আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধিতে ভারতীয় বস্ত্র ও চামড়া শিল্পে সংকট, কাজ হারাতে পারেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক

আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধিতে ভারতীয় বস্ত্র ও চামড়া শিল্পে সংকট, কাজ হারাতে পারেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক

আমেরিকা ভারতীয় পণ্যের উপর মোট ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে বস্ত্র, চামড়া এবং চিংড়ি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুরাট, তিরুপুর এবং নয়ডার মতো জায়গাগুলোতে কারখানা বন্ধ হতে শুরু করেছে। রপ্তানিকারকদের বক্তব্য, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা এখন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ চাকরির উপর সংকট দেখা দিয়েছে।

US Tariffs Impact On Textile Sector: বুধবার সকাল ৯:৩১ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভারত থেকে আসা পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক কার্যকর হয়েছে। রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনার কারণে ভারতের উপর এই শুল্ক আরোপের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বস্ত্র এবং চামড়া শিল্পের উপর। সুরাট, তিরুপুর এবং নয়ডাতে অনেক কারখানা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (FIEO) সতর্ক করে দিয়েছে যে, ক্রমবর্ধমান খরচ এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা বিপন্ন।

ট্রাম্প প্রশাসনের বড় সিদ্ধান্ত

সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্কের খসড়া জারি করেছিল। তারপর থেকেই বাজারে অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি কার্যকর করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য, এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার উপর চাপ বাড়বে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্বদেশী দ্রব্যের উপর জোর

আহমেদাবাদে একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন শুল্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারত যে কোনও বহিরাগত চাপ সহ্য করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, তাঁর কাছে এটা কোনো ব্যাপার নয় যে টাকা ডলারের নাকি পাউন্ডের। আসল গুরুত্ব হল পরিশ্রম ভারতীয়দের হতে হবে এবং মিষ্টিও ভারতীয়দের হতে হবে। তিনি জনগণকে আশ্বাস দেন যে কৃষক, ডেয়ারি ব্যবসায়ী এবং ক্ষুদ্র শিল্পের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বস্ত্র শিল্পের উপর বড় আঘাত

আমেরিকার এই শুল্কের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের বস্ত্র শিল্পের উপর। সুরাট, তিরুপুর, নয়ডা এবং দিল্লি-এনসিআরের মতো বড় হাবগুলোতে অনেক কারখানায় তালা লাগার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্ট এবং টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং-এ খরচ বৃদ্ধি এবং মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন।

সি-ফুড ব্যবসাও প্রভাবিত

শুধু বস্ত্র নয়, চামড়া এবং চিংড়ি মাছের ব্যবসাও এই শুল্কের কারণে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আমেরিকা এই পণ্যগুলোর সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ছিল। এখন ৫০ শতাংশ ট্যাক্স লাগার পর ভারতীয় পণ্য সেখানে দামি হয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর রপ্তানিকারকরা বড় সুবিধা পাচ্ছে।

লক্ষ লক্ষ চাকরির উপর সংকট

এই শুল্কের সরাসরি প্রভাব পড়ছে employment-এর উপর। সুরাট এবং তিরুপুরের অনেক কারখানায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বস্ত্র এবং চামড়া সেক্টরে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ করে। যখন কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তখন সবচেয়ে প্রথমে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, অনেক ইউনিট ইতিমধ্যেই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

মার্কিন বাজারে পিছিয়ে পড়ছে ভারত

ভারতের জন্য মার্কিন বাজার সবসময়ই রপ্তানির একটি বড় কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এখন ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগার পরে ভারতীয় পণ্য সেখানে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের থেকে দামি হয়ে গেছে। এই দুটি দেশকে আমেরিকা শুল্কে ছাড় দিয়েছে। ফলস্বরূপ, ভারতের অংশীদারিত্ব কমছে এবং অর্ডারগুলো এই দেশগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে।

Leave a comment