মনোনীত ব্যক্তি ও অ্যাকাউন্টধারী উভয়েই মারা গেলে, ব্যাঙ্কে জমানো টাকার কী হবে?

মনোনীত ব্যক্তি ও অ্যাকাউন্টধারী উভয়েই মারা গেলে, ব্যাঙ্কে জমানো টাকার কী হবে?

প্রায়শই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমাদের কাছে একজন মনোনীত ব্যক্তির নাম জানতে চাওয়া হয়, যাতে অ্যাকাউন্টধারীর মৃত্যু হলে ব্যাঙ্ক তাঁর মনোনীত ব্যক্তিকে সহজেই জমা টাকা হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু যদি অ্যাকাউন্টধারী এবং মনোনীত ব্যক্তি উভয়েই মারা যান, তাহলে ব্যাঙ্কে জমা টাকার কী হবে? এই প্রশ্নটি খুব কম লোকই জানেন, যদিও এই পরিস্থিতি অনেক সময় আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কিং নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া কী, তা জানা খুবই জরুরি।

মনোনীত ব্যক্তি মারা গেলে টাকা কে পায়?

যদি অ্যাকাউন্টধারী মারা যান এবং মনোনীত ব্যক্তি জীবিত থাকেন, তাহলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পুরো টাকা সেই মনোনীত ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়। কিন্তু যদি মনোনীত ব্যক্তিও মারা যান বা পরে মারা যান, তাহলে বিষয়টি জটিল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, ব্যাঙ্ক সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের টাকা হস্তান্তর করে যারা অ্যাকাউন্টধারীর আইনি উত্তরাধিকারী।

আইনি উত্তরাধিকারী কারা?

আইনি উত্তরাধিকারী হলেন সেই ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্য যারা উত্তরাধিকার আইনের অধীনে সম্পত্তিতে অংশ পেতে পারেন। এদের মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, বাবা-মা, বা ভাই-বোন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। যদি অ্যাকাউন্টধারী কোনও উইল না করে থাকেন, তাহলে ব্যাঙ্ক আইনি উত্তরাধিকারীদের সনাক্তকরণের পরে তাঁদের টাকা হস্তান্তর করতে পারে।

ব্যাঙ্কে কী কী নথি জমা দিতে হয়?

এই ধরনের ক্ষেত্রে আইনি উত্তরাধিকারীদের কিছু প্রয়োজনীয় নথি ব্যাঙ্কে জমা দিতে হয়। এর মধ্যে প্রধান নথিগুলি হল:

  • অ্যাকাউন্টধারী এবং মনোনীত ব্যক্তি উভয়েরই মৃত্যুর শংসাপত্র
  • পরিচয়পত্র যেমন আধার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি
  • অ্যাকাউন্টধারীর আত্মীয় হওয়ার প্রমাণ (যেমন রেশন কার্ড, পরিবার রেজিস্টারের অনুলিপি)
  • আইনি উত্তরাধিকারী শংসাপত্র (Legal Heir Certificate)
  • যদি একাধিক উত্তরাধিকারী থাকে এবং শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি দাবি করে, তাহলে বাকিদের পক্ষ থেকে একটি দাবিত্যাগপত্র (Letter of Disclaimer)

যদি মামলা বড় হয় এবং সকল উত্তরাধিকারীর মধ্যে সম্মতি না থাকে, তাহলে আদালত থেকে উত্তরাধিকার প্রমাণপত্র (Succession Certificate) চেয়ে আনা যেতে পারে।

যদি উইল করা থাকে তাহলে?

যদি অ্যাকাউন্টধারী তাঁর জীবদ্দশায় কোনও উইল (Will) করে থাকেন, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে লিখে থাকেন যে তাঁর মৃত্যুর পর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা কে পাবেন, তাহলে ব্যাঙ্ক সেই উইলের ভিত্তিতেই টাকা প্রদান করে। তবে উইলের বৈধতার জন্য ব্যাঙ্ককে তার প্রমাণিকতা যাচাই করতে হয় এবং অনেক সময় উইলটিকে আদালত থেকে যাচাই করিয়ে নিতে হয়।

উইল না থাকলে আইন কী বলে?

যদি কোনও উইল করা না থাকে, তাহলে ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন প্রযোজ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬-এর অধীনে প্রথমে স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানেরা সম্পত্তিতে সমান অংশ পেতে পারেন। যদি স্বামী/স্ত্রী জীবিত না থাকেন, তাহলে বাবা-মা এবং ভাই-বোনদের পরবর্তী শ্রেণীতে রাখা হয়।

বেশিরভাগ মানুষ এই নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন

ভারতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ব্যাঙ্কিং নিয়ম এবং উত্তরাধিকারের প্রক্রিয়া জানেন না। মনোনীত ব্যক্তির নাম যুক্ত করা নিয়ে এখনও কিছু সচেতনতা আছে, তবে এটা জানা জরুরি যে মনোনীত ব্যক্তি না থাকলে আইনি প্রক্রিয়া কতটা জরুরি হয়ে পড়ে।

যদি অনেক দিন পর্যন্ত কেউ সেই অ্যাকাউন্টের দাবি না করে এবং ব্যাঙ্কের কাছে কোনও বৈধ উত্তরাধিকারী না পৌঁছায়, তাহলে কয়েক বছর পর সেই টাকা ডিপোজিটরস এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস ফান্ড (DEAF)-এ স্থানান্তর করা হয়। এই তহবিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনে থাকে এবং এতে যাওয়া টাকা দাবি করার প্রক্রিয়া আলাদাভাবে নির্ধারিত হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সর্বদা সাবধানে রাখুন

এই ধরনের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সমস্যা থেকে বাঁচাতে জরুরি যে মৃত্যুর শংসাপত্র, পরিচয়পত্র এবং উইলের মতো জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখা উচিত। এছাড়াও পরিবারের সদস্যদের এই বিষয়ে জানানো উচিত যে এই কাগজপত্র কোথায় রাখা আছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনও ধরনের জটিলতা না হয়।

এই ধরনের মামলায় ব্যাঙ্ক প্রতিটি পদক্ষেপ সাবধানে নেয় যাতে সঠিক ব্যক্তি টাকা পান এবং পরে কোনও আইনি বিবাদ না হয়। তাই ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া এবং উত্তরাধিকার সম্পর্কিত নথি সময়-সময় আপডেট করা খুবই জরুরি।

Leave a comment