পৃথিবীর অনেক দেশ এখন প্রাকৃতিক বৃষ্টির উপর নির্ভর না করে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টির পথ বেছে নিচ্ছে। চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), আমেরিকা এবং ভারত সহ অনেক দেশে এই কৌশলটি খরা থেকে মুক্তি, কৃষি, জল ব্যবস্থাপনা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত ব্যবহৃত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে এই কৌশলটিকে ভবিষ্যতের প্রয়োজন হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি: পৃথিবীর অনেক দেশ দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া এবং জলের অভাব মোকাবিলায় কৃত্রিম বৃষ্টির দিকে ঝুঁকছে। চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), আমেরিকা, ভারত, থাইল্যান্ড, রাশিয়া এবং সৌদি আরব সহ অনেক দেশে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি গ্রহণ করা হচ্ছে, যেখানে রাসায়নিক উপাদান বা লবণ কণার মাধ্যমে মেঘে আর্দ্রতা বাড়িয়ে বৃষ্টি করানো হয়। এই প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্র রক্ষা, খরা হ্রাস, জল সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আগামী সময়ে জল সংকটের কারণে এই প্রযুক্তির পরিধি আরও বাড়বে।
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে কৃত্রিম বৃষ্টির চাহিদা
অনেক দেশ এখন আবহাওয়ার উপর ভরসা রাখতে চাইছে না। জলের অভাব, অনিয়মিত বর্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সরকারগুলোকে নতুন সমাধান খুঁজতে বাধ্য করেছে। এই কারণেই কৃত্রিম বৃষ্টি বা আর্টিফিশিয়াল রেন নিয়ে আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে। একে ক্লাউড সিডিং বলা হয়। এই প্রযুক্তিতে রাসায়নিক বা লবণ কণার সাহায্যে মেঘে আর্দ্রতা বাড়ানো হয় যাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে।
এই পদ্ধতি খরা থেকে মুক্তি, কৃষি, জল ব্যবস্থাপনা এবং দূষণ কমাতে সাহায্য করে। অনেক দেশে এই প্রযুক্তির উপর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
চীন

চীন এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী। সরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে কভার করা হবে। এখানে এআই-ভিত্তিক আবহাওয়া ব্যবস্থা, বিমান এবং রকেট ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ব্যবহার খরা, কৃষি এবং বড় অনুষ্ঠানের সময় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (UAE) ১৯৮২ সাল থেকে ক্লাউড সিডিং প্রোগ্রাম চলছে। এখানে এআই, ড্রোন এবং হাইগ্রোস্কোপিক সল্ট ফ্লেয়ার্স ব্যবহার করা হয়। উদ্দেশ্য হলো বৃষ্টি বাড়ানো এবং মরুভূমি অঞ্চলে আর্দ্রতা বজায় রাখা।
আমেরিকা (USA)
আমেরিকায় বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো এবং টেক্সাসের মতো অঞ্চলে ক্লাউড সিডিং করা হয়। এর লক্ষ্য হলো স্নোপ্যাক বাড়ানো, জলের সহজলভ্যতা উন্নত করা এবং কৃষিকে সমর্থন দেওয়া।
ভারত
ভারতে ক্লাউড সিডিং প্রধানত খরা পরিস্থিতি এবং কৃষির জন্য ব্যবহার করা হয়। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুতে এর পরীক্ষা করা হয়েছে। সম্প্রতি আইআইটি কানপুর দিল্লি-এনসিআর-এ সিলভার আয়োডাইড ফ্লেয়ার্স ব্যবহার করে দুটি পরীক্ষা চালিয়েছিল, যদিও বৃষ্টি হয়নি।
থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড ১৯৫০-এর দশকে 'রয়্যাল রেইনমেকিং প্রোজেক্ট' শুরু করেছিল। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সফল প্রোগ্রাম হিসেবে বিবেচিত। এর ব্যবহার কৃষি, দূষণ কমানো এবং জল ব্যবস্থাপনার জন্য হয়।
রাশিয়া
রাশিয়া ক্লাউড সিডিং ব্যবহার করে খরা, কৃষি এবং জল ব্যবস্থাপনা ছাড়াও বনের আগুন নিয়ন্ত্রণে। শুষ্ক অঞ্চলে আবহাওয়া স্থিতিশীল রাখতে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রযুক্তি কৃষি, জল ব্যবস্থাপনা এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। খরার সময়ে এটি জলের সহজলভ্যতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
সৌদি আরব
সৌদি আরব ২০২২ সালে এই প্রযুক্তির সূচনা করেছে। লক্ষ্য হলো মরুভূমি অঞ্চলে আর্দ্রতা বাড়ানো, মরুভূমির বিস্তার রোধ করা এবং জলের পরিস্থিতি উন্নত করা।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়াতে ক্লাউড সিডিং বৃষ্টির মৌসুমে বন্যার ঝুঁকি কমানো এবং জলের আরও ভালো ব্যবহারের জন্য করা হয়। সরকার আবহাওয়ার ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় এটি নিয়মিতভাবে গ্রহণ করে।
ক্লাউড সিডিং কোনো জাদুকরী সমাধান নয়, তবে ক্রমবর্ধমান জলের অভাব এবং আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার এই সময়ে এটি দেশ-দেশান্তরে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আগামী বছরগুলোতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার আরও দ্রুত বাড়বে, যদিও এর পরিবেশগত প্রভাব এবং খরচ নিয়ে গবেষণা চলছে।
 
                                                                        
                                                                             
                                                












