বুথই এখন মূল ময়দান দ্বন্দ্ব ভুলিয়ে তৃণমূলের সম্পূর্ণ একাগ্রতা

বুথই এখন মূল ময়দান দ্বন্দ্ব ভুলিয়ে তৃণমূলের সম্পূর্ণ একাগ্রতা

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে উত্তরবঙ্গে ১,৪৮০টির বেশি বুথে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দক্ষিণবঙ্গেও তাদের অবস্থান দুর্বল, যেখানে প্রায় ৩,৩৮৭টি বুথে তারা পিছিয়ে রয়েছে। এই বুথগুলিকে ফের তৃণমূলের হাতছানি করে তুলতে এখন পুরো দল একযোগে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বিধানসভা ভোটে সফলতার চাবিকাঠি এখানেই নিহিত। তাই শাসকদল এখন নিজেদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এই পিছিয়ে থাকা বুথগুলির সংগঠনে জোর দিচ্ছে।

অভিষেকের নেতৃত্বে বুথ পর্যায়ের জনসংযোগে তৃণমূলের জোরালো পদক্ষেপ

কলকাতায় একাধিক জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলীয় নেত্রী মমতার পুত্র এবং রাজ্য বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তিনি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন, "বুথ যার ভোট, সেই বুথ ধরে রাখতে হবে।" এই নীতিমালা মেনে দল নেতাদের প্রতিটি বুথে গিয়ে সক্রিয় জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন অভিষেক। বিশেষ করে যেসব বুথে দল হারিয়েছে, সেখানেও শক্তিশালী প্রচারণা চালাতে হবে। শাসক দলের এই পন্থা ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে সমান নজর, ভোট ময়দানে পূর্ণ প্রস্তুতি

রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ দুই প্রান্তেই তৃণমূল বুথ ভিত্তিক জোরালো সংগঠন গড়ে তুলছে। ৮০ হাজার ৪৯৯টি বুথের মধ্যে ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মালদহ, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর এবং বহরমপুর জেলাগুলিতে ব্যাপক সাংগঠনিক কাজ চলছে। এই অঞ্চলগুলো রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে ভোটাররা ব্যাপক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র। বিশেষ করে বিরোধী দল বিজেপির প্রভাব বাড়তে থাকায়, তৃণমূলের নজর বুথ স্তরে জোরদার হয়েছে।

বুথের নেতারাই ভোটের মূল নেতা’, স্বচ্ছতা ও কর্মদক্ষতার ওপর জোর

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাদের পরিষ্কার জানিয়েছেন, যাঁরা স্বচ্ছ ও জনবান্ধব, তাঁদেরই বুথের দায়িত্ব দেওয়া হবে। যে নেতারা জনসাধারণের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ রাখেন এবং দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করেন, তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বুথে বুথে নেতা-কর্মীদের যোগাযোগ বাড়িয়ে ভোটারদের আস্থা অর্জনই এখন দলের মূল লক্ষ্য। এই পরিকল্পনার সফলতাই আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সাফল্যের বড় ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে।

বিজেপি জয়ের বুথেও নজর, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা লক্ষ্য

যেসব বুথে বিজেপি জিতেছে, সেগুলিকেও দলের চোখ থেকে সরানো হয়নি। ওই এলাকাগুলোতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার কথাকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের নানামুখী দুর্নীতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অবিচার ও সামাজিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ তুলে জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করাই তৃণমূলের বর্তমান প্রধান প্রচার কৌশল। এই ধরনের জনমত গড়ে তোলা ভোটের মাঠে দলের পক্ষে শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে।

অভিষেকের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে বৈঠক, সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক জোর

সম্প্রতি বহরমপুর জেলাসহ একাধিক জেলায় সংগঠন বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের অভিজ্ঞ বিধায়ক হুমায়ুন কবীরও। যদিও তাঁর কিছু বিতর্কিত মন্তব্য দলের ভিতরে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে, তবুও বৈঠকে দিকনির্দেশনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংঘাত পেছনে ফেলে বুথ পর্যায়ের কাজকর্মে মনোযোগ দিতে বার্তা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাংগঠনিক জেলাগুলোতে মন্ত্রিদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে পরিষেবা পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যা দলের জনমত উন্নয়নে সহায়ক হবে।

দ্বন্দ্ব ভুলে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ বুথ পর্যায়ে, ভোটের ময়দান এখন বুথেই

শাসক দলের অভ্যন্তরে থাকা দ্বন্দ্ব ভুলে, এখন পুরো দল বুথ ভিত্তিক কাজকর্মে একযোগে মনোনিবেশ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটে জয়ের জন্য দলে ঐক্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই মুহূর্তে তৃণমূলের লক্ষ্য পরিষ্কার— বুথ পর্যায়ে পৌঁছনো, ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে পাল্টা রাজনীতি চালানো। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই পুরো পরিকল্পনা সফল করতে পারলে তৃণমূলের বিজয় নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন দলের সমর্থক ও পর্যবেক্ষকরা।

বুথ পর্যায়ের সফল সংগঠনেই নিহিত ভবিষ্যত

পরবর্তী বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই শত শত পিছিয়ে থাকা বুথে পুনরুজ্জীবন ঘটানো। অভিষেকের নির্দেশনা ও মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনে এখন পুরো দল বুথে পৌঁছনোর কাজ করছে। বুথ পর্যায়ে নেতৃত্ব ও সংগঠন শক্তিশালী না হলে ভোটে সফলতা সম্ভব নয়। তাই বুথ ভিত্তিক সংগ্রাম এবং জনসংযোগই হবে ২০২৫ সালের রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দানের মূল কাহিনি।

Leave a comment