মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারতের তেল আমদানি: রাশিয়া থেকে হ্রাস, বিল বৃদ্ধির আশঙ্কা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারতের তেল আমদানি: রাশিয়া থেকে হ্রাস, বিল বৃদ্ধির আশঙ্কা

আমেরিকা রাশিয়ার প্রধান তেল সংস্থা রোজনেফট এবং লুকঅয়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে হ্রাস পেতে পারে। ভারতীয় রিফাইনারি সংস্থাগুলি এখন পশ্চিম এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আমেরিকা থেকে তেল ক্রয় বাড়াতে পারে। এর ফলে দেশের আমদানি বিল বৃদ্ধির অনুমান করা হচ্ছে।

অপরিশোধিত তেল: মার্কিন অর্থ বিভাগ রাশিয়ার দুটি বড় তেল সংস্থা রোজনেফট এবং লুকঅয়েলের উপর ২১ নভেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে, যার ফলে তাদের সাথে সমস্ত বিদ্যমান লেনদেন শেষ করতে হবে। ভারত এই বছর রাশিয়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করে আসছে, যার মধ্যে রোজনেফট এবং লুকঅয়েলের অংশ প্রধান। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ভারতীয় রিফাইনারি সংস্থাগুলি পশ্চিম এশিয়া, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং অন্যান্য বাজার থেকে তেল ক্রয় বাড়াতে পারে, যার ফলে আমদানি বিল বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং তার সীমা

২২ অক্টোবর আমেরিকা রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী রোজনেফট এবং লুকঅয়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর অধীনে সমস্ত মার্কিন সংস্থা এবং ব্যক্তিকে এই সংস্থাগুলির সাথে যে কোনও ধরণের ব্যবসা করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। যদি কোনও অ-মার্কিন সংস্থা এই নিষিদ্ধ সংস্থাগুলি বা তাদের সহায়ক সংস্থাগুলির সাথে লেনদেন করে, তবে তাদেরও শাস্তির সম্মুখীন হতে হতে পারে। মার্কিন অর্থ বিভাগ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, রোজনেফট এবং লুকঅয়েলের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিদ্যমান লেনদেন ২১ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করা উচিত।

রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি

বর্তমানে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ রাশিয়া থেকে আসে। এই বছর রাশিয়া ভারতকে প্রতিদিন গড়ে ১৭ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে প্রায় ১২ লাখ ব্যারেল প্রতিদিন সরাসরি রোজনেফট এবং লুকঅয়েল থেকে এসেছে। এই সরবরাহগুলিতে বেসরকারি রিফাইনারি সংস্থাগুলির অংশ বেশি ছিল, বিশেষ করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং নায়রা এনার্জি রাশিয়া থেকে বেশি পরিমাণে তেল কিনেছে। সরকারি রিফাইনারি সংস্থাগুলির অংশ এতে তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

রিলায়েন্স এবং নায়রার অবস্থা

বিশ্লেষকদের মতে, ২১ নভেম্বর পর্যন্ত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের আগমন প্রতিদিন ১৬-১৮ লাখ ব্যারেল এর মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর রোজনেফট এবং লুকঅয়েল থেকে সরাসরি আমদানিতে হ্রাস আসতে পারে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, যারা রোজনেফটের সাথে প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত অপরিশোধিত তেলের ২৫ বছরের চুক্তি রয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করা প্রথম ভারতীয় সংস্থা হতে পারে।

নায়রা এনার্জি এই বিষয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্যান্য উৎস থেকে সরবরাহ কমে গেছে, তাই সংস্থাটি সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রিফাইনারিগুলি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাশিয়ার গ্রেডের তেল কেনা চালিয়ে যেতে পারে, তবে এই কাজটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হবে।

অন্যান্য উৎস থেকে তেল আমদানি বাড়তে পারে

রাশিয়া থেকে সরাসরি আমদানি হ্রাসের ক্ষতিপূরণ করতে ভারতীয় রিফাইনারিগুলি পশ্চিম এশিয়া, ব্রাজিল, ল্যাটিন আমেরিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, কানাডা এবং আমেরিকা থেকে অপরিশোধিত তেল ক্রয় বাড়াতে পারে। এতে ভারতীয় তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে, তবে খরচ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমদানি বিল বৃদ্ধির সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের আমদানি বিল বাড়তে পারে। ইক্রা লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রশান্ত বশিষ্ঠের মতে, রাশিয়ার কিছু প্রধান উৎপাদনকারীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ভারতের তেল ক্রয়ের উপর প্রভাব পড়বে। মোট আমদানির প্রায় ৬০ শতাংশ রাশিয়ার অংশীদারিত্ব। যদিও ভারত অন্যান্য অঞ্চল থেকে তেল কিনতে পারে, তবে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি বিল বাড়তে পারে। অনুমান করা হচ্ছে যে বার্ষিক ভিত্তিতে রাশিয়ার পরিবর্তে অন্যান্য বাজার মূল্যের তেল কেনার ফলে আমদানি বিলে দুই শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে।

বৈশ্বিক তেল বাজারে প্রভাব

রাশিয়ার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বৈশ্বিক তেল বাজারেও পড়তে পারে। তেলের দামে অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং কিছু অঞ্চলে সরবরাহের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক স্তরে জ্বালানির দামে ওঠানামা আসতে পারে। ভারত-এর মতো তেল আমদানিকারক অর্থনীতিগুলির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে।

Leave a comment