‘ঠগস অফ হিন্দোস্তান’-এর জন্য দীপিকা, আলিয়া এবং শ্রদ্ধার ‘না’, আমির নিজেই স্বীকার করলেন ভুল, বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে তৈরি হওয়া ছবিটি শেষে চরম হতাশায় পর্যবসিত।
Aamir Khan: বলিউডে মিস্টার পারফেকশনিস্ট হিসাবে পরিচিত আমির খানের (Aamir Khan) সিনেমা নিয়ে সবসময় দর্শকদের মধ্যে একটা বিশেষ আগ্রহ থাকে। কিন্তু যদি এমন হয় যে আমির খানের কোনো সিনেমা করার জন্য তাবড় তাবড় অভিনেত্রীরা রাজি হননি? এমনটাই ঘটেছিল, আর সেই সিনেমাটি ছিল 'ঠগস অফ হিন্দোস্তান' (Thugs of Hindostan)।
সম্প্রতি আমির খান একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর এই বিগ বাজেট ছবিতে কাজ করার জন্য দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভাট এবং শ্রদ্ধা কাপুর পর্যন্ত রাজি হননি। এই ঘটনা শুধু অবাক করার মতোই নয়, বরং এটাও দেখায় যে, মাঝে মাঝে সুপারস্টারদেরও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
‘ঠগস অফ হিন্দোস্তান’ : বিরাট প্রত্যাশা, চরম হতাশা
২০১৮ সালে যখন 'ঠগস অফ হিন্দোস্তান' মুক্তি পায়, তখন দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল, আমির খান 'দঙ্গল' এবং 'পিকে'-র মতো ছবিগুলির পর আবারও নতুন কিছু এবং শক্তিশালী কিছু নিয়ে আসবেন। ছবির বাজেটও ছিল বিশাল, এবং ট্রেলার থেকে শুরু করে স্টার কাস্ট—সবকিছুই ছিল জমকালো।
কিন্তু সিনেমা হলে ছবিটি আসার পর দর্শক এবং সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তো দূর, বরং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসে। গল্পের দুর্বলতা ছিল, ভিএফএক্স হতাশ করেছিল, এবং আমির খানের চরিত্রও দর্শকদের বিশেষ পছন্দ হয়নি। ছবিটি ফ্লপ হয় এবং আমিরও পরে এটিকে তাঁর অন্যতম বড় ভুলগুলির মধ্যে একটি হিসাবে স্বীকার করেন।
কেন অভিনেত্রীরা এই ছবি করতে চাননি?
আমির খান সম্প্রতি একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা জানান যে, ছবির কাস্টিংয়ের সময়েই অনেক সমস্যা হয়েছিল। তিনি বলেন:
'যখন আমরা 'ঠগস অফ হিন্দোস্তান'-এর কাস্টিং করছিলাম, তখন কোনো অভিনেত্রীই ছবিতে কাজ করতে রাজি ছিলেন না। দীপিকা রাজি হননি, আলিয়াও না বলেছিলেন এবং শ্রদ্ধা কাপুরও ছবিটি করতে অস্বীকার করেন।'
এই কথা শুনে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীও অবাক হয়ে যান। আমির স্পষ্ট করেন যে, এই অভিনেত্রীরা ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ার পর নিজেদের এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত মনে করেননি।
ক্যাটরিনা কাইফ ছিলেন শেষ বিকল্প
যখন অন্যান্য নামী অভিনেত্রীরা ছবিটি করতে রাজি হননি, তখন আমির এবং তাঁর টিম ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ক্যাটরিনা এর আগে 'ধুম ৩'-এ আমিরের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, এবং তাঁদের জুটিকে বেশ পছন্দও করা হয়েছিল।
যদিও ক্যাটরিনার চরিত্রটি ছবিতে সীমিত এবং দুর্বল ছিল, তবুও তিনি অভিনয় করেন। ছবিতে দ্বিতীয় মহিলা শিল্পী হিসাবে ফতিমা সানা শেখও ছিলেন, যিনি এর আগে 'দঙ্গল'-এ আমিরের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
ফতিমা সানা শেখকে নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন
ফতিমা সানা শেখের কাস্টিং নিয়েও অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছিল। আমির খান জানান: 'ভিক্টর (পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ আচার্য) এবং আদিত্য চোপড়ার চিন্তা ছিল, ফতিমাকে আমার বিপরীতে দর্শক হয়তো মেনে নেবে না, কারণ 'দঙ্গল'-এ আমি তাঁর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।'
আমির এই চিন্তাভাবনার সমালোচনা করে বলেন যে, দর্শক অভিনেতাদের তাঁদের চরিত্র থেকে আলাদা করে দেখতে পারেন। তিনি আরও বলেন:
'আমি তো আসলে তাঁর বাবা নই, আবার বয়ফ্রেন্ডও নই। আমরা তো কেবল অভিনেতা। যদি আমরা ধরে নিই যে দর্শক এত কিছু বুঝতে পারে না, তবে আমরা তাঁদের কম মূল্যায়ন করছি।'
এই ছবি কি আমিরের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল?
'ঠগস অফ হিন্দোস্তান'-এর ব্যর্থতা আমিরকে নাড়িয়ে দেয়। ছবির ব্যর্থতার পর তিনি লম্বা বিরতি নেন এবং চিত্রনাট্য নিয়ে আরও সতর্ক হন। যদিও তাঁর পরবর্তী ছবি 'লাল সিং চড্ডা'ও বক্স অফিসে সফল হয়নি, কিন্তু এখন তিনি আবার শক্তিশালী প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই পুরো ঘটনা থেকে একটা কথা স্পষ্ট হয়ে যায়— অভিনেতা যতই বড় হোক না কেন, প্রতিটি ছবিই একটা ঝুঁকি। আর যখন একটি ছবির জন্য প্রথম সারির তিনজন অভিনেত্রী রাজি হন না, তখন বোঝা যায় যে ছবির সঙ্গে কিছু একটা সমস্যা ছিলই।