আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০% শুল্ক চাপিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি চান ভারত কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকার পণ্যের জন্য বাজার খুলে দিক, যেখানে ভারত এতে রাজি হয়নি।
Trump Tariff: আমেরিকা ও ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, যতক্ষণ না আমেরিকার স্বার্থ সুরক্ষিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি সম্ভব নয়। আগে থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এবং ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
শুল্ক কীভাবে এবং কেন বাড়ানো হল
শুরুতে আমেরিকা ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল, কিন্তু পরে তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এই শুল্ক চাপানোর প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাতে তারা আমেরিকার কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য তাদের বাজারের দরজা খুলে দেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের ধারণা, ভারত তাদের বাজারকে যথেষ্ট পরিমাণে আমেরিকার পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করছে না, যেখানে আমেরিকা ভারতকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দিয়েছে।
ট্রাম্পের কড়া মন্তব্য
রয়টার্সের মতে, যখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ভারতের সঙ্গে এখন আলোচনা হবে কিনা, তখন তিনি সরাসরি বলেন, "যতক্ষণ না আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না।" তাঁর এই বক্তব্য ভারতের প্রতি তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করে।
ভারত ও ব্রাজিলের উপর বিশেষ নজর
ট্রাম্প শুধু ভারত নয়, ব্রাজিলের উপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। এই দুটি দেশকে আমেরিকার জন্য চ্যালেঞ্জিং বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের বক্তব্য হল, এই দেশগুলি আমেরিকার পণ্যকে তাদের বাজারে যথেষ্ট জায়গা দিচ্ছে না এবং সেই কারণেই শুল্কের সাহায্য নিতে হয়েছে।
কেন আটকে আছে বাণিজ্য চুক্তি
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে, কিন্তু অনেক বিষয়েই सहमति পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় বাধা কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে। আমেরিকা চায় ভারত তাদের দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রটি বিদেশি পণ্যের জন্য খুলে দিক, কিন্তু ভারতের চিন্তা হল এতে দেশের ছোট কৃষক ও দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে দেশের কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। তিনি ৭ই আগস্টে बयान দিয়েছেন যে কৃষকদের ইস্যুতে সরকারের নীতি স্পষ্ট এবং এতে কোনো পরিবর্তন হবে না।
রাশিয়ার থেকে তেল কেনা নিয়েও অসন্তোষ
আমেরিকার অসন্তোষ শুধু বাণিজ্য চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ট্রাম্প প্রশাসন ভারত কর্তৃক রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমেরিকার বক্তব্য হল রাশিয়া তাদের সম্পদ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে এবং এমন পরিস্থিতিতে যে দেশগুলি তাদের সঙ্গে ব্যবসা করছে, তারা পরোক্ষভাবে যুদ্ধকে সমর্থন করছে। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনাকে তাদের জ্বালানি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং কোনো দেশের চাপে এটি পরিবর্তন করতে অস্বীকার করেছে। ভারতের অবস্থান হল তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়।
আমেরিকার স্বার্থ আগে
ট্রাম্প বার বার এটা স্পষ্ট করেছেন যে আমেরিকার নীতি "আমেরিকা ফার্স্ট"-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। তাঁর ধারণা, যদি কোনো দেশ আমেরিকার পণ্যকে সমান সুযোগ না দেয়, তাহলে আমেরিকাও তাদের বাজার সেই দেশের জন্য খুলবে না। এই কারণেই তিনি শুল্কের সাহায্য নিয়েছেন এবং ভারতের উপর চাপ বাড়িয়েছেন।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত এই পুরো বিষয়ে সংযত অবস্থান নিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে যে ভারত বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষপাতী এবং উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে, ভারত এখনও তাদের কৃষি নীতি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা ইস্যুতে অনড় রয়েছে।