বিহারের ভোটার তালিকা পরীক্ষার প্রক্রিয়ার উপর সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে। SIR প্রক্রিয়া এখন চলবে। পরবর্তী শুনানি ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।
বিহার ভোটার তালিকা: বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ক্রমাগত বিতর্ক চলছে। আবেদনকারীদের আপত্তির পরেও, আদালত এই প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে। একইসঙ্গে আদালত নির্বাচন কমিশনকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছে, যার জবাব দেওয়া এখন কমিশনের দায়িত্ব। পরবর্তী শুনানি ২৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
SIR প্রক্রিয়ায় বৈধ ভোটার তালিকা থেকে কি মানুষ বাদ পড়তে পারে?
শুনানির সময় আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ২০২৫ সালে ভোটার তালিকায় আগে থেকেই বিদ্যমান থাকে, কিন্তু ফর্ম পূরণ করতে না পারে, তাহলে তার নাম কি তালিকায় থাকবে? এর উত্তরে কমিশন জানায়, হ্যাঁ, নাম থাকবে, তবে ফর্ম পূরণ করা জরুরি। যদি কোনো ব্যক্তি ফর্ম পূরণ না করে, তাহলে তার অবস্থা অস্পষ্ট হয়ে যাবে।
সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এই বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, কোনো ব্যক্তিকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হলে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। শুধুমাত্র ফর্ম পূরণ না করার কারণে কারও নাম বাদ দেওয়া সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন।
আদালত এবং কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করেছে যে, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন উভয়েরই কর্তব্য সংবিধান ও আইন অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বজায় রাখা। কমিশন জানিয়েছে যে, এখন পর্যন্ত ৪.৯৬ কোটি যোগ্য নাগরিকের মধ্যে প্রায় ৩.৮ কোটি ফর্ম পূরণ করেছেন। কমিশন আরও জানায়, এই প্রক্রিয়াটি জরুরি কারণ ২০ বছরে ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ৭০ লক্ষ স্থানান্তরিত হয়েছেন।
বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা এবং BLO-এর ভূমিকা
নির্বাচন কমিশন আদালতকে জানিয়েছে যে, এই অভিযানে এক লক্ষ BLO (Booth Level Officers) এবং দেড় লক্ষ BLA (Booth Level Agents) নিযুক্ত রয়েছেন। তারা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম পূরণ করাচ্ছেন। প্রতিটি BLA প্রতিদিন প্রায় ৫০টি ফর্ম জমা করছেন।
কমিশন আরও জানায় যে, যে সকল ভোটারের নাম ২০০৩ সালের তালিকায় রয়েছে, তাদের শুধুমাত্র ফর্ম পূরণ করতে হবে। নতুন ভোটারদের নথি জমা দিতে হবে।
আধার কার্ড নিয়ে আদালতের আপত্তি
শুনানির সময়, আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ না করার বিষয়ে আদালত নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন করে। কমিশন জানায় যে, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। এটি কেবল একটি পরিচয়পত্র। এর উত্তরে আদালত জানায়, যদি আপনারা কেবল নাগরিকত্বের ভিত্তিতে কাউকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন, তাহলে এই প্রক্রিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। নাগরিকত্ব প্রমাণ করার একটি বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়া রয়েছে, যেখানে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
সিংভি বলেন, কোনো ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার একটি আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয় যখন কারও বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয় এবং শুনানি শেষে তার নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু বর্তমান SIR প্রক্রিয়ায় ৪ থেকে ৭ কোটি মানুষকে এই ভিত্তিতে স্থগিত করা হচ্ছে যে, যদি তারা ফর্ম পূরণ না করে, তাহলে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
আদালত নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করে যে, আপিল এবং শুনানির জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আগের একটি রায় (লাল বাবু মামলা)-এর উল্লেখ করে আদালত জানায় যে, তালিকা থেকে কাউকে বাদ দিতে হলে, আপত্তি উত্থাপনকারীর কাছে প্রমাণ থাকতে হবে।
আবেদনকারীদের আপত্তি এবং আদালতের প্রতিক্রিয়া
আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণন যুক্তি দেন যে, SIR প্রক্রিয়া নিয়মবহির্ভূত এবং বৈষম্যমূলক। তিনি অভিযোগ করেন যে, ১ জানুয়ারি, ২০০৩-এর পরে ভোটার হওয়া নাগরিকদের কাছ থেকে নথি চাওয়া হচ্ছে, যেখানে পুরনো ভোটারদের কাছ থেকে তা চাওয়া হচ্ছে না। এটি একটি দ্বৈত নীতি। তিনি আরও বলেন যে, ভোটার তালিকার বার্ষিক পর্যালোচনা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন বিশেষ সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।