রামকৃষ্ণ সেতুর সংকট—বুধবার থেকেই ভারী যান নিষিদ্ধ

রামকৃষ্ণ সেতুর সংকট—বুধবার থেকেই ভারী যান নিষিদ্ধ

আরামবাগ: বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রামকৃষ্ণ সেতুতে চালু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। দুর্বল হয়ে পড়া সেতুর ওপর আর কোনও ভারী যান চলাচল করা যাবে না বলে প্রশাসনের নির্দেশ। ছোট যানবাহন চলাচল অনুমতিপ্রাপ্ত হলেও, ভারী ট্রাক, বাস ও পণ্যবাহী গাড়ির প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এর জেরে হুগলি, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের যাত্রী পরিষেবায় বড় ধাক্কা।

পশ্চিম প্রান্তে থেমে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস

সেতুর পশ্চিম দিকে, কালীপুর এলাকায় দক্ষিণবঙ্গের চার-পাঁচ জেলার সমস্ত দূরপাল্লার বাস থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব দিক থেকে, অর্থাৎ কলকাতা ও তারকেশ্বর দিক থেকে আসা বাসগুলিও আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডেই থেমে যাচ্ছে। সেতু পারাপারের কোনও যানবাহন সংযোগ না থাকায় হাজার হাজার যাত্রীকে দেড়-দুই কিলোমিটার হেঁটে সেতু পেরোতে হচ্ছে।

নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

দু’প্রান্তে বাস দাঁড়িয়ে যাওয়ায় নিত্যযাত্রীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, অফিসগামী কর্মীরা সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রবীণ ও অসুস্থ যাত্রীদের এই হেঁটে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রশাসনিক বৈঠকে উপেক্ষিত বাস অ্যাসোসিয়েশন

মঙ্গলবার জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে বাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাব গুরুত্ব পায়নি। অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, তাঁদের প্রস্তাব ছিল বিকল্প রুট চালু করা ও অস্থায়ী ব্রিজ বা ফেরি সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা করা। কিন্তু কোনও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না আসায় ক্ষোভে ফুঁসছে আরামবাগ বাস ও মিনিবাস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন।

অ্যাসোসিয়েশনের পাল্টা হুঁশিয়ারি

প্রশাসনের উপেক্ষার জেরে অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁরাও প্রশাসনের নির্দেশ মানবেন না। বুধবার দুপুরে কালীপুরে বাস মালিকদের জরুরি বৈঠক হয়, যেখানে সবাই একমত হন ১৫ দিনের জন্য ‘কাটা সার্ভিস’ চালানোর বিষয়ে।

১৫ দিনের শর্তসাপেক্ষ সমঝোতা

অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত—আগামী ১৫ দিন যাত্রীদের সুবিধার্থে বাস চালানো হবে কাটা সার্ভিস হিসেবে, অর্থাৎ সেতুর দুই প্রান্তে আলাদা বাস সার্ভিস থাকবে। তবে শর্ত রয়েছে—এই সময়ের মধ্যে বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে এবং নির্দিষ্ট রুটে টোটো চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। না হলে ১৫ দিনের পর থেকে সব রুটে বাস ধর্মঘট শুরু হবে।

টোটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার দাবি

বালি দেওয়ানগঞ্জ-কালীপুর, বেঙ্গাই-কালীপুর এবং কামারপুকুর-কালীপুর—এই তিনটি রুটে টোটো চলাচল বন্ধ রাখার দাবি তুলেছে বাস মালিকরা। তাঁদের যুক্তি, টোটো সার্ভিস চললে বাস যাত্রী কমে যাবে, ফলে আর্থিক ক্ষতি বাড়বে।

সাংসদের হস্তক্ষেপ ও আংশিক স্বস্তি

বুধবার দিল্লি থেকে ফিরেই সাংসদ মিতালি বাগ আরামবাগ এসডিও অফিসে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত হন। বৈঠকে তিনি বাস মালিকদের আশ্বাস দেন—স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কোনও পার্কিং চার্জ দিতে হবে না। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে মালিকদের মধ্যে।

সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসডিও রবিকুমার মিনা, এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী, আইসি রাকেশ সিং সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিক। যদিও পূর্ণাঙ্গ সমাধান সূত্র মেলেনি, সাংসদ জানিয়েছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ দিনরাত নজরদারি চালাচ্ছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা

১৫ দিনের সময়সীমা শেষ হলে কী হবে, তা নিয়েই এখন জল্পনা। প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পারলে বা টোটো চলাচল বন্ধ না হলে, আরামবাগসহ দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশে বাস চলাচল কার্যত থমকে যেতে পারে, যা অর্থনীতি ও জনজীবনে বড় প্রভাব ফেলবে।

Leave a comment