ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: কানাডার কর প্রত্যাহার না করলে বাণিজ্য আলোচনা নয়

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: কানাডার কর প্রত্যাহার না করলে বাণিজ্য আলোচনা নয়

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না কানাডা কিছু বিশেষ কর (ট্যাক্স) প্রত্যাহার করতে রাজি হয়। ট্রাম্প এই মন্তব্যটি ফক্স নিউজের 'সান্ডে মর্নিং ফিউচার্স উইথ মারিয়া বার্টিরোমো' অনুষ্ঠানে করেছেন।

মার্কিন-কানাডা বাণিজ্য আলোচনা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন ফাটল দেখা দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার ডিজিটাল পরিষেবা কর (Digital Services Tax) আরোপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেছেন যে, যতক্ষণ না এই কর প্রত্যাহার করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকা কানাডার সঙ্গে কোনো বাণিজ্য আলোচনা করবে না।

ফক্স নিউজের 'সান্ডে মর্নিং ফিউচার্স উইথ মারিয়া বার্টিরোমো' শো-তে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেন যে, কানাডার এই কর সরাসরি মার্কিন কোম্পানিগুলির উপর আঘাত, যার ফলে গুগল, অ্যামাজন এবং মেটা-র মতো প্রযুক্তিগত দিকপালরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন, এই কর মার্কিন প্রযুক্তির উপর সরাসরি আঘাত এবং এটি বরদাস্ত করা হবে না। যতক্ষণ না কানাডা এটি প্রত্যাহার করতে রাজি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এগোনো যাবে না।

ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমেরিকা ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার গতি বাড়ানো হচ্ছিল। কিন্তু এই কর বিতর্ক দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি করেছে।

ডিজিটাল পরিষেবা কর নিয়ে কেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প?

আসলে, কানাডার সরকার সম্প্রতি ডিজিটাল পরিষেবা কর लागू করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার অধীনে গুগল, অ্যামাজন এবং মেটা-র মতো কোম্পানিগুলির আয়ের উপর কর আদায় করা হবে। কানাডার বক্তব্য হল, দেশে ডিজিটাল পরিষেবা থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অর্জনকারী বিদেশি কোম্পানিগুলিও করদাতাদের দায়িত্ব পালন করুক।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে অনুচিত মনে করছে। ট্রাম্প কানাডার উপর অভিযোগ করেছেন যে, তারা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে নিশানা করে তাদের অর্থনীতিকে সুবিধা দিতে চাইছে। শুক্রবারই ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ-এ পোস্ট করে এটিকে "আমেরিকার উপর খোলাখুলি আক্রমণ" বলে অভিহিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে আগামী ৭ দিনের মধ্যে কানাডা থেকে আসা পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

ট্রাম্পের টিকটক নিয়েও বড় ঘোষণা

একই ইন্টারভিউতে ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন যে, টিকটকের জন্য তিনি একজন সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বলেন, এই ক্রেতা একাধিক ধনী বিনিয়োগকারীর একটি গোষ্ঠী, যাদের নাম আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। যদিও ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি যে এই গোষ্ঠী টিকটকের কত অংশ অধিগ্রহণ করবে এবং এতে কোনো মার্কিন কোম্পানির অংশীদারিত্ব থাকবে কিনা।

কানাডা সরকারের বক্তব্য

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি, তবে তাঁর সরকার এর আগে ডিজিটাল ট্যাক্সের পক্ষে কথা বলেছে। কানাডীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই কর স্থানীয় ডিজিটাল বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। তাঁদের যুক্তি হল, কানাডীয় কোম্পানিগুলির উপর কর লাগে, কিন্তু গুগল, অ্যামাজন, মেটা-র মতো বিদেশি কোম্পানিগুলি কর ফাঁকি দেয়, যা সঠিক নয়।

তবে, কানাডাকে এখন মার্কিন শুল্কের হুমকির সম্মুখীন হতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আমেরিকা কানাডার পণ্যের উপর ভারী শুল্ক আরোপ করে, তাহলে অটো, কৃষি এবং শক্তি খাতেও এর বড় প্রভাব দেখা যেতে পারে।

ট্রাম্পের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের বছরে ট্রাম্প বাণিজ্য ও কর নীতির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির সমর্থন করে তাঁর ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছেন। তবে এর ফলে কানাডার মতো ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এরই মধ্যে, আমেরিকার বাণিজ্যিক সংগঠনগুলি ট্রাম্প সরকারের কাছে আবেদন করেছে যে আলোচনার পথ খোলা রাখা হোক, কারণ কানাডা আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী। দুই দেশের মধ্যে প্রতিদিন কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়, যেখানে বাধা উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে।

Leave a comment