মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে বড়সড় হুমকি এই ৩ পানীয়

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে বড়সড় হুমকি এই ৩ পানীয়

শুধু ভুল খাবার নয়, ভুল পানীয়ও আপনার মস্তিষ্কের জন্য বিষ। সাম্প্রতিক এক ভিডিও বার্তায় বিখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট রবার ডব্লিউবি লাভ সতর্ক করেছেন— আমাদের চারপাশে এমন কিছু পানীয় রয়েছে, যা আমরা বিন্দুমাত্র ভাবনা-চিন্তা না করেই খেয়ে থাকি, অথচ এগুলো দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি করে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের ঘাটতি, এমনকি অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় এই পানীয়গুলো।

নিউরোসায়েন্টিস্টের সতর্কবার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল

রবার ডব্লিউবি লাভ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে সরাসরি বলেন— “যে তিনটি পানীয় আমরা নিয়মিত খাই, সেগুলোই মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।” তিনি উল্লেখ করেন, এই অভ্যাস বদলানো না হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ভিডিওটি প্রকাশের পর থেকেই তা লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এবং স্বাস্থ্য সচেতন মহলে আলোড়ন ফেলেছে।

অ্যালকোহল—নীরব ঘাতক

স্বাস্থ্যের জন্য অ্যালকোহল ক্ষতিকর— এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। তবে কতটা পরিমাণে ক্ষতি করে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকে। কিন্তু রবারের মতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে কোনও মাত্রার অ্যালকোহলই নিরাপদ নয়। এটি নিউরনের সংযোগ দুর্বল করে দেয়, স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা কমায় এবং ঘুমের চক্র নষ্ট করে। শুধু তাই নয়, অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হ্রাস পেয়ে শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়ে, যা পরোক্ষভাবে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি এড়াতে হলে মদ্যপান সম্পূর্ণ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ঘুম ও স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন শুধু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে হিপোক্যাম্পাসের গঠন বদলে দেয়। এই অংশটি স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ ও শেখার জন্য অপরিহার্য। ফলে, যাদের অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস বেশি, তাঁদের স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করে আগেভাগেই।

চিনি মেশানো সোডা—বয়সের আগেই বাড়ায় ঝুঁকি

ছোট থেকে বড়, প্রায় সবারই প্রিয় ঠান্ডা সোডা বা সফট ড্রিংকস। কিন্তু রবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন— এগুলোতে কোনও ফাইবার নেই, থাকে শুধু প্রচুর চিনি। অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে ক্রনিক ইনফ্লেমেশন বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। মস্তিষ্কে প্রদাহ মানেই নিউরনের ক্ষয়, আর এই ক্ষয় যত বাড়বে, ততই অ্যালঝাইমার্সের আশঙ্কা ত্বরান্বিত হবে।

ডায়েট সোডাও সমান ক্ষতিকর

অনেকে মনে করেন চিনি ছাড়া ডায়েট সোডা তুলনামূলক নিরাপদ। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কৃত্রিম মিষ্টি উপাদান মস্তিষ্কে বিপরীত প্রভাব ফেলে। এগুলো মেটাবলিজমের প্রক্রিয়া ব্যাহত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। ফলে স্বল্পমেয়াদে হয়তো রক্তে চিনি না বাড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে ব্রেন হেলথের ক্ষতি হয় সমান মাত্রায়।

কলের জল—গোপন রাসায়নিকের হুমকি

তৃতীয় বিপজ্জনক পানীয় হলো কলের জল বা ট্যাপ ওয়াটার। বিশেষ করে বর্ষাকালে এটি খাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকার আশঙ্কা থাকে। রবার জানান, কলের জলে প্রায়ই ফ্লুরাইড নামক এক রাসায়নিক মেশানো থাকে, যা অতিরিক্ত মাত্রায় মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ফ্লুরাইডের প্রভাব

ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয় রোধে সহায়ক হলেও অতিরিক্ত মাত্রায় এটি নিউরোটক্সিন হিসেবে কাজ করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও ক্ষতিকর— শেখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে, মনোযোগে ঘাটতি তৈরি হয়। এ কারণেই চিকিৎসকেরা ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।

সুরক্ষিত জলপানের পরামর্শ

কলের জল সরাসরি না খেয়ে তা ফোটানো বা ভালো মানের ওয়াটার ফিল্টার দিয়ে ছেঁকে নেওয়া উচিত। বর্ষাকালে বিশেষত সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এই সময় জলবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় ও টাইফয়েডের ঝুঁকি বেশি থাকে। সঠিক জলের অভ্যাস মস্তিষ্কের পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তনই একমাত্র সমাধান

রবার ডব্লিউবি লাভের মতে, স্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন পানি, নারকেলের জল, গ্রিন টি বা প্রাকৃতিক ফলের রসকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। একই সঙ্গে অ্যালকোহল, চিনি মেশানো সোডা এবং কলের জল— এই তিনটি পানীয় এড়িয়ে চলাই মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখার চাবিকাঠি। ছোট পরিবর্তন বড় রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে— এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি।

Leave a comment