রেয়ার আর্থ যুদ্ধে আমেরিকা-চীন সংঘাত, ভারতকে 'গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার' দেখছে ওয়াশিংটন

রেয়ার আর্থ যুদ্ধে আমেরিকা-চীন সংঘাত, ভারতকে 'গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার' দেখছে ওয়াশিংটন

আমেরিকা রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থ নিয়ে চীনের উপর নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এখন ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখছে। চীন কর্তৃক রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর আমেরিকা ১০০% আমদানি শুল্কের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এটি ভারতের জন্য বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার একটি বড় সুযোগ হতে পারে।

রেয়ার আর্থ টানাপোড়েন: আমেরিকা ও চীনের মধ্যে রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থ নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। চীন সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার পর আমেরিকা ১০০% আমদানি শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই সংঘাতের মধ্যে আমেরিকা ভারতের উপর আস্থা রেখেছে এবং তাকে একটি নতুন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন যে এখন এই যুদ্ধ শুধু আমেরিকা বনাম চীন নয়, বরং চীন বনাম সমগ্র বিশ্বের। ভারতের কাছে থাকা রেয়ার আর্থের বিশাল ভান্ডার এবং প্রযুক্তিগত সম্ভাবনার কারণে এটি তার জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে।

আমেরিকার পাল্টা আক্রমণ, ১০০% শুল্কের হুমকি

চীনের এই পদক্ষেপের জবাবে আমেরিকা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে যদি চীন তার নীতিতে নমনীয়তা না দেখায় তবে আমেরিকা তার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে এটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং একটি কৌশলগত লড়াই।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সম্প্রতি বলেছেন যে এখন এটি কেবল আমেরিকা বনাম চীনের যুদ্ধ নয়, বরং এটি চীন বনাম সমগ্র বিশ্বের যুদ্ধ। তিনি বলেছেন যে আমেরিকা একা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে না। এর জন্য ভারত, ইউরোপ এবং এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলির সাথে জোট গঠন করা হবে।

ভারতের উপর মার্কিন প্রত্যাশা

আমেরিকার নজর এখন ভারতের উপর। ভারতের কাছে রেয়ার আর্থ খনিজ পদার্থের উল্লেখযোগ্য ভান্ডার রয়েছে, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, কেরালা এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতে। বর্তমানে এই সম্পদগুলির সীমিত ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু যদি প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ পাওয়া যায় তবে ভারত এই ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট বলেছেন যে ভারতের সাথে আলোচনা চলছে এবং তিনি নিশ্চিত যে ভারত এই বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেছেন যে চীন সমগ্র বিশ্বের প্রযুক্তিগত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, কিন্তু আমেরিকা তার মিত্রদের সাথে মিলে এই নির্ভরতা শেষ করবে।

ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই

ভারত ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক বাণিজ্যিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ২৫ শতাংশ সাধারণ শুল্ক এবং রুশ তেল কেনার উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, যার ফলে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে পৌঁছেছিল। এর ফলে ভারতের রপ্তানি ক্ষেত্র প্রভাবিত হয়েছে।

কিন্তু এখন সেই চাপ একটি সুযোগে রূপান্তরিত হতে পারে। আমেরিকা যদি চীন থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চায়, তবে তার ভারতের মতো একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদারের প্রয়োজন হবে। ভারতের জন্য এটি এমন একটি সুযোগ যে সে কেবল শক্তি ক্ষেত্র নয়, খনিজ এবং প্রযুক্তিগত সরবরাহের ক্ষেত্রেও আমেরিকার প্রধান অংশীদার হতে পারে।

ভারতের কাছে দুর্লভ খনিজগুলির অনুসন্ধান এবং প্রক্রিয়াকরণে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই দিকে বিনিয়োগ বাড়ে, তবে দেশ কেবল তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে পারে না বরং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নতুন অংশীদারিত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া পদক্ষেপ

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে শক্তি, খনিজ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একাধিক দফায় আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে “ক্রিটিক্যাল মিনারেলস পার্টনারশিপ” নিয়েও আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগের অধীনে আমেরিকা ভারতে রেয়ার আর্থের অনুসন্ধান এবং প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারে।

এছাড়া, ভারতও তার অভ্যন্তরীণ নীতিতে খনিজ ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সরকার 'ক্রিটিক্যাল মিনারেলস মিশন'-এর রূপরেখা তৈরি করেছে, যেখানে রেয়ার আর্থের অনুসন্ধান এবং পরিশোধনের ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চীন থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির ইঙ্গিত

আমেরিকার এই অবস্থান এবং ভারতের সম্ভাব্য অংশীদারিত্ব বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের নতুন যুগের ইঙ্গিত দেয়। চীনের একচেটিয়া নীতি এখন তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ বিশ্বের অনেক দেশ মিলে এর বিকল্প খুঁজছে।

ভারত এই মুহূর্তে এমন একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে যেখানে সে তার শক্তি এবং খনিজ নীতিকে কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়ে কেবল তার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে না বরং বৈশ্বিক অংশীদারদের মধ্যে একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসাবেও আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

Leave a comment