আলাস্কায় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সাক্ষাৎ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এতে ইউক্রেন যুদ্ধ সহ অনেক আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলাস্কা: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) এবং রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) মধ্যে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত বৈঠকটি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই সাক্ষাতে ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine War) সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও, বৈঠকটি ইতিবাচক পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তির ঘোষণা করা হয়নি।
এই বৈঠকটি অনেক দিক থেকে ঐতিহাসিক ছিল কারণ প্রায় এক দশক পর পুতিন আমেরিকার মাটিতে পা রেখেছেন। বৈঠকের পর দুই নেতাই গণমাধ্যমকে संबोधित করেন, কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
- উষ্ণ অভ্যর্থনা: আলাস্কায় পৌঁছানোর পর রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প পুতিনকে রাজকীয় ভঙ্গিতে স্বাগত জানান। রেড কার্পেটে দুই নেতার প্রবেশের সময় আমেরিকান বিমান বাহিনীর B-2 স্টিলথ বোমারু বিমান এবং F-22/F-35 যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়, যা এই সাক্ষাৎকে আরও জমকালো করে তোলে।
- এক দশক পর আমেরিকায় পুতিন: প্রায় ১০ বছর পর এই প্রথম পুতিন কোনো বড় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আমেরিকার মাটিতে পা রাখলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকাতে এটাই তার প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি।
- ৩ ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠক: দুই নেতার মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি বাণিজ্য, শুল্ক এবং বিশ্ব নিরাপত্তা-এর মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
- কোনো চুক্তি নয়, তবে ইতিবাচক ইঙ্গিত: যদিও বৈঠকে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি, তবে দুই নেতাই পরিবেশকে "ইতিবাচক এবং গঠনমূলক" বলে বর্ণনা করেছেন।
- পুরানো বন্ধুত্বের ঝলক: ট্রাম্প বৈঠকের সময় বলেন, এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমেরিকা ও রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করে, তখন ভালো ফল পাওয়া যায়। পুতিনও ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন যে দুই দেশের সম্পর্ক "বাণিজ্যিক এবং গঠনমূলক" হয়েছে।
- বাইডেনের উপর পরোক্ষ আঘাত: পুতিন পরোক্ষভাবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে নিশানা করেন। তিনি বলেন যে যদি ২০২২ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হতেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হত না।
- বক্তৃতায় পার্থক্য: বৈঠকের পর পুতিন প্রায় ৮ মিনিট ধরে গণমাধ্যমকে সম্বোধন করেন, যেখানে ট্রাম্প মাত্র ৪ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ট্রাম্প সংক্ষেপে শান্তি এবং পরবর্তী আলোচনার আশা প্রকাশ করেন।
- শুল্কে ছাড়ের আশা: বৈঠকের পর শুল্কের বিষয়টি আলোচনায় ছিল। যখন ট্রাম্পকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলোর উপর চাপানো ৫০% শুল্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বলেন, এখন এ বিষয়ে ভাবার দরকার নেই, তবে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এটি বিবেচনা করা যেতে পারে।
- প্রোটোকলে পরিবর্তন: এই শীর্ষ সম্মেলনটি হঠাৎ করে এবং দ্রুত গতিতে আয়োজন করা হয়েছিল। ট্রাম্প এমনকি বলেছিলেন যে, "এটি একটি ফিলিংস মিটিং। যদি সবকিছু ভুল হয়, তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যাব।" এই বক্তব্য এই সাক্ষাতের অনানুষ্ঠানিক এবং অস্বাভাবিক শৈলীকে তুলে ধরে।
বৈঠকের শেষে পুতিন বলেন যে পরবর্তী সাক্ষাৎ "মস্কোতে হলে ভালো হয়।" একই সময়ে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শীঘ্রই দুই নেতার মধ্যে আবার আলোচনা হতে পারে। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা করা হয়নি।