ভিটামিন বি১২-এর অভাব শরীরে গুরুতর প্রভাব ফেলে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ত্বক, হাত-পায়ে অসাড়তা এবং মেজাজের পরিবর্তন। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা না করালে এটি রক্তাল্পতা এবং ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মাংস, মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্য এর ভালো উৎস।
ভিটামিন বি১২-এর অভাব: ভিটামিন বি১২-এর অভাব হলে শরীর বিভিন্ন সতর্কতামূলক সংকেত দেয় যা চেনা জরুরি। এই ভিটামিন মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ত্বক, হাত-পায়ে অসাড়তা এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সময়মতো মনোযোগ না দিলে রক্তাল্পতা এবং মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার এবং ফোর্টিফাইড খাবার ডায়েটে যোগ করে ভিটামিন বি১২-এর অভাব পূরণ করা যেতে পারে।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা বৃদ্ধি
ভিটামিন বি১২-এর অভাবের প্রথম প্রভাব আমাদের শক্তির উপর পড়ে। একটানা ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা এর প্রধান লক্ষণ। আসলে, এই ভিটামিন লাল রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, যা শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অভাব হলে কোষগুলি পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, যার ফলে পেশী এবং টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীর ক্লান্ত বোধ করে।
ত্বকের বিবর্ণতা
শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে ত্বকেও এর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়। ত্বকের রং ফ্যাকাশে বা বিবর্ণ হতে পারে। আসলে, লাল রক্ত কণিকার উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে রক্তাল্পতার মতো অবস্থা তৈরি হয়। এছাড়া, লাল রক্ত কণিকা ভাঙার ফলে উৎপন্ন বিলিরুবিন নামক উপাদান রক্তে জমা হয়। এই উপাদান ত্বক এবং চোখকে হলুদ করে তোলে।
হাত-পায়ে ঝিঁঝিঁ এবং অসাড়তা
ভিটামিন বি১২ স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এর ফলে হাত-পায়ে ঝিঁঝিঁ, সূঁচ ফোটানোর মতো অনুভূতি বা অসাড়তা দেখা দেয়। অনেক সময় এই সমস্যা এতটাই বেড়ে যায় যে ব্যক্তির ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হয়। হাঁটাচলার সময় হোঁচট খাওয়াও এই অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব
ভিটামিন বি১২ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব সরাসরি মেজাজ এবং চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। প্রায়শই মানুষ স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মনোযোগের অভাব, বিভ্রান্তি এবং মেজাজের পরিবর্তনের মতো সমস্যায় ভোগে। যদি দীর্ঘ সময় ধরে এর দিকে নজর না দেওয়া হয়, তাহলে বয়স্কদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
জিভ এবং মুখে পরিবর্তন
অনেক সময় ভিটামিন বি১২-এর অভাবের প্রভাব জিভ এবং মুখের ভিতরেও দেখা যায়। জিভে জ্বালা বা ব্যথা, স্বাদের পরিবর্তন এবং বারবার মুখে ঘা হওয়া এর লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যা প্রায়শই দেখা যায় যখন অভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসকষ্ট
ভিটামিন বি১২-এর অভাবে লাল রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়। এতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এর কারণে সামান্য পরিশ্রমেও ব্যক্তির হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই অবস্থাটি বিশেষভাবে দেখা যায় যখন শরীরের বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়।
এই খাদ্যদ্রব্যগুলি দ্বারা অভাব পূরণ করা যায়
ভিটামিন বি১২ প্রধানত আমিষ খাবারে পাওয়া যায়। এটি পূরণ করার জন্য ডিম, মাংস, মাছ এবং দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির এবং দই ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নিরামিষাশীদের জন্য বাজারে উপলব্ধ ফোর্টিফাইড খাবার যেমন শস্য এবং সয়া পণ্য ভালো বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
শরীরে প্রভাব দেখা যেতে সময় লাগতে পারে
ভিটামিন বি১২-এর অভাব ধীরে ধীরে শরীরে প্রভাব ফেলে। অনেক সময় মানুষ প্রাথমিকভাবে এটিকে উপেক্ষা করে এবং ক্লান্তি বা দুর্বলতাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে। কিন্তু যখন এই লক্ষণগুলি ক্রমাগত চলতে থাকে এবং এর সাথে ত্বকের রং পরিবর্তন, হাত-পায়ে অসাড়তা বা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি শুরু হয়, তখন এটি একটি স্পষ্ট সংকেত যে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন বি১২ পাচ্ছে না।