৬৪ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে আনল RBI, কেন এই সিদ্ধান্ত?

৬৪ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে আনল RBI, কেন এই সিদ্ধান্ত?

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে বিদেশ থেকে ৬৪ টন সোনা ভারতে ফিরিয়ে এনেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আফগানিস্তান সংকটের পর বিদেশী কোষাগারের উপর আস্থা কমার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন RBI এর কাছে মোট ৮৮০.৮ টন সোনা রয়েছে, যার মধ্যে ৫৭৫.৮ টন ভারতে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

অপারেশন গোল্ড: বৈশ্বিক উত্তেজনা এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) তার সম্পদের সুরক্ষার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে RBI বিদেশ থেকে তার ৬৪ টন সোনা ভারতে ফিরিয়ে এনেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আফগানিস্তানে তালেবান দখলের পর বিদেশী ব্যাংকগুলিতে রাখা সোনার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত RBI এর কাছে মোট ৮৮০.৮ টন সোনা রয়েছে, যার মধ্যে ৫৭৫.৮ টন এখন ভারতের কোষাগারে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

বিদেশ থেকে সোনা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কেন?

আরবিআই-এর এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি। গত কয়েক বছরে এমন অনেক উদাহরণ সামনে এসেছে যা বিদেশী কোষাগারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই যুদ্ধের সময় আমেরিকা এবং ইউরোপের G-7 দেশগুলি রাশিয়ার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার ফ্রিজ করে দিয়েছিল। একইভাবে আফগানিস্তানে তালেবানের দখলের পর আমেরিকা সেখানকার সেন্ট্রাল ব্যাংকের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আটকে দিয়েছিল।

এই ঘটনাগুলির পর বিশ্বের অনেক দেশ উপলব্ধি করেছে যে, যদি কোনো দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধ বা কূটনৈতিক বিবাদ হয়, তাহলে তাদের জমা সম্পত্তি বিপদে পড়তে পারে। এখন এই ভয় রয়েছে যে, বিদেশী ব্যাংকগুলিতে রাখা অর্থ বা সোনা একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই কারণেই ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তার মূল্যবান সম্পদ — অর্থাৎ সোনা, নিজের দেশেই রাখা বেশি নিরাপদ হবে।

আরবিআই-এর 'অপারেশন গোল্ড' কিভাবে পরিচালিত হলো?

রিজার্ভ ব্যাংক মার্চ ২০২৩ থেকে একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই সময়ে ব্যাংক ধীরে ধীরে বিদেশ থেকে রাখা সোনা ভারতে আনা শুরু করে। শুধুমাত্র মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর মধ্যেই প্রায় ৬৪ টন সোনা ভারতে পৌঁছেছে। এর আগেও আরবিআই বিভিন্ন ধাপে বিদেশী ব্যাংকগুলি থেকে সোনা ফিরিয়ে এনেছিল।

গত দেড় বছরে আরবিআই মোট ২৭৪ টন সোনা বিদেশ থেকে ভারতে আনতে সফল হয়েছে। এই সোনা আগে ইংল্যান্ডের ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত ব্যাংক অফ ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টস-এর কোষাগারে রাখা ছিল। এখন এই সোনা ভারতীয় কোষাগারে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

ভারতের কোষাগারে কত সোনা আছে?

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর শেষ পর্যন্ত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে মোট ৮৮০.৮ টন সোনা মজুত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭৫.৮ টন সোনা এখন ভারতের নিজস্ব কোষাগারে নিরাপদে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ২৯০.৩ টন সোনা এখনও ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অফ ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টস-এর কাছে আছে। এছাড়াও, প্রায় ১৪ টন সোনা গোল্ড ডিপোজিট হিসেবে রাখা হয়েছে।

যদি ৩১ মার্চ ২০২৫ এর তথ্যের সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে সে সময় আরবিআই-এর কাছে ৮৭৯ টন সোনা ছিল। তার মধ্যে ৫১২ টন ভারতে এবং ৩৪৮.৬ টন বিদেশে ছিল। এর মানে হলো, ছয় মাসে বিদেশ থেকে ৬৪ টন সোনা ভারতে আনা হয়েছে এবং বিদেশী হোল্ডিং কমানো হয়েছে।

বিদেশী দেশগুলির উপর আস্থা কেন কমলো?

পশ্চিমা দেশগুলির নীতিগুলি বহুবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, রাজনৈতিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা একটি সাধারণ অস্ত্র হয়ে উঠেছে। আমেরিকা এবং ইউরোপ আগেও অনেক দেশের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে সম্পত্তি ফ্রিজ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই কারণেই এখন চীন, তুরস্ক এবং ভারতের মতো অনেক উদীয়মান অর্থনীতি তাদের সোনা আবার নিজেদের দেশে ফিরিয়ে আনছে।

এছাড়াও, বিদেশী কোষাগারে রাখা সোনা নিরাপদ বলে বিবেচিত হলেও, তার উপর দেশের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যে কোনো আন্তর্জাতিক সংকট বা ব্যাংকিং সিদ্ধান্তের পরিস্থিতিতে সেটিতে প্রবেশ করা কঠিন হতে পারে। ভারত এই ঝুঁকিগুলি এড়াতে চায় এবং এই কারণেই সোনার ‘ঘরে ফেরা’ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।

ভারতের অবস্থান এখন আরও শক্তিশালী

সোনা শুধু আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক নয়, এটি দেশের আর্থিক শক্তিরও সূচক। আরবিআই-এর এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের আর্থিক স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা উভয়ই শক্তিশালী হয়েছে। এর মাধ্যমে এই বার্তাও গেছে যে, ভারত এখন তার সম্পদ সম্পর্কে আত্মনির্ভরশীল এবং সতর্ক উভয়ই।

Leave a comment
 

Latest News