বহুতল আবাসনে বুথ তৈরির ভাবনা নজিরবিহীন পদক্ষেপে কমিশন

বহুতল আবাসনে বুথ তৈরির ভাবনা নজিরবিহীন পদক্ষেপে কমিশন

ভোটের আগে নয়া উদ্যোগ

হাতে গোনা কয়েক মাস বাকি। রাজ্যজুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ভোটের তোড়জোড়। নির্বাচন কমিশনের দফতরে দিনরাত চলছে প্রস্তুতি— বুথ তালিকা চূড়ান্তকরণ, ভোটকর্মী নিয়োগ, ভোটার তালিকার হালনাগাদ। এই ব্যস্ততার মাঝেই কমিশনের তরফে এ বার সামনে এল অভিনব এক চিন্তা। শহরের বহুতল আবাসনেই তৈরি হতে পারে বুথ।

কেন বহুতলে বুথের ভাবনা?

প্রতিবার ভোটের সময় সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যে একটি হল— বহু ভোটার বুথে পৌঁছতেই পারেন না। দূরত্ব, যানজট কিংবা বুথের অসুবিধাজনক অবস্থান, সবই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত শহরে যেখানে বিশাল বিশাল বহুতল আবাসনে হাজারো মানুষ থাকেন, সেখানে বুথ পর্যন্ত যাওয়া অনেকের কাছে ঝক্কির ব্যাপার। সেই জায়গাতেই কমিশনের নতুন ভাবনা— যদি বহুতলের ভেতরে বা চত্বরে বুথ হয়, তবে বাসিন্দারা খুব সহজেই ভোট দিতে পারবেন। এতে ভোটদানের হারও স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে পারে।

কমিশনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট

নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা। তার জন্য যত বেশি সংখ্যক ভোটারকে বুথে আনা যায়, সেটাই কমিশনের সাফল্য। তাদের মতে, যদি ভোটদানের হার কমে যায়, তবে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। তাই নতুন বুথ তৈরির ক্ষেত্রে কমিশন এবার ভোটারদের আরাম, যাতায়াতের সুবিধা এবং নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শহুরে বহুতল সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বুথ তৈরি হলে ভোটদানে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত প্রবীণ ভোটার কিংবা যুব প্রজন্ম যারা বুথে যাতায়াতে সমস্যায় পড়েন, তারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। উপরন্তু বহুতল আবাসনে সাধারণত আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। ফলে নিরাপত্তার দিক থেকেও এই পরিকল্পনা কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

চ্যালেঞ্জও কম নয়

তবে বিষয়টা এত সহজ নয়। বহুতলে বুথ বসাতে গেলে আগে চাই আবাসন কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দাদের সম্মতি। সবার মত না থাকলে কাজ এগোবে না। দ্বিতীয়ত, বহুতলের ভেতরে ভোটারদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে হলে নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে। আবার বহিরাগত ভোটারদের প্রবেশে অনেক সময় বাসিন্দাদেরও অস্বস্তি হতে পারে। এই সব দিক কমিশনকে ভেবে নিতে হবে আগেভাগেই।

রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

কমিশনের এই পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে। শাসক ও বিরোধী উভয় শিবিরই বলছে, ভোটদানের হার বাড়ানো জরুরি। তবে বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ— এই ধরনের বুথ তৈরিতে যেন কোনও পক্ষপাতিত্ব বা অস্বচ্ছতা না থাকে। কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শাসক দলের মতে, ভোটারদের সুবিধার্থেই এই নতুন উদ্যোগ।

গণতন্ত্রের নতুন দিশা

সব মিলিয়ে বলতে গেলে, বহুতল আবাসনে বুথ তৈরির চিন্তা নিঃসন্দেহে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ। যদি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তবে অনেক ভোটার বুথ পর্যন্ত আসতে পারবেন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও আরও শক্তিশালী হবে। যদিও চ্যালেঞ্জ কম নয়, কিন্তু ভোটারদের স্বাচ্ছন্দ্যকে যদি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তবে এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন অধ্যায় লিখতে পারে।

 

Leave a comment