টেন্টেড-তালিকা ঘিরে নয়া তরজা পূর্ব মেদিনীপুরকে হাতিয়ার করল শাসক, পাল্টা আক্রমণে বিজেপি

টেন্টেড-তালিকা ঘিরে নয়া তরজা পূর্ব মেদিনীপুরকে হাতিয়ার করল শাসক, পাল্টা আক্রমণে বিজেপি

কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নামের তালিকা

স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে নবম–দশম এবং একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে ‘টেন্টেড’ বা দাগি প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হতেই ফের উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই তালিকায় নাম ওঠা মানেই যে চাকরিটি আদালতের রায়ে বাতিল হতে পারে, তা নিয়েই শোরগোল বাড়ছে।

বিরোধীর তোপ: দুর্নীতির প্রমাণ

তালিকা প্রকাশের পরেই আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। বিরোধী শিবিরের দাবি, এত সংখ্যক দাগি প্রার্থীর নাম প্রকাশিত হওয়া থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁদের মতে, চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৃণমূল সরকার ন্যূনতম দায়িত্বও নেয়নি।

শুভেন্দুর খাস এলাকায় নজর

পাল্টা তৃণমূল এই বিতর্কে হাতিয়ার করেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুক পূর্ব মেদিনীপুরের তথ্য। শাসকদলের যুক্তি, যেখানে বিজেপি নেতা নিজে জনপ্রতিনিধি, সেখান থেকেই যদি এত নাম উঠে আসে, তবে বিরোধীদের মুখে নৈতিকতার বুলি মানায় না।

শাসকের কৌশল: পাল্টা আক্রমণ

তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষত ত্রিপুরা ও মধ্যপ্রদেশের ঘটনা সামনে এনে তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দুর্নীতির প্রশ্নে বিজেপির মুখে মুখোশ নেই।

বিজেপির জবাব: দায় এড়াচ্ছে শাসক

বিজেপির বক্তব্য, অন্য রাজ্যের উদাহরণ টেনে এনে তৃণমূল মূল সমস্যার দিক থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিত, তখন শাসকদল দায় স্বীকার না করে পাল্টা অভিযোগের আশ্রয় নিচ্ছে।

ছাত্র-যুবদের ক্ষোভ

চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রবল হতাশা। আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া নিয়োগের ফলে অনেকেই বছরখানেক ধরে বেতন পাচ্ছেন না। আবার যাদের নাম তালিকায় উঠেছে, তাঁদের মনে আতঙ্ক—ভবিষ্যত কি অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে?

তৃণমূলের যুক্তি: কেবল রাজনৈতিক চক্রান্ত

শাসক শিবিরের দাবি, ‘টেন্টেড’ শব্দের আড়ালে আসল সত্য আড়াল করা হচ্ছে। আদালতের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বিরোধীরা এই তালিকাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাচ্ছে। তাঁদের কথায়, এটা বিজেপির পুরনো কৌশল—অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি তৈরি করা।

পূর্ব মেদিনীপুরে চাপ বাড়ছে

শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে এই তালিকার প্রভাব আরও বেশি। স্থানীয়ভাবে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও বিবৃতি শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্র–যুব সংগঠনগুলোও পথে নেমেছে।

আদালতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে চাকরিপ্রার্থীদের একমাত্র ভরসা আদালত। আদালতের রায়ে দাগি প্রার্থীদের চাকরি বাতিল হলে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে ক্ষতির মুখে পড়বেন হাজার হাজার প্রার্থী।

লোকসভা ভোটের আগে বড় ইস্যু

রাজনীতিবিদদের মতে, ২০২৬ সালের লোকসভা ভোটের আগে এই বিষয়টি বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভ, দুর্নীতির অভিযোগ এবং রাজ্য–বিরোধী দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের লড়াই আরও তীব্র হবে বলেই অনুমান।

বিরোধীদের হাতিয়ার: নৈতিকতার প্রশ্ন

বিজেপি বারবার বলছে, তারা নৈতিকতার ভিত্তিতে আন্দোলন করছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভিযোগ তুলে বিরোধীরা পথে নেমেছে। তাঁদের দাবি, মানুষের রায়েই শেষমেশ জবাব দেবে রাজ্য সরকার।

শাসকের ভরসা: উন্নয়ন ও তুলনা

অন্যদিকে, তৃণমূলের ভরসা উন্নয়নের খতিয়ান এবং অন্যান্য রাজ্যের উদাহরণ। তাঁদের যুক্তি, বিজেপি নিজে যখন অন্য রাজ্যে একই সমস্যায় জর্জরিত, তখন বাংলায় আঙুল তোলার অধিকার নেই। সেই সঙ্গেই তারা মানুষের উন্নয়নের কাজ তুলে ধরে বিজেপিকে পাল্টা কোণঠাসা করতে চাইছে।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন

রাজনীতির তরজা চললেও সাধারণ মানুষের প্রশ্ন একটাই—চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যত কী হবে? যাদের নাম তালিকায় এসেছে তাদের জীবনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর যাদের নাম ওঠেনি তারাও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

তরজার শেষ কোথায়?

‘টেন্টেড’-তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শাসক–বিরোধীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। তবে শেষ কথা বলবে আদালত। ততদিন পর্যন্ত এই ইস্যু রাজ্যের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়েই থাকবে।

Leave a comment