বিধানসভায় ধুন্ধুমার মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কাগজ নিক্ষেপ, উত্তাল অধিবেশন

বিধানসভায় ধুন্ধুমার মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কাগজ নিক্ষেপ, উত্তাল অধিবেশন

বিধানসভায় ধুন্ধুমার: মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কাগজ নিক্ষেপ, উত্তাল অধিবেশন

কলকাতা: বৃহস্পতিবারের বিধানসভা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। ভিন্ রাজ্যে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে উঠতেই শাসক-বিরোধী সংঘাত তীব্র হয়ে ওঠে। অভিযোগ, বিজেপি বিধায়করা স্লোগান তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কাগজও ছোড়েন। পরিস্থিতি দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। তৃণমূল বিধায়করা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও আওয়াজ কমেনি। শেষমেশ বক্তব্য মাঝপথে থামাতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী।

বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ: ‘ভোট চোর’ কটাক্ষ :ঘটনার পরই মমতা বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ শানান। বলেন, “বিধানসভায় কাগজ ছোড়া শুধু অসংসদীয় নয়, বরং বেআইনি কাজ। এরা দুর্নীতিবাজ, গদি চোর, ভোট চোর।” মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিকে অপমান করেই বিজেপি রাজনীতি করছে। তাঁর কটাক্ষ, “বাংলা ভাষাকে অসম্মান করে বাংলায় জেতা যায় না। মানুষ সব মনে রাখবে।

স্বাধীনতার ইতিহাসে বাংলার অবদান মনে করালেন মমতা :বক্তৃতায় মমতা বাংলার গৌরবময় ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে। তখন বিজেপি-র পূর্বসূরিরা ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আজ আবার বাংলাকে দাসত্বে ঠেলে দিতে চাইছে তারা।মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু, সুকান্ত— এই নামগুলো উচ্চারণ করে বলেন, “এঁদের বাংলায় বিজেপির মতো দলে কোনও স্থান নেই।

বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তাল পরিবেশ :'অধিবেশনে আরও উত্তেজনা তৈরি হয় যখন তৃণমূলের এক বিধায়ক বিজেপি-কে ‘ছ্যাঁচড়া’ বলে সম্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী তখনই হস্তক্ষেপ করে বলেন, “ছ্যাঁচড়া তরকারি আমরা খাই, সেটাকে অপমান করব না। তবে বিজেপির মতো নির্লজ্জ, অসভ্য দল জীবনে দেখিনি।” তাঁর দাবি, বিজেপি যতই চেষ্টা করুক, বাংলার কণ্ঠরোধ সম্ভব নয়।

ঝুনঝুনির শব্দে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী : মমতার বক্তব্য চলাকালীন বিজেপি-র এক বিধায়ক ঝুনঝুনি বাজাতে শুরু করেন। স্পিকার সতর্ক করলেও পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “সবচেয়ে বড় চোরের সম্রাট বিজেপি ছাড়া আর কেউ নয়। এরা লুটেরার দল, বাংলার ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচার চালানো দল।” এই মন্তব্যে তৃণমূল শিবিরে হাততালি পড়ে, অন্যদিকে বিজেপি শিবিরে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনি ওঠে।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও নিশানা : মমতার আক্রমণ কেবল রাজ্য বিজেপি সীমাবদ্ধ থাকেনি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও তিনি নিশানা করেন। বক্তব্যের মধ্যে তিনি ছন্দে ছন্দে স্লোগান তোলেন—“মোদি চোর, গোদি চোর, অমিত শাহ চোর, বিজেপি চোর।” তাঁর অভিযোগ, “টাকা, অস্ত্র, আর নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে বিজেপি ভোটে জেতে। বাংলার মানুষকে ভয় দেখিয়ে দমন করার চেষ্টা করছে।” এই স্লোগান মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে অধিবেশনে।

বাংলার মানুষকে আশ্বাস :মমতা বলেন, “একদিন বাংলার মানুষ বলবে, একটা বিজেপি-কেও দেখতে চাই না। বাংলার মানুষ চিরকাল স্বাধীনতার পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।” তাঁর কথায়, বিজেপি হচ্ছে দেশের লজ্জা। বাংলার মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বিজেপি। বক্তব্যের শেষে তিনি স্লোগান দেন—ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, বিজেপি সবচেয়ে বড় চোর।

রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন : অধিবেশনে এহেন পরিস্থিতি রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, বিজেপি রাজনীতি করার নামে অসভ্যতা করছে। অন্যদিকে বিজেপির দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করছেন, ফলে তাঁর বক্তৃতা বুমেরাং হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই ধরণের সংঘর্ষ আসন্ন নির্বাচনের আগে উত্তেজনা আরও বাড়াবে।বিধানসভার বৃহস্পতিবারের অধিবেশন কেবল আইন প্রণয়নের জায়গা নয়, বরং রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত হয়। শাসক-বিরোধী তর্কের ঝড়ে বিধানসভা গর্জে ওঠে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্য ও তাঁর স্লোগান রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখন প্রশ্ন, বাংলার মানুষ শেষ পর্যন্ত কার বার্তা গ্রহণ করবে।

Leave a comment