সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের বিহার ভোটার ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয়নি, তবে পরামর্শ দিয়েছে যে আধার, ভোটার আইডি এবং রেশন কার্ডকে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হোক। মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য ২৮শে জুলাই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ভোটার তালিকা: বিহারে নির্বাচনের আগে চলা ভোটার তালিকা যাচাই অভিযান নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে। আদালত নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে যে আধার, ভোটার-আইডি এবং রেশন কার্ডকে সনাক্তকরণের বৈধ নথি হিসেবে গ্রহণ করা হোক। আদালত নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়ায় আপাতত স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে, তবে মামলার বিস্তারিত শুনানির জন্য ২৮শে জুলাই দিন ধার্য করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের শুনানির প্রেক্ষাপট
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক শুরু হওয়া স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (Special Intensive Revision - SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছিল। এই আবেদনগুলিতে অভিযোগ করা হয়েছিল যে এই প্রক্রিয়া ভোটারদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০ এবং ভোটার নিবন্ধন নিয়ম ১৯৬০-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত আইনি প্রক্রিয়াগুলির পরিপন্থী।
এই আবেদনগুলির শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায় যে নির্বাচন কমিশনকে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই, তবে প্রক্রিয়ার বৈধতা এবং এর সময় বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই ভিত্তিতে আদালত মামলাটি পরবর্তী শুনানির জন্য ২৮শে জুলাই তালিকাভুক্ত করে।
আধার, ভোটার-আইডি এবং রেশন কার্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরামর্শ
বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে সুস্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছে যে যাচাইকরণের সময় নাগরিকদের কাছ থেকে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট নথিপত্র চাওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে আধার, ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ডের মতো সাধারণভাবে উপলব্ধ নথিগুলিকে সনাক্তকরণের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়ায় পাওয়া ভুলগুলি এবং অবৈধ এন্ট্রি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। যদিও আদালত স্পষ্ট করেছে যে কমিশনকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং তাকে আইনের মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ড্রাফট তালিকা আপাতত প্রকাশিত হবে না
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট আরও নির্দেশ দিয়েছে যে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা যাবে না। আদালতের মতে, এর ফলে আবেদনকারীদের উদ্বেগ শোনা যাবে এবং প্রয়োজনীয় আইনি দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
আদালতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
শুনানির শেষে আদালত নির্বাচন কমিশনকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছে:
- কমিশন কোন আইনি ধারার অধীনে 'বিশেষ गहन সংশোধন' (Special Intensive Revision) -এর মতো পদক্ষেপ নিতে পারে?
- এখন পর্যন্ত কেবল ‘সংক্ষিপ্ত সংশোধন’ (Summary Revision) এবং ‘গভীর সংশোধন’ (Intensive Revision) প্রক্রিয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়, তবে এই নতুন প্রক্রিয়াটি কোন ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে?
- নির্বাচনের এত কাছাকাছি সময়ে এই প্রক্রিয়া কেন শুরু করা হয়েছে, যেখানে নভেম্বরে বিহারে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
আবেদনকারীদের আপত্তি
সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এবং কপিল সিব্বলের মতো বর্ষীয়ান আইনজীবীরা আবেদনকারীদের হয়ে সওয়াল করেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়াকে নাগরিকত্বের তদন্তের মতো একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। সিংভি বলেন, যদি সারা দেশ আধারকে সনাক্তকরণের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবে নির্বাচন কমিশন কেন এটি প্রত্যাখ্যান করছে?
সিব্বল যুক্তি দিয়েছিলেন যে নির্বাচন কমিশনের কারো নাগরিকত্ব নির্ধারণ করার অধিকার নেই। যদি কমিশন কারো নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তবে তার কাছে এর উপযুক্ত প্রমাণ থাকতে হবে।
কমিশনের যুক্তি এবং আদালতের মন্তব্য
নির্বাচন কমিশনের তরফে পেশ হওয়া আইনজীবীরা জবাব দেন যে আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যায় না, কারণ এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। সুপ্রিম কোর্ট এতে সম্মতি জানায় এবং বলে যে নাগরিকত্বের নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। আরও জানানো হয় যে কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার আগে আদালতের কাছে এর একটি অনুলিপি জমা দিতে পারে।