প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বসন্তী চট্টোপাধ্যায়: বাংলা চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া

প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বসন্তী চট্টোপাধ্যায়: বাংলা চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া

বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ তার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারিয়েছে। বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বসন্তী চট্টোপাধ্যায় ১৩ই আগস্ট রাতে কলকাতার বাসভবনে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগে ভুগছিলেন এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল।

Basanti Chatterjee: বাংলা সিনেমার স্বর্ণালী যুগের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বসন্তী চট্টোপাধ্যায় ১৩ই আগস্ট রাতে কলকাতার তাঁর বাসভবনে মারা যান। ৮৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগে ভুগছিলেন এবং গত কয়েক মাস ধরে তাঁর স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল। তাঁর প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অর্ধ শতাব্দীরও বেশি অভিনয়ের সফর

বসন্তী চট্টোপাধ্যায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এমন একজন শিল্পী হিসাবে অমর হয়ে আছেন, যিনি ৫০ বছরেরও বেশি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ঠগিনী’, ‘মঞ্জরী অপেরা’ এবং ‘আলো’-এর মতো স্মরণীয় কাজ। শুধুমাত্র চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ না থেকে, তিনি টেলিভিশন ধারাবাহিকেও তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি রেখে গেছেন। 

‘ভূতু’, ‘বরণ’, ‘দুর্গা দুর্গেশ্বরী’-এর মতো সিরিয়ালে তাঁর অভিনয় দর্শকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর শেষ টিভি উপস্থিতি ছিল ‘গীতা এলএলবি’-তে, যেখানে শুটিংয়ের সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

থিয়েটার থেকে বড় পর্দা পর্যন্ত যাত্রা

বসন্তী চট্টোপাধ্যায় তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন মঞ্চ (থিয়েটার) থেকে। প্রথম দিকে তিনি মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করতেন। থিয়েটারের প্রশিক্ষণ তাঁর অভিনয়কে গভীরতা এবং প্রকাশের অনন্য ক্ষমতা দিয়েছিল। তাঁর বিশেষত্ব ছিল সংলাপ বলার অসাধারণ ভঙ্গি, চোখের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করার শিল্প এবং সংবেদনশীল চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তোলার দক্ষতা। তিনি ঐতিহ্যবাহী মা, দিদিমা বা সমাজের সংগ্রামরত চরিত্রগুলিকে খুব সহজেই ফুটিয়ে তুলতেন, যা দর্শকদের হৃদয়ে তাঁর জন্য বিশেষ স্থান তৈরি করে।

গত কয়েক বছর ধরে বসন্তী চট্টোপাধ্যায় ক্যান্সারে ভুগছিলেন। দীর্ঘ চিকিৎসার সময় তিনি বেশ কয়েক মাস হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে কাটিয়েছেন। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়, যেখানে পেশাদার নার্সদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। যদিও তাঁর অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে, তবে অভিনয়ের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা কখনও কমেনি। তিনি তাঁর অসুস্থতা ও বয়স উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যা তাঁর পেশাদারিত্বের প্রমাণ।

চলচ্চিত্র জগতে শোকের ঢেউ

বসন্তী চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র ও মঞ্চ জগতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় তাঁর সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক কষ্টে ভুগছিলেন, কিন্তু তাঁর অভিনয় আজও অতুলনীয়। তাঁর চলে যাওয়া শুধু একজন শিল্পীর প্রয়াণ নয়, এটি বাংলা সিনেমার একটি সোনালী যুগের সমাপ্তি। বসন্তী চট্টোপাধ্যায় সংগ্রাম, অসুস্থতা এবং বয়স সত্ত্বেও প্রমাণ করেছেন যে একজন সত্যিকারের শিল্পী পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে গিয়েও তাঁর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

বসন্তী চট্টোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র এবং ধারাবাহিকে অভিনীত চরিত্রগুলি আগামী প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তিনি তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে এই বার্তা দিয়েছেন যে শিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি জীবনের একটি আবেগ, যা শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যায়।

Leave a comment