রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন যে ভারত ও চীনের মতো দেশগুলির সাথে আধিপত্যের ভাষা কাজ করবে না। তিনি বলেন, বিশ্ব এখন একটি বহুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে।
মার্কিন শুল্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি এক প্রেস কনফারেন্সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি কড়া বার্তা দিয়েছেন। পুতিন স্পষ্ট বলেছেন যে ভারত ও চীনের মতো বড় দেশগুলির সাথে "আধিপত্য" এবং চাপের ভাষায় কথা বলা যাবে না। তিনি আন্তর্জাতিক কূটনীতি, অর্থনীতি এবং সুরক্ষা নীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন এবং স্পষ্ট করেছেন যে বিশ্ব এখন একটি বহুকেন্দ্রিক (Multipolar World) যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে সকল দেশের সমান অধিকার রয়েছে।
পুতিনের ট্রাম্পকে স্পষ্ট বার্তা
পুতিন বলেছেন যে ট্রাম্প প্রশাসন ভারত ও চীনের উপর শুল্ক এবং নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা না করুক। তিনি স্পষ্ট বলেছেন – "আপনি ভারত বা চীনের সাথে এইভাবে কথা বলতে পারবেন না।" পুতিনের এই মন্তব্য তখন আসে যখন ট্রাম্প ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
পুতিন বলেছেন যে ভারত ও চীন উভয়ই কেবল বিশাল জনসংখ্যা এবং শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ নয়, তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং ঐতিহাসিক পটভূমিও রয়েছে। এই ধরনের দেশগুলির সাথে কোনও "শাস্তি" বা "ভয়" এর ভাষা ব্যবহার আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে দুর্বল করে।
ভারত ও চীন কেন বিশেষ অংশীদার
পুতিন ভারত ও চীনকে "অংশীদার" হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে মার্কিন শুল্ক এবং নিষেধাজ্ঞার নীতির আসল উদ্দেশ্য হল এই দেশগুলির নেতৃত্বকে দুর্বল করা। পুতিনের মতে – "ভারত এমন একটি দেশ, যার জনসংখ্যা ১.৫ বিলিয়ন। চীন, যার অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী। এই ধরনের দেশগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রয়েছে এবং কোনও নেতাই তাদের জনগণের সামনে দুর্বলতা দেখাতে পারে না।"
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে যদি কোনও বড় দেশের নেতা চাপের মুখে নতিস্বীকার করে, তবে তার রাজনৈতিক কেরিয়ার বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সমতা এবং সম্মান অপরিহার্য।
উপনিবেশবাদের যুগ শেষ হয়ে গেছে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আমেরিকাকে আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে উপনিবেশবাদের যুগ এখন শেষ হয়ে গেছে। আজকের বিশ্বে কোনো দেশই অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। তিনি বলেছেন – "ওয়াশিংটনকে বুঝতে হবে যে এখন অংশীদার দেশগুলির সাথে আলোচনায় ঔপনিবেশিক ভাষা চলবে না। সকল দেশের সমান সম্মান প্রয়োজন।"
বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব এবং সমতার অধিকার
পুতিন প্রেস কনফারেন্সে জোর দিয়ে বলেছেন যে বিশ্ব এখন Multipolar World-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো দেশের আধিপত্য চলবে না, আবার কারও প্রাধান্যও গৃহীত হবে না।
তিনি বলেছেন – "ভারত বা চীনের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তি বিদ্যমান। ক্রয়ক্ষমতার (Purchasing Power) ভিত্তিতে রাশিয়াও শীর্ষ চার অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। এগুলো আজকের বাস্তবতা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে Global Politics বা Global Security-তে কোনো একটি দেশের আধিপত্য থাকবে। সকল দেশের সমান অধিকার পাওয়া উচিত।"
ট্রাম্পের সতর্কতা
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে সতর্ক করেছেন যে যদি তারা রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখে তবে তাদের গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। ট্রাম্প ভারতকে মাধ্যমিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়া ইতিমধ্যেই "শত শত বিলিয়ন ডলার" হারিয়েছে।
ট্রাম্প এমনকি বলেছেন যে "দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের" নিষেধাজ্ঞাগুলিও বিবেচনাধীন রয়েছে। তিনি প্রকাশ করেছেন – "দুই সপ্তাহ আগে আমি বলেছিলাম যে ভারত কিনলে তাদের বড় সমস্যা হবে এবং ঠিক তাই হচ্ছে।"
ভারতের জন্য রাশিয়া কেন জরুরি
ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার একটি কৌশলগত অংশীদার। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় উভয় দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। রাশিয়া ভারতকে সস্তায় তেল বিক্রি করছে, যা ভারতের জ্বালানি সুরক্ষা জোরদার করেছে।
যদি ভারত মার্কিন চাপে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তবে তার অর্থনীতি সরাসরি প্রভাবিত হবে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়বে এবং শিল্পগুলির উপর চাপ বাড়বে। তাই ভারতের জন্য রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা অপরিহার্য।
চীন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ
যেখানে ভারত রাশিয়ার তেল নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে রয়েছে, সেখানে চীনও ওয়াশিংটনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে আছে। আমেরিকা চীনের পণ্যের উপর ভারী শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে চীনও অনেক মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে। এই অর্থনৈতিক যুদ্ধে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তবে পুতিন বলেছেন যে আমেরিকা এই নীতির মাধ্যমে এশিয়ার বড় শক্তিগুলিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।