টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, কিন্তু পরিবার এখনো নীরব। পিতার সমাজের কটূক্তির কারণে গুলি করা। পুলিশের তদন্তে অনেক রহস্য উন্মোচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাধিকা যাদব হত্যা মামলা: জাতীয় স্তরের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবের হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের পরিবারের নীরবতা এখনো বজায় আছে। মা-ও সামনে আসেননি, ভাইও না, এমনকি কাকাও না। পুলিশের প্রাথমিক বয়ান দেওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা মিডিয়া বা বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে চলছেন। এই নীরবতা পুরো ঘটনাটিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
পিতা মেরেছিলেন চারটি গুলি, কারণ ছিল 'সমাজের কটূক্তি'
১০ জুলাই সকাল ১১টায় রাধিকা যখন বাড়িতে খাবার তৈরি করছিলেন, তখন তার বাবা দীপক যাদব তাকে চারটি গুলি করেন। রাধিকা ঘটনাস্থলেই মারা যান। দীপক পুলিশকে দেওয়া তার বয়ানে বলেন যে, লোকেরা তাকে মেয়ের উপার্জনে জীবন কাটানো ব্যক্তি বলত, যা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল। এর কারণে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি রাধিকাকে টেনিস একাডেমি বন্ধ করতেও বলেছিলেন, কিন্তু যখন সে রাজি হয়নি, তখন গুলি করেন।
হত্যাকাণ্ডের খবর হাসপাতাল থেকে পায় পুলিশ
দীপক যাদবের ভাই কুলদীপ যাদব এবং তার ছেলে রাধিকাকে গুলি লাগার পর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে হত্যার খবর দেয়। পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন কুলদীপ কেবল জানান যে, রাধিকাকে গুলি করা হয়েছে। তিনি অন্য কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার করেন।
পরিবারের নীরবতা বাড়িয়েছে প্রশ্ন
রাধিকার কাকা, মা এবং ভাই ধীরজ এখন পর্যন্ত কোনো মিডিয়া সংস্থার সঙ্গে কথা বলেননি। মা তো পুলিশে বয়ান দিতেও রাজি হননি। বহুবার মিডিয়া যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সবাই কথা বলতে অস্বীকার করেছে। এমনকি কাকা কুলদীপও ফোনে কথা বলতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন।
পরিবারের এই আচরণ মামলাটিকে রহস্যময় করে তুলেছে
এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয় যে, কোনো তরুণীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার পুরো পরিবার চুপ করে বসে থাকবে। সাধারণত, এমন ঘটনায় পরিবার ন্যায়বিচার চায়, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে এবং পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করে, কিন্তু রাধিকার ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, পরিবার কি কিছু লুকোচ্ছে? তাদের কি কোনো ভয় আছে, নাকি তারা কোনো চাপে আছে?
মোবাইল রিপোর্ট থেকে মিলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
পুলিশ বর্তমানে রাধিকা এবং তার বাবা দীপক যাদবের মোবাইল ফোনের তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, কল ডিটেইলস, চ্যাট এবং লোকেশন হিস্টোরি থেকে এই মামলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যেতে পারে। পুলিশ এও জানার চেষ্টা করছে যে, দীপক আগে থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন, নাকি এটা হঠাৎ নেওয়া কোনো পদক্ষেপ ছিল।
রাধিকার কেরিয়ার এবং তার পরিশ্রম
রাধিকা যাদব ছিলেন একজন প্রতিভাবান টেনিস খেলোয়াড়। তিনি বিভিন্ন রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন এবং পদক জিতেছিলেন। তিনি একাডেমি খুলে তরুণদের টেনিস শেখাতেন। টেনিস তার পরিচয় এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। পিতার জন্য এই আত্মনির্ভরতা সম্ভবত অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল।
প্রতিবেশী এবং আশেপাশের লোকেরা নিশ্চিত করেনি
দীপক তার বয়ানে বলেছিলেন যে, তিনি একাডেমি বন্ধ করতে বলেছিলেন, কিন্তু পুলিশ আশেপাশের লোকেদের কাছ থেকে এমন কোনো তথ্য পায়নি। এমনকি কেউ কখনো রাধিকা এবং তার বাবার মধ্যে কোনো বিবাদ দেখেনি বা শোনেনি। এই বৈপরীত্যও তদন্তকে আরও জটিল করে তুলেছে।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও কারণ বলতে পারছেন না
হত্যাকাণ্ডের পর দীপকের চাচাতো ভাইরা মিডিয়ার সঙ্গে সামান্য কিছু কথা বলেছেন, কিন্তু তারাও স্পষ্টভাবে বলেননি যে, এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো। তাদের বক্তব্য ছিল যে, তারাও পুরোটা জানেন না এবং তারা এই দুঃখজনক ঘটনায় স্তম্ভিত।
পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ পরিবারের আচরণ
পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, পরিবারের নীরবতা তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছে। পুলিশ চায় রাধিকার মা এবং ভাই এগিয়ে এসে তাদের বক্তব্য পেশ করুক, যাতে সত্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু যতক্ষণ না তারা বয়ান দেয়, ততক্ষণ অনেক দিক নিশ্চিত করা যাবে না।