৩৪ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ODI সিরিজ়ে হারিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে উচ্ছ্বাসের ঢেউ তুলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। তিন ম্যাচের সিরিজ়ের শেষ ম্যাচে বাবর আজ়মের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানকে ২০২ রানে রুখে নিজেদের নামে করেছে সিরিজ়। এই জয়ের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেট বোর্ডের জন্যও একটা স্বস্তির খবর এসেছে, কারণ দলের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক প্রস্তুতির বড় জয়২০২৭ সালের বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে জয়
এই জয়ের মাধ্যমে শুধু সিরিজ় নয়, ২০২৭ সালের ODI বিশ্বকাপে মানসিক দিক থেকে চাঙ্গা থাকবে ক্যারিবিয়ানরা। ১৯৯২ সালের নভেম্বরের পর পাকিস্তানকে ODI সিরিজ়ে হারাতে পারছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা দলের জন্য এই জয়ের মানে আরও গভীর। সিরিজ়ের প্রতিটি জয় তাদের আত্মবিশ্বাসকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
প্রথম ম্যাচের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই পাকিস্তানের ৫ উইকেটের জয়
তিন ম্যাচের সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান জয়লাভ করেছিল ৫ উইকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের দেওয়া ২৮০ রানের টার্গেট পাকিস্তান ২৮৪ রানে পূর্ণ করেছিল। ম্যাচটি অত্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি ছিল এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা ও ব্যাটিং পরিকল্পনা তাদের জয় নিশ্চিত করেছিল। এই ম্যাচ দেখিয়ে দিয়েছে, সিরিজ়ের জন্য প্রতিটি ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় ম্যাচে ঘরের মাঠে প্রতিশোধ ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ৫ উইকেটের জয়
দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান ১৭১ রানের সীমিত টার্গেট দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ৫ উইকেটে জয় লাভ করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করেছে। ম্যাচটি হাইস্কোরিং না হলেও, ঘরের মাঠে জয়ের মানে ছিল কেবল জয় নয়, বরং পাকিস্তানের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি। এই ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটিং ও বোলিং উভয় কৌশলকে তুলে ধরেছে।
সিরিজ়ের রোডরোলার: শেষ ম্যাচ সাই হোপের দাপট
শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের উপর কার্যত রোডরোলার চালালেন সাই হোপ। প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯৪ রান করে। সাই হোপ একাই ১২০ রান করেন, যা তার ১৮তম ODI সেঞ্চুরি। ODI ক্রিকেটে তৃতীয় সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ব্যাটার হিসেবে তিনি তালিকায় ব্রায়ান লারা ও ক্রিস গেইলের পাশে জায়গা করে নিলেন। এই পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিনি শুধু সিরিজ় নয়, নিজের ক্যারিয়ারের ইতিহাসও লিখলেন।
পাকিস্তানের ব্যর্থতা ৯২ রানে গুটিয়ে গেল বাবর আজ়মরা
রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান মাত্র ৯২ রানে অলআউট হয়। ২৯.২ ওভার খেলে মাত্র পাঁচজনই রান করতে পেরেছে। বাবর আজ়ম মাত্র ৯ রান করেছেন, সর্বোচ্চ রান করেছেন সলমন আলি আঘা (৩০)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে জেডন সিলস ৬ উইকেট নেন, গুডাকেশ মোতি ২ উইকেট ও রস্টন চেস ১ উইকেট নেন। পাকিস্তানের ব্যর্থতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ডিফেন্সিভ বোলিং পরিকল্পনা ও শক্তিশালী মিডল অর্ডারের পরিচয় দিয়েছে।
রেকর্ড ও কীর্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের নতুন দিগন্ত
এই জয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো ইতিহাসের রেকর্ড। পাকিস্তানকে ৩৪ বছরের বিরতির পর ODI সিরিজ়ে হারানো ও সাই হোপের শীর্ষস্থানীয় পারফরম্যান্স ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ঘরের মাঠে এমন জয় তাদের ভক্তদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এছাড়া, দলের বর্তমান ফর্ম ও পারফরম্যান্স ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে তাদের জন্য মানসিক শক্তি জোগাবে।
সিরিজ়ের সারমর্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রত্যাবর্তন
সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের জয়, দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রতিশোধ এবং শেষ ম্যাচে রোডরোলার পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ়টি ছিল উত্তেজনার পরিপূর্ণ। বিশেষত শেষ ম্যাচে সাই হোপের সেঞ্চুরি ও জেডন সিলসের বোলিং পারফরম্যান্স ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রত্যাবর্তনের নিদর্শন। এই সিরিজ় তাদের ODI ক্রিকেটে পুনরুজ্জীবনের দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে।