চ্যাটজিপিটির বুদ্ধিতে ওষুধ ডাক্তারদের সতর্কবার্তা বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি

চ্যাটজিপিটির বুদ্ধিতে ওষুধ ডাক্তারদের সতর্কবার্তা বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি

সরাসরি ডাক্তারের বদলে AI-এর শরণাপন্ন মানুষ

ইদানীং ছোটখাটো অসুখ বা শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিলেই অনেকে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সরাসরি AI টুল যেমন ChatGPT-এর দ্বারস্থ হচ্ছেন। ব্যবহারকারীরা তাঁদের লক্ষণ AI-কে জানিয়ে ওষুধ কিংবা চিকিৎসার উপায় জানতে চাইছেন। সমস্যা হল, অনেকেই এই পরামর্শকে অন্ধভাবে মেনে চলছেন। যার ফলে ইতিমধ্যেই একাধিক মৃত্যুর নজির সামনে এসেছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—চিকিৎসা পরিষেবায় AI আদৌ কতটা নিরাপদ?

ভয়াবহ প্রবণতা নিয়ে চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মানুষের এই অন্ধ নির্ভরতা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। ডাক্তাররা সতর্ক করেছেন—AI কোনও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নয়, ফলে এর দেওয়া পরামর্শ অর্ধেক জানা বা ভুল তথ্যের উপর নির্ভরশীল হতে পারে। বিশেষত ওষুধের মাত্রা কিংবা পরীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে AI সহজেই ভুল করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সমীক্ষা—চমকে দিল তথ্য

২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া এক সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৯.৯% মানুষ ChatGPT থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এদের বড় অংশই ইংরেজি মাতৃভাষা নন অথবা স্বাস্থ্য সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। তাঁদের মতে, জটিল চিকিৎসা তথ্য AI সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারছে বলে তারা সুবিধা পাচ্ছেন। তবে এই "সুবিধা"ই অনেক সময় মারাত্মক ফাঁদে পরিণত হচ্ছে।

AI চিকিৎসার সুবিধা কোথায়

২০২৩ সালের আরও এক গবেষণা প্রমাণ করেছে, AI আসলেই জটিল চিকিৎসা তথ্যকে সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারে। ডাক্তারদের উপর চাপ কিছুটা কমে, সাধারণ মানুষ প্রাথমিক ধারণা পায়। ফলে কেউ কেউ একে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘সহায়ক’ হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। তবে সমস্যার জায়গা হল, সুবিধা যতই থাকুক না কেন, ভুল তথ্য দিলে তার ক্ষতি বহুগুণ বেশি হতে পারে।

গবেষণায় উঠে আসছে বড়সড় সীমাবদ্ধতা

PLOS ONE জার্নালে প্রকাশিত ২০২৪ সালের এক গবেষণা জানাচ্ছে, ChatGPT-৩.৫ মাত্র ৪৯% ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে সঠিক ফল দিতে পেরেছে। যদিও সাধারণ স্বাস্থ্যতথ্যের ক্ষেত্রে এই সঠিকতার হার ৭৪%। কিন্তু এক্স-রে, এমআরআই, ল্যাব রিপোর্ট—এসব বোঝার ক্ষমতায় AI ভীষণভাবে পিছিয়ে। ফলে মূল চিকিৎসা নির্ভরযোগ্য নয়।

দিল্লির চিকিৎসকের কঠোর মন্তব্য

দিল্লির প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ গীতা প্রকাশের মতে, AI কখনওই রোগীর পূর্ণ ইতিহাস, জীবনযাত্রা বা ব্যথার তীব্রতা বুঝতে পারে না। ফলে রোগীর দেওয়া অসম্পূর্ণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে ভুল চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি হয়। ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রা বা ভিন্ন অসুখের ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাঁর মতে, AI-কে একমাত্র ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করাই নিরাপদ।

বিশ্বজুড়ে বিতর্ক—নিরাপত্তা না ঝুঁকি?

এখন বড় প্রশ্ন, স্বাস্থ্যসেবায় AI কতটা নির্ভরযোগ্য? বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহার নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে AI কেবল সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, তবে একে কখনওই ডাক্তারদের বিকল্প হিসেবে দেখা উচিত নয়। অন্যদিকে, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ নীতি, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা গেলে AI চিকিৎসা ব্যবস্থার বড় সুবিধা এনে দিতে পারে।

নীতিমালা তৈরির উপর জোর

ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (NCBI)-এর ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে—AI স্বাস্থ্য পরিষেবায় কার্যকর হতে হলে আগে শক্ত নীতিমালা তৈরি জরুরি। ডাক্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা স্বীকার এবং রোগীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া সমাধান নেই।

সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান

সবশেষে বিশেষজ্ঞদের একটাই কথা—AI আপনার প্রাথমিক তথ্য জোগাড়ের হাতিয়ার হতে পারে, কিন্তু কোনও অসুখ বা সমস্যা হলে প্রথমে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই নিরাপদ। অন্ধভাবে AI-র পরামর্শ মেনে চলা নিজের হাতে বিপদ ডেকে আনার সমান। তাই প্রযুক্তির প্রতি আস্থা থাকলেও, চিকিৎসায় অতি নির্ভরতা কখনওই কাম্য নয়।

Leave a comment