ট্রাম্পকে শিক্ষা বিভাগ বন্ধের অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট

ট্রাম্পকে শিক্ষা বিভাগ বন্ধের অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট

আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করার অনুমতি দিয়েছে। ১,৪০০ কর্মীর পুনর্বহাল স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের তিনজন বিচারপতি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।

মার্কিন শিক্ষা: আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করার অনুমোদন দিয়েছে। আদালত ১,৪০০ কর্মীকে পুনরায় কাজে বহাল করার নিম্ন আদালতের নির্দেশ বাতিল করেছে। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেছেন। এখন ট্রাম্পের শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করার আইনি পথ সুগম হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পদক্ষেপকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি শিক্ষা বিভাগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। আদালত নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে, যেখানে ১,৪০০ কর্মীকে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এই সিদ্ধান্ত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আসে। যদিও তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। জাস্টিস সোনিয়া সোটোমায়োর একে সংবিধানের কাঠামোর উপর আঘাত হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে বিভাগগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা দেয়।

বিচারকদের দ্বিমত এবং সতর্কতা

জাস্টিস সোটোমায়োরের সঙ্গে জাস্টিস এলেনা কাগান এবং কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসনও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাঁরা লিখেছেন যে এই নজির ভবিষ্যতে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে।

জাস্টিস সোটোমায়োর তাঁর দ্বিমত পোষণ করে লেখেন, "যদি কোনো বিভাগ প্রয়োজনীয় কর্মী রাখতে না পারে, তবে সেই বিভাগ কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়।"

শিক্ষামন্ত্রী এর বিবৃতির মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল

শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমোহন ১১ই মার্চ ঘোষণা করেছিলেন যে বিভাগটি তার অর্ধেকের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করবে। এর পরে, ২০শে মার্চ রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ (Executive Order) জারি করেন, যাতে শিক্ষা বিভাগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য সমস্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ডেমোক্র্যাট এবং ইউনিয়ন সংগঠনগুলির আপত্তি

এই আদেশ নিয়ে ডেমোক্রেটিক নেতা এবং শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি তীব্র আপত্তি জানায়। দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল—একটি ডেমোক্রেটিক রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে এবং অন্যটি ম্যাসাচুসেটস-এর স্কুল ও শিক্ষকদের ইউনিয়ন কর্তৃক। এই উভয়পক্ষই ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে শিশুদের মৌলিক শিক্ষার অধিকারের উপর আঘাত হিসাবে বর্ণনা করেছে।

ডেমোক্রেসি ফরওয়ার্ডের প্রধান স্কাই পেরিমান বলেন, "এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষার গ্যারান্টিকে দুর্বল করে।"

নিম্ন আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি

বস্টনের জেলা আদালতের বিচারক মিয়ং জুন মে মাসে তাঁর আদেশে বলেছিলেন যে এত বৃহৎ পরিমাণে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে শিক্ষা বিভাগ সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন যে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হল বিভাগটিকে দুর্বল করে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করা।

বিচারক তাঁর আদেশে লিখেছিলেন, "যে বিভাগ তার কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী রাখতে পারে না, সেই বিভাগের অস্তিত্ব থাকতে পারে না।" পরে, প্রথম সার্কিট কোর্ট অফ আপিলও এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। কিন্তু ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এবং এখন সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের আদেশ বাতিল করেছে।

ট্রাম্পের নিশানায় কোন কোন বিভাগ রয়েছে?

এই ঘটনাটি কেবল শিক্ষা বিভাগেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ ধরনের সমর্থন পেতে থাকেন, তবে তিনি কনজিউমার ফাইনান্সিয়াল প্রোটেকশন ব্যুরো, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর মতো আরও অনেক স্বাধীন প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করতে পারেন।

ট্রাম্প কেন শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করতে চান?

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ করবেন। অর্থাৎ, শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ ফেডারেল সরকারের হাত থেকে রাজ্যের হাতে অর্পণ করা হবে।

রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা দীর্ঘদিন ধরে এই মতের পক্ষে রয়েছেন। তাঁদের মতে, শিক্ষার নীতি ও নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় চাহিদা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত, কেন্দ্রীয় স্তর থেকে নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়।

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হতে পারে?

শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার ফলে আমেরিকায় শিক্ষার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে রাজ্যগুলির উপর বর্তাবে। এর ফলে কিছু রাজ্যে শিক্ষার গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে শিক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পদের অভাবে জর্জরিত।

ফেডারেল প্রোগ্রাম, যেমন ছাত্র ঋণ, শিক্ষা অনুদান এবং গবেষণা তহবিলও প্রভাবিত হতে পারে। এছাড়াও, নীতিগত স্থিতিশীলতা এবং স্বচ্ছতার উপরও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a comment