কেন্দ্র সরকার ইউনিফাইড পেনশন স্কিম (ইউপিএস)-এর বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এখন এই স্কিমটি বেছে নেওয়া সরকারি কর্মচারীরাও একই ট্যাক্স ছাড় পাবেন, যা ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)-এর অধীনে দেওয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সেইসব কর্মচারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি, যারা এনপিএস-এর বর্তমান কাঠামোর অধীনে ইউপিএস-এর বিকল্প বেছে নেন।
এনপিএস-এর অধীনে বিকল্প হিসেবে ইউপিএস-এর প্রয়োগ
অর্থ মন্ত্রক তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, ইউপিএস, এনপিএস-এর বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে একটি বিকল্প স্কিম হিসাবে পেশ করা হয়েছিল। ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী কর্মচারীদের এই বিকল্প দেওয়া হয়েছে যে, তাঁরা চাইলে এনপিএস-এর অধীনেই ইউপিএস বেছে নিতে পারেন।
এই স্কিমটি কার্যকর হওয়ার আগে, কেন্দ্রীয় সরকার ২৪ আগস্ট ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্যাবিনেট বৈঠকে ইউপিএস-এর অনুমোদন দেয়। এরপর ২৪ জানুয়ারি ২০২৫-এ অর্থ মন্ত্রক এর বিজ্ঞপ্তি জারি করে এবং ১৯ মার্চ ২০২৫-এ পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ) এর সাথে সম্পর্কিত নিয়মাবলী ঘোষণা করে।
২৩ লক্ষের বেশি কর্মচারী সুবিধা পাবেন
ইউপিএস-এর সুবিধা প্রায় ২৩ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী পেতে পারেন, যারা এই প্রকল্পের আওতায় আসেন। এই সকল কর্মচারী পুরাতন পেনশন স্কিম (ওপিএস)-এর পরিবর্তে চালু হওয়া এনপিএস-এর অধীনে চাকরিতে এসেছেন। এখন তাঁরা এনপিএস-এর পাশাপাশি ইউপিএস বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন এবং এই বিকল্পে সেই একই ট্যাক্স সুবিধাগুলি পাবেন যা এনপিএস-এর জন্য প্রযোজ্য।
ট্যাক্স ছাড়ের সিদ্ধান্ত কেন গুরুত্বপূর্ণ
সরকার কর্তৃক ইউপিএস-এর উপর এনপিএস-এর মতো ট্যাক্স সুবিধাগুলি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্তটি তাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের পরে আর্থিক সুরক্ষা এবং উন্নত পরিকল্পনা করার সুযোগ দেবে। এই স্কিমটি স্বচ্ছ, নমনীয় এবং ট্যাক্স-দক্ষ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারের মতে, এই পদক্ষেপটি সেইসব কর্মচারীদের উৎসাহিত করবে, যারা এনপিএস-এর বর্তমান কাঠামোর অধীনে আরও সুরক্ষিত এবং স্থিতিশীল বিকল্প খুঁজছেন। এছাড়াও এটি কর্মচারীদের মধ্যে এই বিশ্বাসও বাড়াবে যে, তাঁদের অবসর গ্রহণের পরের প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করা যাবে।
ইউপিএস কী এবং এটি এনপিএস থেকে কীভাবে আলাদা
ইউপিএস অর্থাৎ ইউনিফাইড পেনশন স্কিমকে এনপিএস-এর অধীনেই একটি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চালু করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল কর্মচারীদের জন্য একটি সুসংগঠিত, স্থিতিশীল এবং সরল পেনশন ব্যবস্থা উপলব্ধ করানো, যেখানে বিনিয়োগের উপর স্থিতিশীল রিটার্নের প্রত্যাশা করা যেতে পারে।
যেখানে এনপিএস সম্পূর্ণরূপে বাজার-সংযুক্ত একটি প্রকল্প, সেখানে ইউপিএস-এ কিছু পরিমাণে স্থিতিশীল এবং নিশ্চিত রিটার্নের একটি মডেল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে, ইউপিএস সম্পূর্ণরূপে এনপিএস থেকে আলাদা নয়, বরং এটির কাঠামোর মধ্যে থেকেই এটি পরিচালিত হবে।
কবে থেকে কার্যকর হবে এবং কারা বিকল্পটি পাবেন
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী সকল কর্মচারীকে এই বিকল্প দেওয়া হবে যে, তাঁরা এনপিএস বা ইউপিএস-এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারবেন। এছাড়াও, এনপিএস-এর অধীনে কর্মরত কর্মচারীদেরও একবারের জন্য ইউপিএস-এর নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
পুরোনো পেনশন স্কিমের পরে নতুন ব্যবস্থার প্রস্তুতি
জানুয়ারি ২০০৪-এ পুরাতন পেনশন স্কিম (ওপিএস) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর এনপিএস চালু করা হয়, যেখানে কর্মচারীদের তাদের অবসর গ্রহণের জন্য বাজার-ভিত্তিক পেনশন তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এতে অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং এখন সরকার একটি নতুন বিকল্প ইউপিএস পেশ করেছে, যা কর্মচারীদের একটি আরও স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য পেনশন ব্যবস্থা দিতে পারে।
ইউপিএস-এর উদ্দেশ্য এবং সরকারের লক্ষ্য
সরকারের উদ্দেশ্য হল এই নতুন স্কিমের মাধ্যমে কর্মচারীদের অবসরকালীন তহবিলকে সুরক্ষিত এবং টেকসই করা। অর্থ মন্ত্রক স্পষ্ট করেছে যে, ইউপিএস-কে ট্যাক্স কাঠামোর আওতায় আনলে এই প্রকল্পটি স্বচ্ছ ও আকর্ষণীয় হবে, যা আরও বেশি সংখ্যক কর্মচারীকে এটি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে।
সরকারের মতে, একটি অভিন্ন ট্যাক্স ছাড়ের ফলে কর্মচারী এনপিএস এবং ইউপিএস-এর মধ্যে স্বাধীনভাবে সঠিক নির্বাচন করতে পারবে এবং তাদের অবসর গ্রহণের জন্য উন্নত পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে।