বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর পুনর্গঠন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করেছে। আবেদনকারীরা এই প্রক্রিয়াকে স্বেচ্ছাচারী এবং বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন। আদালত বলেছে- নির্বাচনের ঠিক আগে এই কাজ করা উচিত নয়।
বিহার ভোটার তালিকা: বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর পুনর্গঠন (Special Intensive Revision - SIR) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। আবেদনকারীরা এই প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট এবং নিয়মের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট করে জানায় যে এই প্রক্রিয়ার সময় উপযুক্ত নয় এবং এর ফলে নির্বাচনী নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
আবেদনকারীদের গুরুতর অভিযোগ
বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ গভীর পুনর্গঠন অভিযানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে। আবেদনকারীদের তরফে সিনিয়র আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এই বিশেষ পুনর্গঠন নিয়ম ভেঙে করা হচ্ছে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বৈষম্যমূলক।
তিনি আদালতকে জানান যে ১ জানুয়ারি, ২০০৩-এর পরে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা নাগরিকদের কাছ থেকে নথি চাওয়া হচ্ছে, যেখানে এর আগের নাগরিকদের কেবল একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি অসম এবং পক্ষপাতদুষ্ট।
"প্রমাণ করুন যে নির্বাচন কমিশন ভুল"
আদালত আবেদনকারীদের বলেছে যে তারা প্রমাণ করুক যে নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ নিয়মের পরিপন্থী। বিচারপতি ধুলিয়া স্পষ্ট করেন যে কমিশনের ভোটার তালিকা পুনর্গঠন করার অধিকার আছে। তিনি বলেন, আবেদনকারীরা বলতে পারেন না যে কমিশনের এই প্রক্রিয়া করার অধিকার নেই। হ্যাঁ, তারা অবশ্যই এই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে যে কমিশন কীভাবে এই প্রক্রিয়াটি করছে।
গোপাল শঙ্করনারায়ণ যুক্তি দেন যে নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়ায় ১১ ধরনের নথি বাধ্যতামূলক করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে স্বেচ্ছাচারী এবং পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বলেন, ভোটার তালিকার বার্ষিক পর্যালোচনা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, সেক্ষেত্রে পুনরায় বিশেষ পুনর্গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই।
চারটি প্রধান আপত্তি
আবেদনকারী আদালতের কাছে SIR প্রক্রিয়াকে চারটি প্রধান ভিত্তিতে ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন যে এটি:
- নিয়মের পরিপন্থী।
- বৈষম্যমূলক।
- একতরফা এবং স্বেচ্ছাচারী।
- আইনের বিধানের ভুল ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য
নির্বাচন কমিশনের তরফে সিনিয়র আইনজীবী এবং প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল তাদের বক্তব্য পেশ করেন। তিনি জানান যে কমিশন এই প্রক্রিয়াটি নিয়মের অধীনে শুরু করেছে। কমিশনের যুক্তি হলো, ২০০৩ সালে কম্পিউটারাইজেশনের পর থেকে ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা আনার জন্য নথি চাওয়া জরুরি।
বিচারপতি ধুলিয়া কমিশনের এই যুক্তিকে 'ব্যবহারিক' বলে অভিহিত করেছেন, তবে এও বলেছেন যে প্রক্রিয়াটি যদি আইনের মধ্যে থাকে, তাহলেও এর সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
"নির্বাচনের ঠিক আগে করা উচিত নয়"
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে বিশেষ মন্তব্য করে যে এই প্রক্রিয়া নির্বাচনের ঠিক আগে করা উচিত নয়। আদালত বলেছে যে নাগরিকত্বের যাচাই যদি লক্ষ্য হয়, তবে এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিষয়। কমিশনের এত বড় প্রক্রিয়া নির্বাচনের ঠিক আগে শুরু করা উচিত নয়।
আধার কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসেবে মানতে অস্বীকার
নির্বাচন কমিশন আরও স্পষ্ট করেছে যে আধার কার্ডকে একা পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এর উপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলে বলেছে, যদি আপনি কোনো ব্যক্তিকে কেবল নাগরিকত্বের ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তবে এই কাজটি আপনার সীমার বাইরে চলে যাবে। আদালত আরও জানতে চেয়েছে যে এই প্রক্রিয়া যদি এতই জরুরি ছিল, তবে এটি আগে কেন শুরু করা হয়নি।