চীনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ: বিশ্বের প্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার, শক্তি সাশ্রয়ে এক নতুন দিগন্ত

চীনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ: বিশ্বের প্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার, শক্তি সাশ্রয়ে এক নতুন দিগন্ত

চীন বিশ্বের প্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার তৈরির দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সাংহাইয়ের লিন-গ্যাং স্পেশাল এরিয়ায় নির্মিত এই ডেটা সেন্টারটি ঐতিহ্যবাহী সেন্টারগুলির তুলনায় 10% কম শক্তি ব্যবহার করবে। সমুদ্রের জল থেকে প্রাকৃতিক শীতলীকরণ পাওয়ায়, এটি শক্তি-দক্ষ এবং পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির একটি চমৎকার উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার চায়না: ক্রমবর্ধমান শক্তি খরচ এবং ডেটা শীতলীকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন সমুদ্রের নিচে বিশ্বের প্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার তৈরি শুরু করেছে। সাংহাইয়ের লিন-গ্যাং স্পেশাল এরিয়ায় নির্মিত এই প্রকল্পটি 226 মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে। এর মোট বিদ্যুতের ক্ষমতা 24 মেগাওয়াট হবে এবং এটি প্রধানত বায়ু শক্তি দ্বারা চালিত হবে। এই পদক্ষেপটি চীনের সবুজ শক্তি মিশনকে নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।

ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদার মধ্যে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা

বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং এদের পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বিদ্যুতের ব্যবহার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঐতিহ্যবাহী ডেটা সেন্টারের মোট শক্তির প্রায় অর্ধেক শুধুমাত্র শীতলীকরণে ব্যয় হয়। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে চীন সমুদ্রের গভীরে ডেটা সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে কেবল শক্তির ব্যবহারই কমবে না, পরিবেশের উপরও কম প্রভাব পড়বে।

জলের নিচে কেন ডেটা সেন্টার তৈরি করা হলো?

ফেংশুই অনুযায়ী, শক্তির ভারসাম্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, প্রযুক্তির স্তরেও শক্তি সঞ্চয় ততটাই জরুরি। চীনের এই আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারটি এই চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করে তৈরি। রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রের জল এই ডেটা সেন্টারের জন্য প্রাকৃতিক শীতলীকরণ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। এর ফলে এসি বা অন্য কোনো শীতলীকরণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে না, যার ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেকটাই কমে যাবে।

এছাড়াও, সমুদ্রের নিচে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে, যা সার্ভার এবং অন্যান্য হাই-টেক সরঞ্জামের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ প্রদান করে। এর ফলে যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল বাড়বে এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমবে।

শক্তি ব্যবহারে 10 শতাংশ হ্রাস

চীনের মতে, এই আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারটি ঐতিহ্যবাহী ডেটা সেন্টারগুলির তুলনায় প্রায় 10 শতাংশ কম শক্তি ব্যবহার করবে। এর মোট বিদ্যুতের ক্ষমতা 24 মেগাওয়াট এবং এটি প্রধানত বায়ু শক্তি দ্বারা চালিত হবে। এর ফলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তি-দক্ষ কম্পিউটিং অবকাঠামোগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠবে।

এর পাশাপাশি, চীনের এই পদক্ষেপটি দেশের সবুজ শক্তি মিশন এবং কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

AI এবং ডেটা সেন্টারের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং এর জন্য ডেটা সেন্টারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যত বেশি AI মডেল এবং অ্যাপ্লিকেশন বাড়ছে, তত বেশি বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে।

সম্প্রতি OpenAI মার্কিন সরকারের কাছে শক্তির সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটির বক্তব্য, যদি শক্তি সরবরাহ নিয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে চীন এই ক্ষেত্রে আমেরিকার থেকে এগিয়ে যেতে পারে।

প্রযুক্তির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ

চীনের এই প্রকল্পটি দেখায় যে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি কেবল দ্রুতগতিরই নয়, পরিবেশ-বান্ধবও হওয়া উচিত। আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারের এই মডেলটি আগামী বছরগুলিতে বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

একদিকে যেমন এই প্রকল্পটি শক্তি দক্ষতা বাড়াবে, তেমনই অন্যদিকে এটি সামুদ্রিক প্রযুক্তি এবং ডেটা অবকাঠামোর ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনাও উন্মোচন করবে।

Leave a comment