বলিউডে প্রায়শই মনে করা হয় যে হিন্দি সিনেমায় সাফল্য পেতে গেলে কোনো গডফাদার থাকা জরুরি, কিন্তু কিছু শিল্পী তাঁদের পরিশ্রম ও প্রতিভার জোরে এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দেন।
Sridevi Birth Anniversary: ১৩ই অগাস্ট হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। এই দিনেই ১৯৬৩ সালে জন্মেছিলেন শ্রীদেবী, যাঁকে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম "লেডি সুপারস্টার" বলা হয়। নিজের অনবদ্য অভিনয়, মোহময় সৌন্দর্য এবং অসাধারণ নৃত্যশৈলী দিয়ে তিনি ভারতীয় সিনেমায় এমন একটি স্থান তৈরি করেছিলেন, যা স্পর্শ করা যে কোনো অভিনেত্রীর জন্য সহজ ছিল না।
শুরু তামিল ফিল্ম থেকে, পরিচিতি বলিউডে
শ্রীদেবীর জন্ম তামিলনাড়ুর শিবকাশীতে শ্রী আয়াপ্পান ও রাজেশ্বরীর ঘরে। তাঁর আসল নাম ছিল শ্রীদেবী আয়াপ্পান। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেন তামিল ছবি কান্দান করুণাই (১৯৬৭)-এর মাধ্যমে, একজন শিশু শিল্পী হিসেবে। এর পর তিনি তামিল, তেলুগু, মালয়ালম ও কন্নড় ছবিতেও শিশু চরিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৭৮ সালে তিনি সোলহवां সাওয়ান ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। যদিও, আসল পরিচিতি তিনি পান ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিম্মতওয়ালা ছবির মাধ্যমে। এই ছবি সুপারহিট হয় এবং শ্রীদেবী রাতারাতি বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন।
'ভারতের ফার্স্ট লেডি সুপারস্টার'-এর যাত্রা
১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে শ্রীদেবীর তারকাখ্যাতি শীর্ষে ছিল। সদমা, নাগিনা, মিস্টার ইন্ডিয়া, চালবাজ, লামহে, খোদা গवाह এবং জুদাই-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল। নাগিনা-তে নাগিনের চরিত্র থেকে শুরু করে চালবাজ-এ ডাবল রোল এবং সদমা-তে সংবেদনশীল অভিনয়—প্রতিটি ছবিতেই তিনি তাঁর বহুমুখী প্রতিভা প্রমাণ করেছেন।
অভিনেতা জিতেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর জুটি খুব জনপ্রিয় ছিল। তাঁরা একসঙ্গে ১৬টি ছবিতে কাজ করেছিলেন, যার মধ্যে অনেকগুলি বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল। মওয়ালি, তোহফা এবং সোহাগন-এর মতো ছবিগুলি তাঁকে ৮০-র দশকের সবচেয়ে সফল অভিনেত্রী করে তুলেছিল।
পুরস্কার ও সম্মান
শ্রীদেবী তাঁর অবদানের জন্য অনেক সম্মান পেয়েছেন। তিনি পাঁচটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন এবং ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, আন্তর্জাতিক স্তরেও তিনি খুব প্রশংসিত হয়েছিলেন। তাঁর কৃতিত্বকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মাদাম তুসো মিউজিয়ামে তাঁর মোমের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা তাঁর ভক্তদের জন্য গর্বের মুহূর্ত ছিল।
ব্যক্তিগত জীবন এবং বিরতির পর প্রত্যাবর্তন
শ্রীদেবী ১৯৯৬ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা বনি কাপুরকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি মেয়ে আছে—জাহ্নবী কাপুর এবং খুশি কাপুর। বিয়ের পর তিনি সিনেমা থেকে দূরে সরে যান এবং পরিবারকে সময় দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেন। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১২ সালে তিনি ইংলিশ উইংলিশ ছবির মাধ্যমে জাঁকজমকভাবে ফিরে আসেন। ছবিতে তিনি একজন ভারতীয় গৃহিণীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যিনি ইংরেজি শিখে আত্মসম্মান অর্জন করেন। এই ছবিটি শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও খুব প্রশংসিত হয়েছিল।
২০১৭ সালে মম ছবিতে তাঁর শক্তিশালী অভিনয় আবারও প্রমাণ করে যে তিনি এখনও পর্দায় জাদু ছড়াতে পারেন। এই ছবির জন্য তাঁকে মরণোত্তর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল।
অকস্মাৎ বিদায়
24 ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে দুবাইতে একটি পারিবারিক বিয়েতে যোগ দিতে গিয়ে ৫৪ বছর বয়সে শ্রীদেবীর মৃত্যু হয়। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং সারা বিশ্বের ভক্তরা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে। শ্রীদেবীর কর্মজীবন এই কথার প্রমাণ যে, খাঁটি পরিশ্রম এবং প্রতিভা গডফাদারের অভাব পূরণ করতে পারে। তিনি ৩০০টির বেশি ছবিতে কাজ করেছেন এবং প্রতিটি চরিত্রকে নিজের ভঙ্গিতে স্মরণীয় করে রেখেছেন।