TMC: কালো বিলের প্রতিবাদে সংসদে তৃণমূলের বিক্ষোভ বিজেপি-কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ

TMC: কালো বিলের প্রতিবাদে সংসদে তৃণমূলের বিক্ষোভ বিজেপি-কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ

অধিবেশনের শেষদিনেও নজর কাড়ল তৃণমূল

লোকসভা ও রাজ্যসভা— দুই কক্ষেই শেষদিন পর্যন্ত উত্তাল থাকল তৃণমূল। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে স্লোগান, প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান সাংসদরা। বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দেগে বিরোধী-স্বরকে জোরালো করলেন তাঁরা।

সকালেই সংসদ চত্বরে রঙিন বিক্ষোভ

অধিবেশনের প্রতিদিন সকালেই মকরদ্বারের সামনে তৃণমূল সাংসদদের জমায়েত ছিল নজরকাড়া। হাতে প্ল্যাকার্ড, বাংলায় গান, আবৃত্তি— সব মিলিয়ে প্রতিবাদকে আঞ্চলিক রঙে রাঙিয়ে তুলেছিল দলটি। এসআইআর ও বাংলা ভাষা ইস্যুতে তাঁদের এই লড়াই সংসদের ভেতর-বাইরে সমানভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল

বিহারে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার নামে ভোটচুরির চক্রান্ত চলছে— প্রথম দিন থেকেই এই অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। শাসকদলের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছিল অন্য বিরোধীরাও। কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে সংসদ থেকে রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই।

মিছিল-প্রতিবাদে তৃণমূলের সক্রিয়তা

নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তাও ছিল তৃণমূল। বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে সংসদ থেকে বিরোধীরা মিছিল বার করলে, সেখানেও সবথেকে বেশি নজর কাড়েন তৃণমূল সাংসদরা। দলীয় অভিযোগ, তাঁদের থামাতেই পুলিশ নেমে আসে অস্বাভাবিক কড়া হাতে।

মহিলা সাংসদদের হেনস্থার অভিযোগ

তৃণমূলের দাবি, কমিশনের সামনে প্রতিবাদ চলাকালীন মহিলা সাংসদদের হেনস্থা করা হয়, থানায় বসিয়ে রাখা হয় তাঁদের। দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল, মমতাবালা ঠাকুররা তবে ঘেরাটোপ ভেদ করে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রতিবাদের মঞ্চে। তৃণমূলের ভাষ্যে, প্রতিবাদের এ এক নজিরবিহীন দৃশ্য।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যে ভূমিকা

অধিবেশনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল বিরোধীদের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী নির্ধারণ। সুদর্শন রেড্ডির নাম ঘোষণার আগে আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। তৃণমূলের এই ভূমিকা বিরোধী ঐক্যের ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

‘কালো বিল’ আখ্যায় মোদি সরকারকে আক্রমণ

১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সরাসরি সরব হয়েছে তৃণমূল। তাঁদের অভিযোগ, কার্যত সুপার ইমার্জেন্সি ফিরিয়ে আনতে চাইছে মোদি সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলকে বলেছেন ‘‘কালো দিনে কালো বিল’’। বিজেপির অগণতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি।

লোকসভার ভিতরে হাতাহাতির অভিযোগ

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এসআইআর থেকে নজর ঘোরাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিল এনেছেন। তৃণমূলের অভিযোগ, বিল পেশের সময় মহিলা সাংসদদের উপর হামলা চালিয়েছেন কিরেণ রিজিজু ও বিজেপি সাংসদ রভনিত বিট্টু। আবু তাহের খানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শতাব্দী রায়, মহুয়া মৈত্ররা।

অমিত শাহকে সরাসরি তোপ রাজ্যসভায়

রাজ্যসভায় উপস্থিত অমিত শাহকে লক্ষ্য করে প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে স্লোগান দেন তৃণমূল সাংসদরা। ওয়েলে নেমে চলল তীব্র বিক্ষোভ। বিরোধী স্বর তুলে দল জানিয়ে দিল, সংসদে তাঁদের ভূমিকা কেবল নীরব দর্শকের নয়, বরং সরব প্রতিপক্ষ।

ডেরেকের আক্রমণ: দায় কেন্দ্রেরই

অধিবেশনের শেষে ডেরেক ও’ব্রায়েন সরাসরি মোদি সরকারকে দায়ী করে বলেন, ‘‘সংসদ সঠিকভাবে না চলার সম্পূর্ণ দায় সরকারের। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে তাঁদেরই।’’ তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট— তৃণমূল এবারও বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছে।এই প্রতিবাদী ভঙ্গিমা থেকে পরিষ্কার, সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে তৃণমূলের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি আলোচিত।

Leave a comment