শ্রাবণ মাস (Sawan Month) আসতেই মন্দিরগুলিতে শিব ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। এই সময়টা ভগবান শিবের পূজা ও আরাধনার জন্য সবচেয়ে পবিত্র বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলিতে শিবলিঙ্গের উপর জল, দুধ, বেলপাতা এবং অন্যান্য পূজনীয় সামগ্রী অর্পণ করে ভক্তরা ভোলানাথকে (ভগবান শিবকে) প্রসন্ন করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু অনেকেই জানেন না যে শিবলিঙ্গের উপর সবার প্রথমে কী নিবেদন করা উচিত। বেলপাতা আগে দেবেন নাকি জল? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ভক্তরা ইন্টারনেট থেকে শুরু করে পুরোহিতদের পরামর্শ পর্যন্ত নিয়ে থাকেন।
শিবলিঙ্গের পূজারম্ভ কীভাবে করবেন
ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রাচীন গ্রন্থানুসারে, শিবলিঙ্গের পূজা জল অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয়। এটিকে 'অভিষেক' বলা হয়। জল অভিষেক করলে শিবলিঙ্গের শুদ্ধিকরণ হয় এবং এটি ভগবান শিবকে শান্ত ও প্রসন্ন করার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
জল অর্পণের পরেই বেলপাতা, দুধ, দই, মধু এবং অন্যান্য পূজনীয় সামগ্রী নিবেদন করা হয়।
কেন সবার আগে জল নিবেদন করা জরুরি
শিবপুরাণ ও স্কন্দপুরাণের মতো একাধিক ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ভগবান শিব জলের প্রতি বিশেষ অনুরাগী। জল নিবেদনের অর্থ হল শরীর, মন এবং পরিবেশের শুদ্ধিকরণ। এটি কেবল পূজারম্ভের একটি অংশই নয়, এর মাধ্যমে শিবলিঙ্গের শক্তিও সক্রিয় হয়।
বিশ্বাস করা হয়, গঙ্গা জল পাওয়া গেলে তা সবচেয়ে উত্তম। অন্যান্য পবিত্র নদী যেমন যমুনা, গোদাবরী, নর্মদা, কৃষ্ণা ইত্যাদির জলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বেলপাতার গুরুত্ব, তবে ক্রমানুসারে পরে
বেলপাতা ভগবান শিবের অত্যন্ত প্রিয় একটি পাতা। এতে তিনটি পাতা থাকে যা ত্রিনেত্র, ত্রিদেব এবং ত্রিগুণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, জল নিবেদনের পরেই এটি অর্পণ করা উচিত।
পূজার সময় ৩, ৫, ৭, ৯ বা ১১টি বেলপাতা অর্পণ করা শুভ বলে মনে করা হয়। নিবেদনের সময় প্রতিটি পাতার উপর 'ওঁ নমঃ শিবায়' মন্ত্র পাঠ করা উচিত।
পূজার নিয়মগুলির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন
শিব পূজার সঙ্গে জড়িত কিছু প্রথাগত নিয়ম রয়েছে, যা পালন করা আবশ্যক। পূজার আগে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরা উচিত।
- বেলপাতা খন্ডিত বা কাটা-ছেঁড়া হওয়া উচিত নয়
- বেলপাতার ডাটা (ডাঁটা) সরিয়ে ফেলতে হবে
- শিবলিঙ্গের উপর হলুদ, সিঁদুর এবং কেতকী ফুল দেওয়া উচিত নয়
- পূজার সময় আপনার মুখ পূর্ব দিকে থাকা উচিত
- শিবলিঙ্গের উপর দুধ বা পঞ্চামৃত নিবেদন করার সময় পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার করুন
শিব পূজায় এই জিনিসগুলিরও ব্যবহার হয়
পূজা সামগ্রীর মধ্যে জল এবং বেলপাতা ছাড়াও আরও অনেক জিনিস ভগবান শিবকে নিবেদন করা হয়। এর মধ্যে দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি মিশিয়ে পঞ্চামৃত তৈরি করা হয়। এছাড়াও ভাঙ, ধুতরা, আকন্দ ফুল এবং সাদা ফুল শিবকে নিবেদন করার প্রথা প্রচলিত আছে।
কিছু স্থানে আখের রস, নারকেল জল এবং চন্দনের প্রলেপও শিবলিঙ্গের উপর অর্পণ করা হয়।
শ্রাবণে সকাল ও সন্ধ্যায় উভয় সময়ে পূজার গুরুত্ব
শ্রাবণ মাসে শিব ভক্তরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করেন এবং শিবলিঙ্গের উপর জল অর্পণ করেন। বিশ্বাস করা হয়, এই মাসে ব্রহ্ম মুহূর্তে করা পূজার বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
এছাড়াও সন্ধ্যাবেলাতেও অর্থাৎ সন্ধ্যায় শিব পূজার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের সোমবার যদি কেউ নিয়ম মেনে শিবের পূজা করেন, তবে তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
ভোলানাথকে আন্তরিকভাবে জল দিন
লোকবিশ্বাস অনুসারে, যদি কোনও ভক্ত আন্তরিকভাবে এক লোট জলও শিবলিঙ্গের উপর নিবেদন করেন, তবে ভগবান শিব প্রসন্ন হন। এই কারণেই শ্রাবণ মাসে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জল নিয়ে মন্দিরে আসেন এবং শিবলিঙ্গের উপর অর্পণ করেন।
গ্রাম-শহর, ছোট শহর থেকে শুরু করে বড় বড় শহরে শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলিতে মন্দিরগুলিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় এবং প্রত্যেক ভক্ত চান, তিনি যেন ভগবান শিবকে তাঁর প্রিয় জিনিস অর্পণ করে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন।
এই বিষয়গুলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে
- জল শুদ্ধ ও পবিত্র হতে হবে, তাতে কোনও অশুচিতা থাকা উচিত নয়
- বেলপাতা তিনটি পাতার এবং একটি ডাটা যুক্ত হতে হবে
- বেলপাতার উপর অন্য কোনও দেবী-দেবতার নাম লেখা উচিত নয়
- শিবলিঙ্গের উপর নিবেদিত সামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়
- পূজা করার সময় পূর্ণ মন ও মনোযোগের সঙ্গে শিব মন্ত্র জপ করুন