সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়, পাঁচদিনের বিতর্ক
সন্তান হারানোর ট্র্যাজেডির পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে নানা সমালোচনা সামনে এসেছে। কেউ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, আবার কেউ সোহিনীর জীবনযাপন বা ভিডিও পোস্টকে দায়ী করেছেন। পাঁচদিন ধরে চলছে এই টানাপোড়েন।
অবশেষে মুখ খুললেন সোহিনী
শেষমেশ নীরবতা ভেঙে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন সোহিনী। তিনি লেখেন, ২২ অগাস্ট তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে অকল্পনীয় বিপর্যয়। সেই শোকের মুহূর্তে নানা মন্তব্য, ভিডিও ও ট্রোল তাঁদের আরও ভেঙে দিয়েছে। সোহিনীর অনুরোধ, অন্তত এই সময় তাঁদের পরিবারকে শান্তিতে শোক সামলানোর সুযোগ দেওয়া হোক।
অফিসিয়াল বক্তব্যে বিলম্বের কারণ
সোহিনীর কথায়, এতদিনে তাঁরা কোনও বক্তব্য দেননি কারণ তাঁদের পক্ষে শোকের মধ্যে সেই মানসিক শক্তি জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তিনি আশ্বাস দেন, সময়মতো সব ঘটনা প্রমাণসহ তুলে ধরা হবে। কিন্তু আপাতত তাঁদের শুধু একটু সময় ও সহমর্মিতা প্রয়োজন।
প্রেগন্যান্সির আনন্দ থেকে শোকের অন্ধকারে
গর্ভাবস্থার প্রতিটি মুহূর্তই সোহিনী আনন্দের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। ভিডিও ও পোস্টে মাতৃত্বের উচ্ছ্বাস ভাগ করে নিয়েছিলেন ফলোয়ারদের সঙ্গে। কিন্তু হঠাৎ করেই সব আনন্দ মুছে গিয়ে আসে চরম দুঃখ। সন্তানের জন্মের আগে শূন্য হয়ে যায় তাঁর কোল।
ভাইরাল ভিডিওতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যেখানে নিজেকে সোহিনীর ননদ পরিচয় দেওয়া এক মহিলা চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। দাবি করা হয়, ওই চিকিৎসকের অবহেলার কারণেই অকালে মৃত্যু হয়েছে সোহিনী ও অনির্বাণের শিশুপুত্রের। এরপর থেকেই চিকিৎসককে ঘিরে নেটদুনিয়ায় শুরু হয় সমালোচনা।
চিকিৎসকের বক্তব্য প্রকাশ্যে
অভিযোগের জবাবে মুখ খোলেন চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথ দাস (এসএন দাস)। তিনি জানান, ২২ তারিখ সকালে ফোন পান যে রোগীর বাচ্চা নড়াচড়া করছে না। উচ্চ রক্তচাপ এবং বয়সজনিত ঝুঁকি থাকায় তিনি দ্রুত পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। তাঁর দাবি, সকাল আটটার সময় পরীক্ষা করেই দেখা যায়, শিশুর হার্টবিট নেই। তখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে বলা হয়।
আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন
চিকিৎসকের কথায়, পরিবারের পক্ষ থেকে পরে দাবি করা হয় বাইরে করানো এক আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্টে সবকিছু ঠিক আছে। অথচ তাঁর পরীক্ষায় কোনও হার্ট সাউন্ড পাওয়া যায়নি। এই বিরোধ থেকেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। তাঁর আরও অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় পরিবার ভাঙচুর ও হেনস্থার চেষ্টা করে।
বাচ্চার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক
ডাঃ দাস জানান, শিশুটি আকারে ছোট এবং ওজনে কম ছিল। এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে সিজার করার কোনও ইন্ডিকেশন ছিল না। তাছাড়া ভর্তির পর থেকে কোনও হার্টবিট শোনা যায়নি। তাঁর বক্তব্য, মৃত শিশুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা সিদ্ধান্ত আলাদা হয়।
সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত
চিকিৎসকের দাবি, সন্ধেবেলা পরিস্থিতি আরও জটিল হলে মাকে বাঁচানোর জন্য তিনি সিজারের সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচারে বেরিয়ে আসে আসল কারণ—‘কনসিল্ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ’, অর্থাৎ পেটের ভিতরে রক্তপাত। এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ও তুলনামূলক বেশি বয়সি মায়েদের ক্ষেত্রে ঘটে।
মাকে বাঁচানোই ছিল প্রধান লক্ষ্য
ডাঃ দাস জানান, এই জটিলতার মধ্যেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন এবং সফলভাবে সোহিনীকে বাঁচাতে সক্ষম হন। তবে শিশুটিকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমি বাচ্চাকে ভিতরে ঢুকে মেরে ফেলিনি, বরং মায়ের জীবন বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।”
চিকিৎসকের দুঃখ ও ব্যাখ্যা
তাঁর কথায়, “প্রথম আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। কারণ ভর্তি হওয়ার পর থেকেই কোনও হার্টবিট পাওয়া যায়নি। মা হওয়ার আগেই সন্তান হারানো ভীষণ বেদনার। আমার কাছেও এটা কষ্টকর।” তিনি আরও জানান, এই চিকিৎসার জন্য তিনি কোনও অতিরিক্ত চার্জও নেননি।
পরিবার বনাম চিকিৎসক, তর্কে সোশ্যাল মিডিয়া
ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝড়ছে নেটদুনিয়ায়। অনেকে তাঁর বক্তব্যকেও একতরফা বলে সমালোচনা করছেন। আবার একাংশের মতে, চিকিৎসক যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। ফলে এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
প্রশ্নে প্রথম রিপোর্ট, দোষারোপের পালা
ডাঃ দাস বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই বাচ্চা মৃত ছিল। তবে পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলা না হলে হয়তো সন্তানের প্রাণ বাঁচানো যেত। এই দুই বিপরীত মতের কারণে নেটিজেনরাও বিভক্ত।
সোহিনীর আবেদন সহমর্মিতার
অন্যদিকে সোহিনী নিজে চান, অন্তত শোকের সময়ে মানুষ যেন আর কোনও ভুয়ো খবর বা ট্রোল ছড়ায় না। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রমাণ হাতে এলে অবশ্যই সব তথ্য জনসমক্ষে আসবে। কিন্তু আপাতত তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হোক।
সমাপ্তি নয়, বিতর্ক চলছেই
এই মুহূর্তে ঘটনাটি ঘিরে বিতর্ক কোনওভাবেই থামছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে চিকিৎসক বনাম পরিবার দ্বন্দ্ব। তবে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, চিকিৎসার জটিলতা এবং গাফিলতির অভিযোগ—সব মিলিয়ে এই ঘটনা এখন বাংলার জনমনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।