টু-টিয়ার টেস্ট সিস্টেম (Two-tier Test System) সত্যিই ক্রিকেট বিশ্বে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি নিয়ে ফ্যান ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠছে যে এই সিস্টেমটি আসলে কী এবং কেন এটি আনার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে।
Two-Tier Test System: টেস্ট ক্রিকেটের ফরম্যাটে বড় পরিবর্তন হতে চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) টেস্ট ক্রিকেটের জন্য টু-টিয়ার সিস্টেম (Two-Tier Test System) আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রস্তাব নিয়ে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় (ICC Annual Meeting 2025) আলোচনা করা হচ্ছে।
ক্রিকেটের ঐতিহ্যপূর্ণ সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (MCC) এই সিস্টেমের প্রস্তাব রেখেছে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে এই নতুন ব্যবস্থা ২০২৭ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) সার্কেল থেকে লাগু হতে পারে। আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহের সামনে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। এমসিসি-র উপদেষ্টা বোর্ডে থাকা সৌরভ গাঙ্গুলি, গ্রেম স্মিথ, হিথার নাইট ও কুমার সাঙ্গাকারার মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড় এই সিস্টেমের পক্ষে নিজেদের মতামত রাখছেন। এই পরিবর্তনকে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
টু-টিয়ার টেস্ট সিস্টেম কী?
ক্রিকেট ফ্যানদের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল টু-টিয়ার টেস্ট সিস্টেম আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আইসিসি এখন টেস্ট খেলিয়ে দলগুলোকে দুটি বিভাগে (Tier-1 ও Tier-2) ভাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
- Tier-1-এ থাকবে শীর্ষ র্যাঙ্কিং-এর শক্তিশালী দলগুলো।
- Tier-2-এ সেই দলগুলোকে রাখা হবে যারা নতুন অথবা যাদের পারফরম্যান্স দুর্বল।
এর ফলে শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে আরও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ দেখা যাবে এবং দুর্বল দলগুলো নিজেদের মধ্যে খেলে Tier-1-এ উন্নীত হওয়ার জন্য লড়াই করবে। এর উদ্দেশ্য শুধু টেস্ট ক্রিকেটকে প্রতিযোগিতামূলক করাই নয়, বরং এর বাণিজ্যিক মূল্য এবং দর্শকদের আগ্রহ বাড়ানোও।
কেন আনা হচ্ছে টু-টিয়ার সিস্টেম?
বিগত কয়েক বছরে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি দর্শকদের আগ্রহে ভাটা দেখা গেছে। শুধুমাত্র ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো বড় দলগুলোর ম্যাচেই ফ্যানদের আগ্রহ দেখা যায়। দুর্বল দলগুলোর মধ্যে খেলা হওয়া টেস্ট ম্যাচগুলো প্রায়শই নীরস এবং বাণিজ্যিকভাবে দুর্বল প্রমাণিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আইসিসি ও এমসিসি মনে করে যে বড় দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি হলে টেস্ট ক্রিকেট আবারও আলোচনায় আসবে।
অন্যদিকে, ছোট দলগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করে, তাহলে তাদের Tier-1-এ প্রমোট করা হবে। আবার, দুর্বল পারফর্ম করা Tier-1-এর দলগুলো ডিমোট হয়ে Tier-2-তে চলে যাবে। এর ফলে উভয় স্তরেই প্রতিযোগিতা বজায় থাকবে।
২০২৭ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে লাগু হতে পারে এই সিস্টেম
সূত্রের খবর অনুযায়ী, যদি এই প্রস্তাবে সম্মতি পাওয়া যায়, তাহলে এটি পরবর্তী ডব্লিউটিসি চক্র (২০২৭) থেকে লাগু করা হবে। এর ফরম্যাট এমন হতে পারে যে Tier-1 ও Tier-2 উভয়ের জন্য আলাদা আলাদা পয়েন্ট টেবিল তৈরি করা হবে। উভয় স্তরের শীর্ষ দুটি দল ফাইনালে পৌঁছবে অথবা প্রমোশন-ডিমোশনের পথ পরিষ্কার করবে।
সম্ভাব্য দল: কোন Tier-এ কারা?
Tier-1
- অস্ট্রেলিয়া
- ভারত
- ইংল্যান্ড
- দক্ষিণ আফ্রিকা
- নিউজিল্যান্ড
- পাকিস্তান
- ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- শ্রীলঙ্কা
- বাংলাদেশ
Tier-2
- জিম্বাবুয়ে
- আফগানিস্তান
- আয়ারল্যান্ড
- স্কটল্যান্ড
- নেদারল্যান্ডস
- নেপাল
প্রমোশন ও ডিমোশনের ব্যবস্থা
- আইসিসি টু-টিয়ার সিস্টেমে প্রমোশন ও ডিমোশনের ব্যবস্থাও রাখবে।
- Tier-2-এর শীর্ষ 2টি দল পরবর্তী সেশনের জন্য Tier-1-এ প্রমোট করা হবে।
- অন্যদিকে, Tier-1-এর সবচেয়ে দুর্বল 2টি দলকে নীচে নামিয়ে দেওয়া হবে।
- এর ফলে শুধু প্রতিটি দলকেই ক্রমাগত ভালো পারফর্ম করার প্রেরণা যোগাবে না, বরং দুর্বল দলগুলোও ভবিষ্যতে বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলার জন্য লড়াই করবে।
এর সুবিধা কী হবে?
- টেস্ট ক্রিকেটে উত্তেজনা বাড়বে।
- বাণিজ্যিক মূল্য বাড়বে।
- ছোট দলগুলো উৎসাহিত হবে।
- বড় ম্যাচের সংখ্যা বাড়বে, দর্শকদের আগ্রহ বজায় থাকবে।
- নিয়মিত ভালো পারফর্ম করা দলগুলোই শীর্ষে থাকার সুযোগ পাবে।