পারিবারিক অশান্তির জেরে রক্তাক্ত অধ্যায়
আসানসোলের এক নীরব পাড়ায় হঠাৎই চাঞ্চল্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে তুলল ভয়াবহ এক ঘটনা। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি চলছিল। সেই অশান্তি রূপ নিল মর্মান্তিক পরিণতিতে, যখন এক ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুন করে ছোট সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। রাতারাতি শান্ত পরিবার ভেঙে গেল রক্তাক্ত অধ্যায়ে, স্তব্ধ হয়ে গেল মহল্লা।
মৃতদেহ উদ্ধারে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় যখন বহুক্ষণ ধরে মহিলাকে দেখা যায়নি। দরজা ভাঙতেই উদ্ধার হয় রক্তাক্ত দেহ। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করেন আশপাশের মানুষজন। একদিকে লাশ, অন্যদিকে নিখোঁজ স্বামী ও সন্তান—এই জোড়া ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই দৃশ্য দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভাঙনের ইঙ্গিত
তদন্তে উঠে আসছে, কয়েক মাস ধরেই সম্পর্কের টানাপড়েন বেড়েছিল। আর্থিক অনটন থেকে শুরু করে পারিবারিক কলহ—সব মিলিয়েই অশান্তি ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। স্থানীয় সূত্রের দাবি, স্বামী প্রায়ই স্ত্রীর উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাত। সেই অশান্তি যে শেষমেশ রক্তপাতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটাবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি প্রতিবেশীরা।
সন্তানকে নিয়ে পালানোয় আরও দুশ্চিন্তা
মায়ের মৃত্যুর পর ছোট্ট শিশুটি এখন বাবার হাতে। যা নিয়ে আতঙ্ক আরও গভীর। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, খুন করার পর যে মানুষটি সন্তানকে নিয়ে পালাতে পারে, তার কাছে ওই শিশুটি কতটা নিরাপদ? পুলিশও স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন। শিশুটিকে দ্রুত উদ্ধার করার তাগিদ দিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশের তৎপরতা শুরু, জোরদার চিরুনি তল্লাশি
ঘটনার পরই আসানসোল পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে। বিভিন্ন স্টেশন, বাস টার্মিনাস, হোটেল এমনকি আত্মীয়দের বাড়িতেও চলছে খোঁজ। গোয়েন্দারা মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অভিযুক্তের গতিবিধি ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সাফল্য মেলেনি।
প্রতিবেশীদের চোখে ‘চুপচাপ’ মানুষ, কিন্তু…
প্রতিবেশীদের অনেকেই জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে সাধারণত চুপচাপ মানুষ হিসেবেই জানতেন। বাজারে যাওয়া, বাড়ি ফেরা—এসবেই সীমাবদ্ধ ছিল তার চলাফেরা। তবে ঘরের অন্দরে যে নীরব বিস্ফোরণ জমে উঠছিল, তা কারও কানে পৌঁছায়নি। এই বৈপরীত্যই ঘটনাটিকে আরও রহস্যময় করে তুলছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার ঝড়
খবরে প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কেন পারিবারিক অশান্তি মিটমাট করার জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি? কেউ কেউ আবার বলছেন, সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য ও কাউন্সেলিংয়ের অভাবই এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার মূল কারণ।
শিশুর নিরাপত্তা ঘিরে সর্বত্র উদ্বেগ
শুধু পুলিশের কাছে নয়, সাধারণ মানুষও এখন একটাই প্রশ্ন তুলছেন—শিশুটি কোথায়? সে কি নিরাপদে আছে? মায়ের কোল হারানো এই ছোট্ট প্রাণ এখন কতটা মানসিক আঘাত সামলাতে পারছে, তা ভাবতেই শিউরে উঠছেন অনেকে। প্রশাসন জানিয়েছে, শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের এখন প্রথম লক্ষ্য।
আইনজীবীদের মতে কঠোর শাস্তি অনিবার্য
আইনজীবীদের মতে, স্ত্রী হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের জন্য কড়া শাস্তিই অপেক্ষা করছে। এটি কেবল খুন নয়, বরং পরিবার ভেঙে দেওয়ার এক ভয়াবহ অপরাধ। এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর আইনি পদক্ষেপই একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন অনেকে।
আসানসোলবাসীর কাছে আতঙ্কের রাত
পুরো শহরজুড়ে এখন আতঙ্কের আবহ। যে পাড়ায় হাসি-আনন্দের মধ্যেই প্রতিদিনের জীবনযাপন চলত, সেখানে এখন নেমে এসেছে মৃত্যু আর শোকের ছায়া। শিশুটিকে উদ্ধারের অপেক্ষায় এখন চোখ রেখে দিয়েছে গোটা আসানসোল। মানুষ বলছেন, ‘এ যেন বাস্তব নয়, দুঃস্বপ্নের মতো।’