জগদীপ ধনখড় পদত্যাগ করার পর নতুন উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য দৌড় শুরু হয়ে গেছে। চারটি নামের মধ্যে আরিফ মহম্মদ খানের নামে সম্মতি তৈরি হয়েছে। মোদী ফিরলেই ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা।
নতুন উপরাষ্ট্রপতি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মালদ্বীপ ও ব্রিটেন সফর থেকে ফেরার পরেই ভারত পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি পেতে পারে। উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের আকস্মিক পদত্যাগের পর রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, চারটি নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু একটি নামে প্রায় সম্মতি তৈরি হয়েছে। আলোচনা চলছে যে, এইবার বিজেপি দেশবাসীকে এমন একজন উপরাষ্ট্রপতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যিনি রাজনৈতিক ও আদর্শগতভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় ভাবমূর্তির দিক থেকেও ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবেন। এই কারণেই পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হতে পারেন।
ধনখড়ের পদত্যাগ
জগদীপ ধনখড় হঠাৎ করেই নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এর কারণ স্বাস্থ্যজনিত বলা হলেও রাজনৈতিক মহলে এর আসল কারণ অন্য কিছু মনে করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, দুইজন বিচারপতিকে অপসারণ করা নিয়ে সরকার ও উপরাষ্ট্রপতির মধ্যে মতবিরোধ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাপতিত্বে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে নতুন নাম নিয়ে আলোচনা হয় এবং একটি নামে সম্মতি তৈরি হয়।
আলোচনায় থাকা চারটি নাম
প্রথম নাম ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের। কিন্তু তিনি আগেও এই পদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি এখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করতে চান। দ্বিতীয় নাম ছিল বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার। যদিও সংগঠন ও সরকারে তাঁর দ্বৈত ভূমিকা থাকার কারণে এটিও সম্ভব বলে মনে করা হয়নি। তৃতীয় নাম ছিল জেডিইউ-এর রাজ্যসভার উপ-সভাপতি হরিবংশের। কিন্তু তাঁর নামেও দলীয় স্তরে পূর্ণ সম্মতি পাওয়া যায়নি। আরেকটি নাম ছিল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের, কিন্তু এই প্রস্তাব প্রাথমিক আলোচনা থেকে আর এগোয়নি।
যে নামে সম্মতি তৈরি হয়েছে: আরিফ মহম্মদ খান
বিজেপি ও সঙ্ঘ উভয় পক্ষই যে নামে সম্মতি দিয়েছে, তিনি হলেন আরিফ মহম্মদ খান। বর্তমানে তিনি বিহারের রাজ্যপাল এবং এর আগে কেরলের রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি একজন প্রগতিশীল মুসলিম নেতা হিসাবে পরিচিত। আরিফ মহম্মদ খানের ভাবমূর্তি মৌলবাদ-বিরোধী এবং চিন্তাশীল মুসলিম হিসাবে পরিচিত। তিনি বহুবার কট্টরপন্থা ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে आवाज তুলেছেন।
রাজনৈতিক ও আদর্শগতভাবে উপযুক্ত মুখ
আরিফ মহম্মদ খানের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ব্যাপক। তিনি কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি এবং সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর শক্তিশালী দখল আছে বলে মনে করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে যখন কেন্দ্র সরকার ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে, তখন আরিফ খানের উপরাষ্ট্রপতি হওয়া একটি সঠিক রাজনৈতিক ও আদর্শগত ভারসাম্যের ইঙ্গিত দেবে।
শাহবানু মামলা থেকে আজ পর্যন্ত অবিচল আদর্শ
আরিফ মহম্মদ খান ১৯৮৬ সালের শাহবানু মামলায় প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সমর্থন করে সংসদে ভাষণ দিয়েছিলেন এবং তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এই সিদ্ধান্ত তাঁর নীতিবোধের প্রতি অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। তিনি সেই সময় বলেছিলেন যে, কোরান অনুযায়ী তালাকপ্রাপ্ত মহিলার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক।
ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়েও আরিফ মহম্মদ খান সম্প্রতি নিজের মতামত রেখেছেন। তিনি ওয়াকফের কাজকর্মের পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন যে এই ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা জরুরি।