গুজরাটের ছোটা উদয়পুরে আম আদমি পার্টি তাদের রাজনৈতিক শক্তির জোরালো প্রদর্শন করেছে। দল আয়োজিত ‘গুজরাট জোড়ো জনসভা’-তে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন, যার ফলে অনুষ্ঠানটি একটি বিশাল জনসমাবেশে পরিণত হয়।
আহমেদাবাদ: গুজরাটের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের ছোটা উদয়পুর জেলায় আয়োজিত “গুজরাট জোড়ো জনসভা” রাজনৈতিক সমীকরণকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই সমাবেশে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং কংগ্রেসের অনেক বড় নেতা ও হাজার হাজার কর্মী আম আদমি পার্টি (আপ)-তে যোগ দিয়েছেন।
আম আদমি পার্টির এই জনসভা শুধু ঐতিহাসিক ভিড়ের জন্যই স্মরণীয় হবে না, বরং এই কারণেও যে এটি একটি ইঙ্গিত দিয়েছে — গুজরাটের রাজনীতিতে এখন একটি তৃতীয় শক্তি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ছোটা উদয়পুরে ‘আপ’-এর শক্তি প্রদর্শন
ছোটা উদয়পুরে আয়োজিত জনসভায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে ডেঢ়িয়াপাড়ার বিধায়ক চৈতন্য বাসাবা, জেলা সভাপতি রাধিকা রাঠওয়া, বিধানসভা ইনচার্জ বিনুভাই রাঠওয়া এবং ছাত্র নেতা যুবরাজসিংহ জাডেজা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সময় বিজেপির বর্তমান ব্যবসায়িক সভাপতি রাজেশ রাঠওয়া, বেশ কয়েকজন প্রাক্তন সরপঞ্চ, কংগ্রেসের প্রাক্তন তালুকা পঞ্চায়েত সদস্য এবং ৭,০০০-এর বেশি কর্মী ‘ঝাড়ু’ প্রতীক তুলে আম আদমি পার্টির হাত ধরেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছোটা উদয়পুরের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় শক্তি প্রদর্শন ছিল, যা দলের তৃণমূল স্তরের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিয়েছে।

সৎ রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু হবে
অনুষ্ঠানে বিধায়ক চৈতন্য বাসাবা নতুন সঙ্গীদের ঐতিহ্যবাহী খেস পরিয়ে স্বাগত জানান এবং বলেন, গুজরাটে এখন সৎ রাজনীতির নতুন গল্প লেখা হবে। জনগণ দুর্নীতি, জাতিবাদ এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে বিরক্ত। আম আদমি পার্টিই সেই বিকল্প, যার সন্ধান জনগণ করছিল। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে, আম আদমি পার্টি আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে কোনো দলের সাথে জোট করবে না এবং একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
সভার সময় চারদিকে “গুজরাটেও কেজরিওয়াল”, “আম আদমির সরকার” এবং “পরিবর্তনের সময় এসেছে” এর মতো স্লোগান ধ্বনিত হতে থাকে। এই জনসভা থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আম আদমি পার্টি এখন কেবল শহুরে ভোটারদের দল নয়। গ্রাম, আদিবাসী এলাকা এবং পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত দল সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করেছে।
দলের কৌশল গ্রামীণ সমস্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দুর্নীতির ওপর কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ‘আপ’ কর্মীরা এই বিষয়গুলিতে নিয়মিত জনসংযোগ অভিযান চালাচ্ছেন। এর ফলস্বরূপ, বিজেপি এবং কংগ্রেস থেকে অসন্তুষ্ট বিপুল সংখ্যক কর্মী এখন আম আদমি পার্টির দিকে ঝুঁকছেন।
স্থানীয় নির্বাচনের আগে বড় ইঙ্গিত
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোটা উদয়পুরের এই সমাবেশ স্থানীয় নির্বাচনের আগে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে গুজরাটে আম আদমি পার্টি ধীরে ধীরে নিজেদের ভিত্তি মজবুত করতে সফল হয়েছে, ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলটি ৫টি আসন জিতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল। এখন দলের লক্ষ্য স্থানীয় সংস্থা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন, যেখানে তৃণমূল স্তরের সংযোগ একটি নিষ্পত্তিমূলক ভূমিকা পালন করে।
সভায় উপস্থিত স্থানীয় নেতারা বলেছেন যে আম আদমি পার্টির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এখন কেবল শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আদিবাসী এবং গ্রামীণ ভোটাররাও কেজরিওয়াল সরকারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মডেল নিয়ে উৎসাহিত। গ্রাম থেকে আসা একজন কর্মী বলেছেন, "আমরা দিল্লি ও পাঞ্জাবে দেখেছি যে আম আদমি পার্টি স্কুল ও হাসপাতালের চিত্র বদলে দিয়েছে। এখন আমরা চাই এমন পরিবর্তন গুজরাটেও আসুক।"













