পক্ষ থেকে ক্রমাগত মিটারের সুবিধাগুলো তুলে ধরা হচ্ছে, তবে গ্রাহকরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের অভিজ্ঞতায় এর সরাসরি সুবিধা অনুভব করেন।

বর্তমানে সিহোরে স্মার্ট মিটার নিয়ে চলমান বিতর্ক কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং গ্রাহক বিশ্বাসের পরীক্ষাও হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a comment