জাতিসংঘে পাকিস্তান ও চীনকে বড় ধাক্কা: BLA-কে সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রস্তাব আটকে দিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স

জাতিসংঘে পাকিস্তান ও চীনকে বড় ধাক্কা: BLA-কে সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রস্তাব আটকে দিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স

জাতিসংঘে (UN) পাকিস্তান ও চীন বড় ধাক্কা খেয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স BLA এবং এর আত্মঘাতী শাখা মাজিদ ব্রিগেডকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করার প্রস্তাব 'প্রমাণের অভাব' দেখিয়ে আটকে দিয়েছে।

ওয়ার্ল্ড আপডেট: জাতিসংঘে (UN) পাকিস্তান ও চীন বড় ধাক্কা খেয়েছে। দুই দেশই বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) এবং এর আত্মঘাতী শাখা মাজিদ ব্রিগেডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পেশ করেছিল। কিন্তু এই প্রস্তাব আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স আটকে দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো জানিয়েছে যে, এই সংগঠনগুলির আল-কায়েদা বা আইএসআইএল-এর সঙ্গে সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এটি পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা দীর্ঘকাল ধরে BLA-কে ভারত-সমর্থিত বলে অভিহিত করে আসছে।

আমেরিকার উদ্দেশ্য কী

আমেরিকা কিছুদিন আগেই BLA এবং মাজিদ ব্রিগেডকে তাদের জাতীয় তালিকায় বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন (Foreign Terrorist Organisations) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সেই সময় এটিকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হয়েছিল, কারণ একই সময়ে আমেরিকা পাহলগাম হামলায় জড়িত 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট'কে লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ঘোষণা করেছিল। কিন্তু জাতিসংঘে এটি আটকে দিয়ে আমেরিকা ইসলামাবাদ এবং বেইজিংকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, কেবল রাজনৈতিক দাবির ভিত্তিতে কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হবে না।

চীনকে তার নিজের ভাষাতেই জবাব

জাতিসংঘে 'প্রযুক্তিগত স্থগিতাদেশ' (Technical Hold) দেওয়া সেই একই কৌশল যা চীন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। চীন বহুবার পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের উপর ভারত ও আমেরিকার প্রচেষ্টাকে এই একই কারণে আটকে দিয়েছে। সাজিদ মীর, শহীদ মাহমুদ এবং তালহা সাইদ-এর মতো লস্কর-ই-তৈয়বার নেতাদের ক্ষেত্রে এখনও এই চীনা স্থগিতাদেশ কার্যকর রয়েছে। একইভাবে আব্দুল রউফ আজগরের মামলাও দীর্ঘকাল ধরে আটকে ছিল। এখন আমেরিকা সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে চীনকে তার নিজের ভাষাতেই জবাব দিয়েছে।

পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিক ধাক্কা

পাকিস্তান আশা করেছিল যে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স BLA-এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব সমর্থন করবে। ইসলামাবাদ দাবি করেছিল যে BLA ভারতের সমর্থন পাচ্ছে এবং এটি পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলি প্রমাণের অভাব উল্লেখ করে প্রস্তাবটি আটকে দিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের দাবি দুর্বল হয়েছে এবং চীনের সাথে তাদের কৌশলও ধাক্কা খেয়েছে।

BLA কারা

বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) হলো বেলুচিস্তানের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। BLA-এর প্রায় ৬০০০ যোদ্ধা রয়েছে যারা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বলে জানা যায়। পাকিস্তান সরকার ২০০৬ সালে এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করেছিল। বেলুচিস্তানের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, তাদের এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ পাকিস্তান ও চীন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে, যেখানে স্থানীয় জনগণ দারিদ্র্য ও পিছিয়ে থাকার শিকার হচ্ছে। এই কারণেই BLA পাকিস্তান এবং চীন উভয়েরই বিরোধিতা করে।

বেলুচিস্তান দখলের গল্প

ব্রিটিশ শাসনের সময় বেলুচিস্তান ছিল বেশ কয়েকটি দেশীয় রাজ্যের একটি সমষ্টি, যার মধ্যে কালাত, খারান, লস বুরা এবং মাকরান অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর তাদের ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগ দেওয়া অথবা স্বাধীন থাকার বিকল্প দেওয়া হয়েছিল। কালাত স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং মুসলিম লীগ এর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণাও করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সামরিক অভিযান চালিয়ে কালাত এবং সমগ্র বেলুচিস্তান দখল করে নেয়। সেই থেকে বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ এবং অসন্তোষ ক্রমাগত চলছে।

মাজিদ ব্রিগেডের ভূমিকা

BLA-এর আত্মঘাতী শাখা 'মাজিদ ব্রিগেড' সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকিস্তানের বড় শহর এবং চীনা নাগরিকদের উপর হামলার জন্য পরিচিত। গোয়াদর এবং করাচির মতো এলাকায় বহুবার চীনা প্রকল্প এবং প্রকৌশলীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করে যে এই হামলাগুলি ভারতের সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে, যদিও এই দাবির সমর্থনে কোনো ठोस প্রমাণ সামনে আসেনি।

Leave a comment