বিহার বিধানসভা নির্বাচন 2025-এ মহাজোট 'তেজস্বীর প্রতিজ্ঞা' (Tejashwi Ka Pran) নামের একটি নতুন নথি প্রকাশ করেছে। এতে কর্মসংস্থান, নারী ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ন্যায়কে প্রধান বিষয় করা হয়েছে। তেজস্বী যাদব বলেছেন যে, তাঁর সরকার গঠিত হলে প্রতিটি পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়া হবে।
Bihar Election 2025: বিহার বিধানসভা নির্বাচন 2025-এর পরিবেশ সরগরম। এবার মহাজোট ঐতিহ্যবাহী 'ঘোষণাপত্র'-এর পরিবর্তে একটি নতুন রাজনৈতিক নথি প্রকাশ করেছে, যার নাম – 'তেজস্বীর প্রতিজ্ঞা'। এটি কেবল একটি প্রতিশ্রুতি নয়, বরং তেজস্বী যাদবের ব্যক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সাথে জড়িত একটি লিটমাস পরীক্ষা। ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম দফার ভোটের আগে প্রকাশিত এই প্রতিজ্ঞা-পত্র বিহারের রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা দিচ্ছে যে, এখন লড়াই কেবল মহাজোট বনাম এনডিএ-র নয়, বরং তেজস্বী বনাম নীতীশের।
পরিবর্তনের রাজনীতির বার্তা
তেজস্বী যাদব তাঁর ভাষণে বলেছেন, “আমার বয়স কিছুটা কম, কিন্তু কথা পাকা। যা বলি, তাই করি।” এই একটি বাক্যে তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং রাজনীতির নতুন প্রজন্মের উন্মাদনা উভয়ই প্রতিফলিত হয়। তিনি দাবি করেছেন যে, বিহারে এখন পরিবর্তনের ঢেউ চলছে। জনগণ এবার মহাজোটকে ক্ষমতায় আনতে প্রস্তুত। তেজস্বী স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তাঁর সরকার গঠিত হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে এবং ২৬ নভেম্বর থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে সমস্ত অপরাধী গারদের পিছনে থাকবে।
'ন্যায়' থেকে 'তেজস্বীর প্রতিজ্ঞা' পর্যন্ত যাত্রা
২০২০ সালের নির্বাচনে মহাজোট “ন্যায় ও পরিবর্তন” স্লোগান নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল। সেই সময় তেজস্বী রাজনীতির এক তরুণ মুখ ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি একজন পরিপক্ক নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন। গত পাঁচ বছরে তিনি কেবল বিরোধী দলের নেতার ভূমিকাই পালন করেননি, বরং ১৭ মাস নীতীশ কুমারের সাথে ক্ষমতায়ও ছিলেন। এই সময়ে তিনি নিয়োগ অভিযান দ্রুততর করেন এবং 'কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি'কে একটি দৃঢ় শাসন রেকর্ডে পরিণত করেন। এখন সেই একই ইস্যু তাঁদের ঘোষণাপত্রের মেরুদণ্ড, তবে এবার 'প্রতিজ্ঞা'-তে কর্মসংস্থানের সাথে নারী ক্ষমতায়ন, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো নতুন মাত্রা যুক্ত করা হয়েছে।
কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জোর
তেজস্বী যাদবের 'প্রতিজ্ঞা' কেবল চাকরির প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেছেন যে, প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া হবে এবং ১.২৫ কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে। এবার তাঁর মনোযোগ ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যুবকদের জন্য স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম (Startup Ecosystem) তৈরি এবং দক্ষতা উন্নয়নের উপর। তাঁর দাবি যে, বিহারকে এখন 'শ্রমিকদের রাজ্য' নয়, বরং 'নির্মাতাদের রাজ্য' হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

মহিলাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা
মহিলা ভোটারদের নিষ্পত্তিমূলক ভূমিকা উপলব্ধি করে, তেজস্বী যাদব 'মাই বাহেন যোজনা' (My Bahen Yojana) ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি মহিলাকে ২,৫০০ টাকা মাসিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, জীবিকা দিদি এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর (Self Help Groups) মহিলাদের স্থায়ী চাকরি এবং ৩০,০০০ টাকা মাসিক বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তেজস্বী বলেছেন যে, বিহারে নারী সম্মান ও স্বাবলম্বনকে তাঁর সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।
চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য নতুন আশা
তেজস্বী যাদবের ঘোষণাপত্রে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের (Contract Workers) জন্যও বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে স্থায়ী মর্যাদার দাবি জানিয়ে আসা এই কর্মীদের নিয়মিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ সরাসরি এনডিএ সরকারের মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্ককে প্রভাবিত করতে পারে, কারণ তেজস্বীর নীতির লক্ষ্য হল সেইসব শ্রেণীকে আকৃষ্ট করা যাদেরকে এতদিন অবহেলিত বলে মনে করা হয়েছিল।
নীতীশ কুমারের নীতি বনাম তেজস্বীর প্রতিজ্ঞা
নীতীশ কুমার সম্প্রতি 'মুখ্যমন্ত্রী মহিলা কর্মসংস্থান যোজনা' (Chief Minister Women Employment Scheme) শুরু করেছিলেন, যার অধীনে মহিলাদের এককালীন ১০,০০০ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তেজস্বীর পরিকল্পনা এর থেকে এক ধাপ এগিয়ে, কারণ এটি নিয়মিত মাসিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সরাসরি তুলনা তেজস্বীর প্রস্তাবকে আরও বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী করে তোলে। একইভাবে, তিনি ইন্ডিয়া ব্লকের ঘোষণাপত্রে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে নবম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়ার সংকল্পও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা
২০২০ সালে তেজস্বী যাদবের অভিযান সীমাঞ্চল অঞ্চলে মুসলিম ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হয়েছিল। এবার তিনি এই ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন। ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘু কল্যাণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ওয়াকফ আইন (Waqf Act) পর্যালোচনা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনায় স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। এই পদক্ষেপ স্পষ্টভাবে মুসলিম ভোট একত্রিত করার কৌশলের অংশ।
তেজস্বী যাদব ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর সরকার গঠিত হলে সংরক্ষণের সীমা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এর পাশাপাশি, এটিকে সংবিধানের নবম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে যাতে এটি বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত থাকে। এই প্রতিশ্রুতি পিছিয়ে পড়া, দলিত এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুই নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে – নীতীশ কুমার, যিনি একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক, এবং তেজস্বী যাদব, যিনি পরিবর্তনের মুখ। নীতীশ উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার কথা বলছেন, যেখানে তেজস্বী বলছেন যুবকদের স্বপ্ন ও কর্মসংস্থানের কথা। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি প্রজন্মের লড়াইও বটে।












