হুলিগানিজম ব্যান্ডের সাম্প্রতিক এক শোকে ঘিরে ফের চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে অভিনেতা-গায়ক অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর গানে হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। নেট মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে শোয়ের একটি ভিডিও, আর তাতেই ফুঁসছে বিজেপি শিবির।
নেটমাধ্যমে ভাইরাল ‘সনাতন’ প্রসঙ্গ
ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় শোনা যাচ্ছে, অনির্বাণ মঞ্চে বলছেন—“সনাতন এসে গেছে? সনাতনী? সনাতন মানে সনাতন ভারতের কথা বলছি।” এরপর তিনি যোগ করেন, “সনাতনকে ভারতে পৌঁছতে হলে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে। সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা পিছিয়ে যাই।” এই বক্তব্যকেই ধর্ম অবমাননা হিসেবে দেখছেন বিরোধীরা।
বিজেপির তোপ, সাহস নেই ইসলাম টানার
বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি সরাসরি অভিযোগ করেছেন, “রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে রসিকতা করা আপনার স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। কিন্তু সনাতনীকে খিল্লি করার মানে কী? সাহস আছে ইসলাম নিয়ে একইভাবে বলার?” তিনি সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের মন্তব্য চলতে থাকলে আইনি পথে লড়াই হবে।
তিন ঘোষকে টেনে কটাক্ষ
অনির্বাণের গানের আরেকটি অংশ নিয়েও তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সেখানে তিনি তৃণমূলের কুণাল ঘোষ, বিজেপির দিলীপ ঘোষ এবং সিপিএমের শতরূপ ঘোষকে একসঙ্গে টেনে কটাক্ষ করেন। রাজনৈতিক তিন শিবিরের তিন ঘোষকেই এক ছত্রে এনে রসিকতার খোরাক বানিয়েছেন অনির্বাণ। কারও চোখে এটি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা, আবার অনেকে বলছেন নিছক ব্যঙ্গ।
সমালোচক বনাম সমর্থক: দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া
সমালোচকদের বক্তব্য, সত্যিকারের সাহস থাকলে তিনি চাকরির দুর্নীতি বা আরজি কর কাণ্ড নিয়ে গান করতেন। অন্যদিকে, সমর্থকদের দাবি, অনির্বাণ আসলে সামাজিক অবক্ষয়কে ব্যঙ্গের মোড়কে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এই শিল্পকর্মকেই অনেকে “বিপ্লবী” আখ্যা দিচ্ছেন। ফলে বিতর্ক যেমন উস্কে উঠেছে, তেমনই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র মতভেদ।
নীরব অনির্বাণ, বাড়ছে জল্পনা
এখনও পর্যন্ত অনির্বাণ ভট্টাচার্যের তরফে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি। নীরবতা নিয়েও জল্পনা চলছে। কেউ বলছেন, তিনি ইচ্ছে করেই বিতর্ক বাড়াতে চান না, আবার কেউ মনে করছেন, প্রতিক্রিয়া না দিয়ে আসলে তিনি নিজেকে প্রচারের আলোয় রাখতে চাইছেন।
বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল
বিজেপি নেতারা এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও জোরদার করার চেষ্টা করছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। তরুণজ্যোতির মতো নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, অনির্বাণকে আক্রমণ করে গেরুয়া শিবির মূলত নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের কাছে বার্তা দিতে চাইছে।
সাংস্কৃতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
থিয়েটার এবং সংগীত জগতে অনির্বাণের অবস্থান বরাবরই ব্যতিক্রমী। তাঁর অনুগামীরা বলছেন, তিনি সবসময়ই মূলধারার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু করেন। তবে এই ঘটনায় সাংস্কৃতিক মহলেরই একাংশের মত, শিল্পকে ধর্মীয় ব্যঙ্গ থেকে আলাদা রাখা উচিত। শিল্পের নামে কটাক্ষ করলে অবাঞ্ছিত উত্তেজনা তৈরি হয়।
নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনির্বাণকে একাংশের তীব্র সমালোচনা হলেও, অন্যদিকে সমর্থকদের দাবি, গান মানে প্রতিবাদ, আর প্রতিবাদ মানেই শাসক বা সমাজকে প্রশ্ন করা। তাঁদের মতে, অনির্বাণ কেবল প্রশ্ন তুলেছেন, অপমান করেননি। তবে বিরোধীদের বক্তব্য, এটি শুধুমাত্র সাহসের অভাব ঢাকার চেষ্টামাত্র।
ভবিষ্যতের পথে প্রশ্ন
বিতর্ক যতই বাড়ুক, এই মুহূর্তে অনির্বাণের জনপ্রিয়তা কোনওভাবে কমছে না। বরং তাঁর শো, গান ও আলোচনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন প্রশ্ন একটাই—এই বিতর্ক কি কেবল সাময়িক আলোচনার খোরাক, নাকি ভবিষ্যতে অনির্বাণের শিল্পজীবনকে বড়সড় বিপদে ফেলবে?