লেহ হিংসা: সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আজ

লেহ হিংসা: সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আজ
সর্বশেষ আপডেট: 1 ঘণ্টা আগে

লেহ্-তে হিংসার পর গ্রেপ্তার হওয়া পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুকের মুক্তির বিষয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে। তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি একটি আবেদন দাখিল করে গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলেছেন এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

New Delhi: লেহ্-তে সম্প্রতি ঘটা হিংসার পর গ্রেপ্তার হওয়া পরিবেশ কর্মী এবং শিক্ষা সংস্কারক সোনম ওয়াংচুকের মুক্তির বিষয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে চলেছে। তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি ওয়াংচুক সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দাখিল করে স্বামীর গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলেছেন এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

লেহ্ হিংসার পর গ্রেপ্তার

২৪ সেপ্টেম্বর লেহ্-তে হঠাৎ করে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। এই হিংসার সময় বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-এর স্থানীয় সদর দফতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারি করে এবং বহু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেয়।

হিংসায় চারজনের মৃত্যু হয়েছিল, যখন ডজনখানেক আহত হয়েছিল। পুলিশি তদন্তে জানা গেছে যে এই পুরো ঘটনায় সোনম ওয়াংচুকের ভূমিকা সন্দেহজনক। অভিযোগ, তাঁর কিছু বক্তব্য এবং ভাষণ বিক্ষোভকে উসকে দেওয়ার কাজ করেছে, যার পরে জনতা হিংসার রূপ নেয়।

এনএসএ-এর অধীনে মামলা দায়ের

ঘটনার দুই দিন পর অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর সোনম ওয়াংচুককে হেফাজতে নেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই আইন সেইসব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, যেখানে ব্যক্তির কার্যকলাপ জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি বলে মনে করা হয়।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, তদন্তের সময় এটিও দাবি করা হয়েছে যে ওয়াংচুকের কিছু সংগঠনের সাথে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সম্পর্ক ছিল। যদিও, এই দাবির স্বাধীনভাবে এখনও পর্যন্ত কোনো নিশ্চিতকরণ হয়নি।

স্ত্রী গীতাঞ্জলির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দাখিল

গীতাঞ্জলি বলেছেন যে সোনম ওয়াংচুক বরাবরই শান্তি ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কাজ করে আসছেন, এবং তিনি কখনোই হিংসার সমর্থন করেননি। তাঁর আরও অভিযোগ, সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে এনএসএ-এর মতো কঠোর আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট এই আবেদনের উপর আজ ৬ অক্টোবর শুনানি নির্ধারণ করেছে। এই শুনানিতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে যে গ্রেপ্তারিতে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা।

লেহ্ হিংসায় কী ঘটেছিল?

২৪ সেপ্টেম্বর লাদাখের স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারী জনতা হঠাৎ করে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। জনতা অনেক গাড়ি এবং সরকারি ভবনের ক্ষতিসাধন করে। পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় এবং পুলিশকে গুলি চালাতে হয়।

এই গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয় এবং অনেকে আহত হন। এরপর প্রশাসন কারফিউ জারি করে এবং বেশ কয়েক দিন ধরে এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছিল।

ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে বিদেশি তহবিলের তদন্তও শুরু

পুলিশ সূত্র অনুযায়ী, সোনম ওয়াংচুকের দুটি এনজিও-র মাধ্যমে বিদেশি তহবিলের লেনদেনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তদন্ত সংস্থাগুলি এখন এই লেনদেনগুলির গভীর তদন্ত করছে।

যদিও, সোনম ওয়াংচুক এই অভিযোগগুলিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে তাঁর সমস্ত সংগঠন আইনগতভাবে নিবন্ধিত এবং স্বচ্ছ উপায়ে কাজ করে।

কে সোনম ওয়াংচুক?

সোনম ওয়াংচুক একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ এবং পরিবেশবিদ। তিনি লাদাখে বিকল্প শিক্ষা এবং টেকসই জীবনযাপনকে উৎসাহিত করার জন্য পরিচিত।

তিনি সেকমোল (SECMOL) নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক এবং জীবন-ভিত্তিক শিক্ষা দেয়। তাঁর চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করেই আমির খানের “3 Idiots” সিনেমার চরিত্র ‘ফুংসুখ ওয়াংড়ু’ তৈরি হয়েছিল।

ওয়াংচুক দীর্ঘদিন ধরে লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে (Sixth Schedule) অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে আসছেন, যাতে এখানকার মানুষ তাদের সম্পদ এবং ভূমির উপর অধিকার পায়।

ওয়াংচুকের আবেদন – “শান্তি বজায় রাখুন”

গ্রেপ্তারের পর যোধপুর জেল থেকে সোনম ওয়াংচুক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি বার্তা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং তাঁর সমর্থকদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, “আমি লেহ্-এর সকল মানুষকে অনুরোধ করছি যে কোনো ধরনের হিংসা থেকে দূরে থাকুন। আমরা বিচারিক পথেই সমাধান চাইব। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রয়েছে।”

Leave a comment