আজ, বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বসছেন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। হাওড়া সদর, হাওড়া গ্রামীণ এবং ঝাড়গ্রাম—এই তিন সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্ব থাকবেন বৈঠকের কেন্দ্রে। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বৈঠককে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের অভ্যন্তরে বুথ-স্তরের তৎপরতা বাড়ানো, নেতৃত্বে পরিবর্তন এবং সংগঠনের দুর্বলতা চিহ্নিত করাই আলোচনার মূল লক্ষ্য বলে জানা যাচ্ছে।
ঝাড়গ্রাম ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম আসন বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। জোড়াফুলের প্রার্থী কালীপদ সোরেন প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে ১ লক্ষ ৭৪ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারান। এই জয় শুধু সংখ্যাগত নয়, প্রতীকী দিক থেকেও তৃণমূলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে। ঝাড়গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে গেরুয়া শিবিরের সম্ভাব্য ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত হলেও ২০২৪-এর ফলাফল সেই সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে।
লোকসভা থেকে বিধানসভায় আধিপত্য
তৃণমূল বর্তমানে এই তিন সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত সবকটি লোকসভা আসন নিয়ন্ত্রণ করছে। শুধু তাই নয়, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার সমস্ত কেন্দ্রেই তৃণমূলের প্রভাব ছিল প্রবল। যদিও ২০২৪-এ তাদের ভোট শতাংশ সামান্য হ্রাস পেয়েছে, তবুও গেরুয়া শিবিরের জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ থেকে গেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ফলাফল প্রমাণ করছে যে বিজেপি এখনও নিচুতলায় শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলতে ব্যর্থ।
হাওড়া: গ্রামীণ এলাকায় দুর্ভেদ্য দুর্গ
হাওড়া গ্রামীণ সাংগঠনিক জেলা এখন কার্যত তৃণমূলের দুর্ভেদ্য দুর্গ। ২০২৪ নির্বাচনে জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতেই তৃণমূল এগিয়ে ছিল। গ্রামের প্রান্তিক মানুষ, মহিলা ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই জেলায় জোড়াফুলের প্রধান শক্তি। নির্বাচনের পর দলীয় কর্মীরা দাবি করছেন, এখানে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক এতটাই সুসংহত যে বিজেপি বা অন্য কোনও বিরোধী দল সহজে ফাটল ধরাতে পারবে না।
সদরে বিজেপির খানিক জমি
হাওড়া সদরে কিন্তু চিত্রটা কিছুটা আলাদা। বালি ও হাওড়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র এখনও গেরুয়া শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। ২০২১ এবং ২০২৪—উভয় নির্বাচনে এই এলাকাগুলিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। এর ফলে রাজনৈতিক মহল অনুমান করছে, এই অঞ্চলে নেতৃত্ব পরিবর্তন ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। অভিষেকের বৈঠকে এই বিষয়েও বিশেষ জোর দেওয়া হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষকরা।
ঝাড়গ্রামে শহরাঞ্চলেই আসল লড়াই
ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় সামগ্রিকভাবে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও শহরের একাধিক অঞ্চলে বিজেপি ২০২৪ লোকসভায় লিড নেয়। বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত ভোটারদের টানতে এখনও ব্যর্থ তৃণমূল। ফলে সংগঠনের রদবদল এখানেই সবচেয়ে বেশি হতে পারে। জেলা নেতৃত্ব মনে করছে, শহুরে ভোটারদের কাছে পৌঁছতে দলকে নতুন মুখ এবং নতুন কৌশল আনতে হবে।
রদবদল সীমিত, নজর বুথে
তবে সার্বিকভাবে তিনটি সাংগঠনিক জেলায় বড় রদবদলের সম্ভাবনা নেই। ব্লক স্তরে বড় পরিবর্তন না হলেও বুথ স্তরে নজরদারি এবং ভোটব্যাঙ্ক সুসংহত করাই অভিষেকের প্রধান লক্ষ্য। দলীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বুথে বুথে ভোটার ধরে রাখা এবং বিজেপিকে প্রতিরোধ করার কৌশলই এই বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে।