আজ রাতে আকাশে দেখা যাবে এক ঝলমলে সুপারমুন। এটি সাধারণ চাঁদের চেয়ে ১৪% বড় এবং ৩০% বেশি উজ্জ্বল হবে। নাসা (NASA)-এর মতে, এটি ঘটে যখন চাঁদ তার কক্ষপথে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে।
সুপারমুন: আজকের রাতে আকাশে এক অসাধারণ দৃশ্য দেখা যাবে। চাঁদ তার পূর্ণ রূপে থাকবে এবং সাধারণ দিনের চেয়ে অনেক বেশি বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে। বিজ্ঞানীরা এই বিশেষ ঘটনাটির নাম দিয়েছেন সুপারমুন (Supermoon)। এটি কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)-এর একটি বিষয় নয়, বরং প্রকৃতির অন্যতম সুন্দর দৃশ্য, যা প্রত্যেকে নিজ চোখে দেখতে পারবে।
সুপারমুন কী?
সুপারমুন হলো সেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা যখন পূর্ণিমা (Full Moon) চাঁদ তার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী বিন্দু (Perigee)-তে পৌঁছে যায়। এই সময়ে চাঁদের আকার সাধারণের চেয়ে বড় এবং এর উজ্জ্বলতা বেশি দেখা যায়।
সাধারণত পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে গড় দূরত্ব প্রায় ২,৩৮,৯০০ মাইল (প্রায় ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার) হয়, কিন্তু আজ সুপারমুনের সময় এই দূরত্ব কমে প্রায় ২,২৪,৬০০ মাইল (৩,৬১,৪৫৯ কিলোমিটার) হয়ে যাবে। অর্থাৎ, চাঁদ পৃথিবীর আরও প্রায় ১০ শতাংশ কাছে চলে আসবে, যার ফলে এটি সাধারণ দিনের তুলনায় ১৪ শতাংশ বড় এবং ৩০ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল দেখাবে।
এই সুপারমুন নিয়ে নাসা কী বলেছে?
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা (NASA) এই সুপারমুনকে "পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপগ্রহের বার্ষিক বৈশ্বিক উদযাপন (Annual Global Celebration of Earth’s Natural Satellite)" হিসাবে বর্ণনা করেছে। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, এই দৃশ্যটি কেবল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বিশেষ নয়, এটি মানুষের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোরও একটি সুযোগ।
নাসা জানিয়েছে যে এই ঘটনাটি সারা বিশ্বের জন্য একটি সাধারণ অভিজ্ঞতার মতো, যেখানে প্রতিটি মানুষ, সে যে দেশেই থাকুক না কেন, আকাশে একই সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।
আকাশপ্রেমীদের জন্য স্মরণীয় রাত
যারা আকাশের দৃশ্য দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আজকের রাত কোনো উৎসবের চেয়ে কম হবে না। এই সুপারমুন রাতের আকাশে এক অসাধারণ দ্যুতি ছড়াবে। এটি সাধারণ পূর্ণিমার চেয়ে ১৪ শতাংশ বড় এবং প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল হবে।
অনেক দেশে এটিকে হার্ভেস্ট মুন (Harvest Moon) বলা হয়, কারণ এটি বছরের সেই সময়ে আসে যখন কৃষকরা তাদের ফসল কাটা শুরু করে। এই সময়ে চাঁদের অতিরিক্ত আলো রাতে মাঠে কাজ করার জন্য সহায়ক ছিল, তাই এর এমন নামকরণ করা হয়েছে।
সুপারমুনকে কেন বেশি উজ্জ্বল ও বড় দেখায়?
চাঁদের কক্ষপথ পুরোপুরি গোলাকার নয়, বরং এটি উপবৃত্তাকার (Elliptical)। এই কারণে চাঁদ কখনও পৃথিবী থেকে দূরে থাকে আবার কখনও কাছে আসে। যখন এটি সবচেয়ে কাছে আসে, তখন এর পৃষ্ঠ থেকে আসা আলো বেশি পরিমাণে পৃথিবীতে পৌঁছায়।
এর ফলে এর উজ্জ্বলতা (Brightness) সাধারণের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি অনুভূত হয়। পাশাপাশি এর আপাত আকার (Apparent Size) অর্থাৎ দৃশ্যমান আকার ১৪ শতাংশ বড় দেখায়। এই কারণেই সুপারমুন রাতের আকাশে একটি বিশাল এবং উজ্জ্বল গোলকের মতো মনে হয়।
এই সুপারমুন দেখতে কি কোনো যন্ত্রের প্রয়োজন?
ফিলাডেলফিয়ার ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেরিক পিটস (Derrick Pitts)-এর মতে, সুপারমুন দেখার জন্য কোনো বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তবে প্রত্যেকে এটি খালি চোখে দেখতে পারবে।
তিনি বলেন, যদিও এর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা আকারের পার্থক্যকে সাধারণ চাঁদের তুলনায় অনুভব করা কিছুটা কঠিন হতে পারে, কারণ আমাদের চোখের কাছে তুলনা করার জন্য কোনো রেফারেন্স বস্তু থাকে না।
পিটস আরও জানান যে, যদি আপনি চাঁদকে দিগন্তের (Horizon) কাছে দেখেন, তবে এটিকে আরও বড় বলে মনে হয়, যখন সেই একই চাঁদ আকাশে উঁচুতে থাকলে কিছুটা ছোট দেখায়। এটিকে মুন ইলিউশন (Moon Illusion) বলা হয় এবং এটি সম্পূর্ণরূপে একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব।
সুপারমুনের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
বিজ্ঞানীদের মতে, সুপারমুন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, তবে এটি একটি চমৎকার উদাহরণ যে কীভাবে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জীবন্ত করে তোলে।
সুপারমুনের অধ্যয়ন বিজ্ঞানীদের চাঁদের কক্ষপথ (Orbit), এর মহাকর্ষীয় শক্তি (Gravitational Pull) এবং পৃথিবীতে এর প্রভাব, যেমন জোয়ার-ভাটার (Tides) পরিবর্তন বুঝতে সাহায্য করে।
যখন চাঁদ পৃথিবীর কাছে থাকে, তখন সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা সাধারণের চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। এটিকে পেরিজিয়ান স্প্রিং টাইড (Perigean Spring Tide) বলা হয়। তবে, এই প্রভাব খুব বড় হয় না এবং সাধারণ মানুষের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করে না।
কবে এবং কোথায় দেখা যাবে এই সুপারমুন?
ভারতে এই সুপারমুন আজ রাত প্রায় ৭:০০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। যদি আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে, তবে দেশের যে কোনো অংশ থেকে এটি দেখা যেতে পারে। চাঁদের সবচেয়ে নিকটবর্তী বিন্দু অর্থাৎ পেরিজি মোমেন্ট (Perigee Moment) আজ রাত ৯:৩০টার কাছাকাছি হবে। সেই সময় চাঁদের আকার এবং উজ্জ্বলতা উভয়ই শীর্ষে থাকবে।