অসমে ২০৪১ সাল নাগাদ হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা সমান হতে পারে: মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

অসমে ২০৪১ সাল নাগাদ হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা সমান হতে পারে: মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই বিবৃতি অসমের জনবিন্যাস নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন: ২০৪১ সাল পর্যন্ত মুসলিম জনসংখ্যা হিন্দুদের সমান হতে পারে, যদি বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বজায় থাকে।

গুয়াহাটি: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্যের জনবিন্যাস নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, যদি বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার চলতে থাকে, তাহলে ২০৪১ সাল নাগাদ অসমে হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় সমান হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী শর্মা স্পষ্ট করেছেন যে, এটি কোনও ব্যক্তিগত মতামত নয়, বরং সরকারি জনগণনা রিপোর্ট এবং পরিসংখ্যানগত অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাঁর এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন রাজ্যে জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে ধর্মীয় ভিত্তিতে, একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কী বলেছেন?

মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেছেন, "এটা আমার ধারণা নয়, বরং ২০১১ সালের জনগণনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলা। সেই সময় অসমে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে থেকে প্রায় ৩ শতাংশ স্থানীয় অসমীয়া মুসলিমদের বাদ দিলে, বাকি ৩১ শতাংশ অভিবাসী মুসলিমদের জনসংখ্যা। যদি আমরা ২০২১, ২০৩১ এবং ২০৪১ সালের অনুমিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখি, তাহলে হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত প্রায় সমান হতে পারে।"

২০১১ সালের জনগণনা: অসমের জনসংখ্যার কাঠামো

  • মোট জনসংখ্যা: ৩.১২ কোটি
  • হিন্দু জনসংখ্যা: প্রায় ১.৯২ কোটি (৬১.৪৭%)
  • মুসলিম জনসংখ্যা: প্রায় ১.০৭ কোটি (৩৪.২২%)
  • বিজেপির মতে, ২০০১ সাল পর্যন্ত অসমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলার সংখ্যা ছিল ৬টি, যা ২০১১ সালে বেড়ে ৯টি হয়েছে এবং এখন ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ১১টিতে পৌঁছেছে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা: ২০০১ বনাম ২০১১

২০০১ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা (মোট ২৩টি জেলার মধ্যে)

  • ধুবড়ি (৭৪.২৯%)
  • বরপেটা (৫৯.৩৭%)
  • গোয়ালপাড়া (৫৩.৭১%)
  • নগাঁও (৫১%)
  • করিমগঞ্জ (৫২.৩%)
  • হাইলাকান্দি (৫৭.৬৩%)

২০১১ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা (মোট ২৭টি জেলার মধ্যে)

  • ধুবড়ি (৭৯.৬৭%)
  • বরপেটা (৭০.৭৪%)
  • গোয়ালপাড়া (৫৭.৫২%)
  • মরিগাঁও (৫২.৫৬%)
  • নগাঁও (৫৫.৩৬%)
  • করিমগঞ্জ (৫৬.৩৬%)
  • হাইলাকান্দি (৬০.৩১%)
  • বোঙাইগাঁও (৫০.২২%)
  • দরং (৬৪.৩৪%)

বিজেপির অবস্থান

বিজেপি নেতারা বারবার অসমে অবৈধ অভিবাসনের প্রভাব এবং এর থেকে সৃষ্ট জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতার কথা উল্লেখ করেছেন। দলের বক্তব্য, রাজ্যের সামাজিক কাঠামোতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, যা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তন করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মার মতে, যদি জনতাত্ত্বিক প্রবণতা একই থাকে, তাহলে অসমে 'ডেমোগ্রাফিক ইনভার্শন' অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে পারে।

কিছু জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞের ধারণা, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির ফলে এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে স্থিতিশীলতা আসছে। একই সময়ে, কিছু সমাজবিজ্ঞানীর যুক্তি হলো, এই ধরনের দাবি সামাজিক মেরুকরণকে উৎসাহিত করতে পারে, তাই তথ্যের ব্যাখ্যা সুষম ও দায়িত্বপূর্ণভাবে করা উচিত।

Leave a comment