পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন টিআরএফকে 'বিদেশি জঙ্গি সংগঠন' ঘোষণা করল আমেরিকা। টিআরএফ পহেলগামে ২৬ জন পর্যটকের হত্যার দায় স্বীকার করেছিল।
TRF Terror Group: কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানো পাকিস্তান-সমর্থিত সংগঠন 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' (TRF)-কে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে আমেরিকা। মনে করা হচ্ছে এই সংগঠনটি লস্কর-ই-তৈবারই একটি ছদ্মরূপ। টিআরএফ এই বছর এপ্রিলে পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হওয়া জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছিল, যেখানে ২৬ জন পর্যটককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। মার্কিন সরকারের এই পদক্ষেপকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংগ্রামে একটি কঠোর এবং নির্ণায়ক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
টিআরএফকে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করল আমেরিকা
মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও টিআরএফ অর্থাৎ 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট'কে আনুষ্ঠানিকভাবে Foreign Terrorist Organization হিসেবে ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তটি ২২ এপ্রিল ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হওয়া ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার পরে নেওয়া হয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হয়েছিলেন এবং টিআরএফ এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল।
আমেরিকা টিআরএফ-এর উপর আরও অভিযোগ করেছে যে এই সংগঠনটি পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার (LeT) একটি নতুন রূপ। লস্কর ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রসঙ্ঘ দ্বারা জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষিত এবং এর সদর দফতর পাকিস্তানে অবস্থিত।
লস্কর-ই-তৈবার মুখোশ টিআরএফ
মার্কিন সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে টিআরএফ আসলে লস্কর-ই-তৈবার একটি নতুন এবং ছদ্মবেশী চেহারা। এই সংগঠন কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা চালায়, যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লস্করের নাম বাঁচানো যায়। টিআরএফ-এর প্রধান উদ্দেশ্য হল কাশ্মীরে অশান্তি ছড়ানো এবং ভারতীয় নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা করা।
বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন যে টিআরএফকে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি ভারতকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও একটি বড় পদক্ষেপ।
পহেলগাম হামলা: ২৬ জন পর্যটকের হত্যা
২২ এপ্রিল ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় টিআরএফ-এর জঙ্গিরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল এবং উপত্যকায় উপস্থিত পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এই নৃশংস হামলায় ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানি ঘটে। হামলার পরপরই টিআরএফ এর দায় স্বীকার করে, যা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সংগঠনটির সরাসরি সম্পর্ক লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এই হামলাকে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে হওয়া জঙ্গি হামলার পর ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক জঙ্গি হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার কঠোর মনোভাব
টিআরএফকে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণার পর এখন থেকে এর সদস্যদের উপর আমেরিকাতে অনেক ধরনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এর মধ্যে তাদের আর্থিক লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও, আমেরিকা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে তাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে।
মার্কিন বিদেশ দফতর অনুসারে, টিআরএফ ভারতে এখন পর্যন্ত অনেক জঙ্গি হামলায় জড়িত, বিশেষ করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় এর ভূমিকা রয়েছে।
ভারত পেল বিশ্বব্যাপী সমর্থন
বৈসরন উপত্যকায় হওয়া এই জঙ্গি হামলার পর শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও গভীর ক্ষোভ দেখা যায়। আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাপান এবং অন্যান্য অনেক দেশ এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং ভারতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
হামলার পরপরই মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে শোক প্রকাশ করেন। তিনি এও বলেন যে আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং নয়াদিল্লিকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য প্রদান করবে।
ভারতের কঠোর জবাব: এয়ার স্ট্রাইকে ১০০ জঙ্গি খতম
এই হামলার জবাবে ভারত সরকার ৭ মে সকালে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) জঙ্গিদের ঘাঁটিতে এয়ার স্ট্রাইক করে। এই সার্জিক্যাল অপারেশনে ভারতীয় বায়ুসেনা ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় এবং অনুমান করা হয় যে ১০০ জনের বেশি জঙ্গিকে খতম করা হয়েছে।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানের পরিকল্পনা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ইনপুট এবং সেনাবাহিনীর সুনির্দিষ্ট কৌশলের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে ভারত এই বার্তা দিয়েছে যে তারা তাদের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করবে না।