রেটিং সংস্থা ICRA সতর্ক করেছে যে ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলির ক্ষতি FY26-এ বেড়ে ১০৫ বিলিয়ন টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের শক্তি বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস এর প্রধান কারণ। এর ফলে নিকট ভবিষ্যতে বিমান টিকিটের দাম বাড়ার সম্ভাবনা বেড়েছে।
ভারতীয় বিমান সংস্থা: ভারতীয় বিমান শিল্প একটি গুরুতর আর্থিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে। রেটিং সংস্থা ICRA-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, অর্থবছর ২০২৬-এ এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলির ক্ষতি ৯৫ থেকে ১০৫ বিলিয়ন টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এর কারণ হলো বিমান জ্বালানির উচ্চ মূল্য, ডলারে পরিশোধিত হওয়া বিপুল খরচ এবং অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহনে পতন। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ১৩৩টি বিমান 'গ্রাউন্ডেড' আছে, যার ফলে ক্ষতি আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই পরিস্থিতির প্রভাব টিকিটের মূল্য এবং যাত্রীদের পাওয়া পরিষেবাগুলির উপর পড়তে পারে।
ক্রমবর্ধমান ব্যয় থেকে সৃষ্ট সমস্যা
ICRA-এর মতে, এয়ারলাইন সংস্থাগুলির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পরিচালন ব্যয়ের দ্রুত বৃদ্ধি। বিশেষ করে বিমান জ্বালানি অর্থাৎ অ্যাভিয়েশন টারবাইন ফুয়েল (ATF)-এর দামে ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে এয়ারলাইন্সগুলির সমস্যা বেড়েছে। শুধুমাত্র অক্টোবর ২০২৫-এই ATF-এর দামে ৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও অর্থবছর ২০২৫-এ গড় জ্বালানি মূল্য আগের বছরের তুলনায় কম ছিল, কিন্তু অপরিশোধিত তেলের দামে আন্তর্জাতিক অস্থিরতা এবং রুপি-ডলারের মধ্যে বিনিময় হারের ওঠানামা এয়ারলাইন্সগুলির ব্যয়কে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
এয়ারলাইন সংস্থাগুলির মোট ব্যয়ের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ শুধু জ্বালানির উপর খরচ হয়। যখনই জ্বালানি ব্যয়বহুল হয়, এর সরাসরি প্রভাব টিকিটের মূল্যের উপর পড়ে। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের জন্য সস্তা ফ্লাইট পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
ডলারের শক্তি বৃদ্ধিতে চাপ বেড়েছে
ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলির আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডলারের শক্তি বৃদ্ধি। তাদের অনেক বড় খরচ যেমন বিমান লিজ ভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রাংশ ক্রয় ডলারে হয়। যখন ডলার শক্তিশালী হয়, তখন এই খরচগুলিতে হঠাৎ বৃদ্ধি দেখা যায়। অন্যদিকে, তাদের আয় রুপিতে হয়, যা লাভের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই কারণে এয়ারলাইন্সগুলিকে ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা হ্রাস
একদিকে যখন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে যাত্রীর সংখ্যাতেও পতন দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীর সংখ্যা ছিল ১২৮.৫ লাখ, যা সেপ্টেম্বর ২০২৪-এর তুলনায় প্রায় ১.৪ শতাংশ কম। আগস্ট ২০২৫-এর তুলনায়ও এতে ০.৮ শতাংশ পতন রেকর্ড করা হয়েছে।
যদিও এয়ারলাইন্সগুলি গত মাসের তুলনায় তাদের ক্ষমতা কিছুটা বাড়িয়েছিল, কিন্তু বছর-ওয়ারি ভিত্তিতে ক্ষমতায় ৩.৩ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে। চলতি অর্থবছর ২০২৬-এর প্রথম ছয় মাসে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রীর সংখ্যায় কেবল ১.৩ শতাংশের সামান্য বৃদ্ধি হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে যাত্রীদের ভ্রমণের ইচ্ছা কিছুটা কমেছে, সম্ভবত ক্রমবর্ধমান ভাড়া এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে।
আন্তর্জাতিক রুট থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলছে

অভ্যন্তরীণ বাজার দুর্বল দেখালেও, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলিতে ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলি স্বস্তি পাচ্ছে। আগস্ট ২০২৫-এ আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৯.৯ লাখ, যা গত বছরের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ বেশি। এপ্রিল থেকে আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে মোট ১৪৭.৩ লাখ আন্তর্জাতিক যাত্রী ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলির পরিষেবা গ্রহণ করেছেন, যা বছর-ওয়ারি ৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এর মানে হলো, বিদেশ ভ্রমণের চাহিদা এখনও শক্তিশালী রয়েছে।
ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে ফ্লাইট কমছে
আর্থিক সংকট ছাড়াও এয়ারলাইন্সগুলি প্রযুক্তিগত সমস্যাতেও ভুগছে। বিশেষ করে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে অনেক বিমান উড়তে অক্ষম। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত প্রায় ১৩৩টি বিমান গ্রাউন্ডেড ছিল, যা ভারতের মোট ফ্লিটের প্রায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। এর মানে হলো, এতগুলি বিমান উড়তে না পেরে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে, যার ফলে সংস্থাগুলির রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু তাদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং লিজ ভাড়ার খরচ অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও, পাইলটের অভাব এবং ক্রমবর্ধমান লিজের হার এয়ারলাইন্সগুলির সামনে পরিচালন সংকটকে আরও গভীর করেছে।
ICRA বিকাশের অনুমান কমিয়েছে
এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, ICRA ভারতীয় বিমান শিল্পর জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি 'স্থিতিশীল' (Stable) রেখেছে। তবে, সংস্থাটি অর্থবছর ২০২৬-এর জন্য শিল্পের বৃদ্ধির অনুমান কমিয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে ৭ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল, এখন তা কমিয়ে ৪ থেকে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
ICRA মনে করে যে কেবলমাত্র সেই এয়ারলাইন্সগুলি এই চাপ সামলাতে পারছে যাদের শক্তিশালী মূল সংস্থা রয়েছে অথবা যাদের আর্থিক অবস্থা উন্নত। পাশাপাশি, যাদের ফ্লাইটগুলিতে যাত্রীদের লোড ফ্যাক্টর বেশি এবং টিকিটের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, তারা বর্তমানে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।












